রাস পূর্ণিমায় উৎসবে মাতেন বাঙালি, জেনে সেই উৎসবের মাহাত্ম্য ও পুরাণ কাহিনী
- Published by:Debalina Datta
- news18 bangla
Last Updated:
শ্রীকৃষ্ণের লীলা অপরিসীম, ভক্তকূল তাই কুর্নিশ করে তাঁদের ইশ্বরকে
#কলকাতা : রাস উৎসব শুধু বৈষ্ণবদের কাছে নয় বাঙালিদের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ৷ কার্তিক পূর্ণিমার রাত প্রাণের উৎসব রাস পালিত হয় ৷
কথিত আছে ‘রস’ থেকেই রাস। রস অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, হ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম বোঝায়।পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ হলেন মধুর রসের ঘনীভূত আধার। তাঁকে ঘিরেই রাস। রাসের সঙ্গে নারী-পুরুষের হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচের বিষয়টি একেবারে যুক্ত। যাকে বলা হয় ‘হল্লীবক” নৃত্য। কিন্তু বৈষ্ণবদের কাছে রাস কথাটির ভিন্ন অর্থ বহন করে। শ্রীকৃষ্ণ শারদপূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনের যমুনাতটে গোপিনীদের আহ্বান করেন এবং তাদের অহং বর্জিত বিশ্বাসভক্তি ভাবে তুষ্ট হয়ে সঙ্গদান করেন। তাই বৈষ্ণবদের কাছে রাস আসলে ভক্ত এবং ভগবানের মিলন উৎসব। এক অসামান্য আনন্দ উৎসব।
advertisement
বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে রাসের তাৎপর্য্য ও উপলক্ষ্য পাওয়া যায় ৷ স্ক: পদ্মপুরাণে শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়।ব্ৰহ্মবৈবর্তপুরাণে বাসন্তীরাস এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদরাসের বর্ণনা আছে। হরিবংশে ও ভাসের বালচরিতে উল্লেখ আছে যে, কৃষ্ণ গোপিনীদের সঙ্গে হল্লীশনৃত্য করেছিলেন। হল্লীশনৃত্য যদি তালযুক্ত ও বিবিধ গতিভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয় তবে তাঁকে “রাস” নামে অভিহিত করা হয়। বিষ্ণুপুরাণের মতে, কৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে। শ্ৰীধর স্বামী বলেছেন, বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস– “রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তেনৃত্যবিশেষঃ।”
advertisement
advertisement
শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, শ্রীকৃষ্ণ যোগমায়াকে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন ৷ শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের দৃঢ়ভক্তি দেখে তাঁদের মনোকামনা পূরণার্থে রাসলীলা আরম্ভ করেন।
কিন্তু যখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন বলে ভেবে গোপিনীদের মন গর্ব-অহংকারে পূর্ণ হল, তখনই শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন রাধাকে নিয়ে উধাও হলেন, তখন গোপিনীবৃন্দ নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। ভগবানকে ‘একমাত্র আমার’ বলে ভেবে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ ত্রিজগতের পতি, তাই তাঁকে কোনো মায়া-বন্ধনে বেঁধে রাখা যায় না। তখন গোপিনীবৃন্দ একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। গোপিনীদের ইচ্ছাকে তিনি সম্মান জানিয়ে ‘যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ’ হয়ে গোপিনীদের মনের অভিলাষ পূর্ণ করেছিলেন আর গোপীবৃন্দও জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন। এইভাবে জগতে রাসোৎসবের প্রচলন
advertisement
শ্রীকৃষ্ণের অষ্টসখীর নাম গুলো হচ্ছে
1.ললিতা
2.বিশাখা
3.চিত্রা
4.ইন্দুরেখা
5.চম্পকলতা
6.রঙ্গদেবী
7.তুঙ্গবিদ্যা
8.সুদেবী
নবদ্বীপে রাসের চেহারা ঠিক একেবারে আলাদা। পূর্ণিমার ভরা রাতে, বিশুদ্ধ তন্ত্রমতে শতাধিক শক্তিমূর্তির সাড়ম্বর পুজো, সঙ্গে আদ্যন্ত তামসিকতায় ভরা এক দামাল উৎসবের উদযাপন— সংক্ষেপে এটই হল নবদ্বীপের রাসের সংজ্ঞা। পূর্ণিমার রাতে দেড়শোর বেশি বিরাট বিরাট শক্তিমূর্তির পুজোর কারণে নবদ্বীপের রাসকে অনেকে ‘শাক্ত রাস’ বলেও অভিহিত করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-৮২) রাসের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল। তিনি রাসপূর্ণিমার রাতে নবদ্বীপে শক্তিমূর্তি পুজোয় উৎসাহ দেওয়া শুরু করেন। রাজানুগ্রহে অচিরেই সেই উৎসব ছাপিয়ে যায় বৈষ্ণবীয় রাসকে।
advertisement
আরও দেখুন
Location :
First Published :
November 12, 2019 10:38 AM IST
বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
রাস পূর্ণিমায় উৎসবে মাতেন বাঙালি, জেনে সেই উৎসবের মাহাত্ম্য ও পুরাণ কাহিনী