#কলকাতা: দিওয়ালি বলে ডাকা হোক বা দীপাবলী, আদতে এ আলোর উৎসব। প্রদীপের আলোয় ঘর সাজানো এ দিনের প্রথা। কিন্তু ধনতেরস থেকে দিওয়ালির যে উৎসব শুরু হয়, সেখানে কেবল স্রেফ একটা দিনই প্রদীপ দিয়ে ঘর সাজানো হয় না। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিটিও এই দীপদানেরই। যাকে বাঙালিরা ভূত চতুর্দশী আর সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নরক চতুর্দশী, চৌদস বা ছোটি দিওয়ালি নামে অভিহিত করা হয়।
যে হেতু ভারতীয়দেরই প্রায় সব উৎসবের সঙ্গেই ধর্মের একটা যোগ থাকে, তাই ছোটি দিওয়ালিতেও রয়েছে দীপদান সূত্রে দেববন্দনার রীতি। তবে সে তো সন্ধেবেলার ব্যাপার। আসলে কিন্তু সূর্যোদয়ের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় ধর্মীয় আচার পালন। তাই সবার আগে না জানলে নয় যে চলতি বছর কোন তারিখে কোন লগ্নে স্থিত হয়েছে ছোটি দিওয়ালি।
জ্যোতিষমতে, এ বছর ছোটি দিওয়ালি ১৩ নভেম্বর বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিটে শুরু হয়ে ১৪ নভেম্বর দুপুর ২টো ১৭ মিনিটে শেষ হচ্ছে। আর সূর্যোদয়ের পূর্বে যে অভ্যঙ্গ স্নানের রেওয়াজ আছে, তার লগ্ন ১৪ নভেম্বর ভোর ৫টা ২৩ মিনিট থেকে ৬টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।
এই অভ্যঙ্গ স্নানের সূত্রে এ বার নরক চতুর্দশী নামটি ব্যাখ্যা না করলেই নয়। প্রচলিত বিশ্বাস বলে, এ দিন রীতি মেনে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করলে এবং সন্ধ্যাবেলায় মৃত্যুলোকের অধিপতি যমের উদ্দেশে দীপদান করলে মানুষ নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।
অভ্যঙ্গ স্নানের রীতি:১. স্নানের আগে সারা শরীরে তিল তেল মাখতে হয়।২. অপামার্গ পুষ্প মাথার চার দিকে সাত বার ঘোরাতে হয়।৩. ওই পুষ্প মাথায় রেখে, তার উপরে একটু পরিষ্কার মাটি রেখে ভালো করে মাথা ধুয়ে নিতে হয়।
স্নান শেষে পূজার্চনার রীতি:১. স্নানান্তে জলে তিল দিয়ে যমরাজের উদ্দেশে তর্পণ করতে হয় এই মন্ত্রে- যময় ধর্মরাজায় মৃত্বে চান্তকায় চ, বৈবস্বনায় কালায় সর্বভূত রাজায় নমঃ।২. এর পর গৃহদেবতার কাছে এবং বাড়ির বাইরে দীপ জ্বেলে দিতে হয়।
সন্ধ্যাকালে দীপদানের রীতি:১. বাড়ির সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্যকেই একটি বড় প্রদীপ জ্বেলে তা সারা বাড়িতে ঘোরাতে হয়। এর পর নিয়ম অনুযায়ী তাঁকেই সেটা রেখে আসতে হয় বাড়ি থেকে কিছু দূরে- অন্য সদস্যদের এই সময়ে তাঁর সঙ্গে যাওয়া বা প্রদীপের দিকে তাকানোর নিয়ম নেই।
পাশাপাশি অভ্যঙ্গ স্নান এবং যমতর্পণের পর কৃষ্ণেরও পূজা করা হয়ে থাকে। পুরাণমতে, এই দিন কৃষ্ণ প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। এই মতান্তরে দিনটির নাম নরক চতুর্দশী। কৃষ্ণের জয়ের সংবাদ পেয়ে দ্বারকাবাসী আনন্দে প্রদীপ জ্বালিয়ে নগর সাজান, সেই থেকে ছোটি দিওয়ালি পালিত হয়ে আসছে!