#কলকাতা: প্রতি বছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশীতে ধনতেরাস পালন করা হয়। এ বছরেও সে নিয়ম পালিত হবে। ধনতেরাসের জন্য সকলেই আগে ভাগে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন। ধনতেরাস দিওয়ালির একদিন আগে আসে। এই দিন ধন দেবীর আরাধনা করা হয়। এই ক্ষণকে শুভ মানা হয়। এই সময় সোনা, রূপার গয়না, পাত্র, বাসন, কয়েন কেনাকে শুভ মানা হয়। এই সময় সোনা, রূপা বা পিতল কিনলে সারা বছর ঘরে লক্ষ্মী বাস করেন। এমনটাই মানা হয়।
এই বছর ধনতেরাস ১৩ নভেম্বর শুক্রবারে পড়েছে। ওই দিন কালী পুজো। ধনতেরাসের জন্য পুজোর সব থেকে শুভ সময় হল সন্ধ্যে বেলা। এ বছর সন্ধ্যে ৫ টা ২৮ থেকে ৫ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সব থেকে শুভ সময়। এই সময়েই ধনদেবীর পুজো করতে হবে। এই ৩০ মিনিটেই সারতে হবে পুজো।
ধনদেবী ও কুবেরের আরাধনা করা হয়। গৃহে শান্তি ও টাকা পয়সা বৃদ্ধির জন্যই এই পুজো। বলা হয় এই দিন সমুন্দ্র মন্থনের সময় হাতে সোনার কলস নিয়ে ধনদেবীর জন্ম হয়েছিল সমুদ্র থেকে। ধনতেরাসে ধাতু কেনা নিয়ে প্রচলিত আছে একাধিক মজার গল্প কথা। ধনদেবতা কুবেরের আরাধনায় নাকি এই ধনতেরাস উদযাপিত হয়। আবার আরও একটা মজার গল্প হল, রাজা হিমের ছেলেকে বিয়ের চতুর্থ দিন যমের হাত থেকে বাঁচাতে নববধূ একটা অভিনব ফন্দি আঁটেন। প্রচুর ধনরত্ন, সোনা-রূপো, বাসনপত্র আর প্রদীপ দিয়ে ঘরের দরজা ঘিরে রাখেন। প্রদীপের আলোয় এত ধাতুর জৌলুসে চোখ ধাঁধিয়ে যায় যমের। দিকভ্রষ্ট যমের হাত থেকে বেঁচে যায় রাজা হিমের পুত্র। এর থেকেই ধনতেরাসের বিশেষ দিনে শুরু হয় সোনা-রূপো-সহ ধাতু কেনার রীতি৷ এখানেই শেষ হয়নি কাহিনী ৷ ধনতেরাসকে নিয়ে আরও একটি গল্প রয়েছে৷ সেটা হল, একসময় দুর্বাশা মুনির অভিশাপে স্বর্গ হয় লক্ষ্মীহীন। রাক্ষসদের সঙ্গে লড়াই করে সমুদ্রমন্থনের পর ধনতেরাসেই দেবতারা ফিরে পান দেবী লক্ষ্মীকে। হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনার উপাসনাই হচ্ছে ধনতেরাস। ধনতেরাসে শ্রীলক্ষ্মীর আরাধনার মাধ্যমে সূচনা হয় দীপাবলী উৎসবের।
বেশ কিছু বছর পিছনে গেলে দেখা যাবে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের লিস্টে ছিল না কোনও ‘ধনতেরাস উৎসব’। কিন্তু সে চিত্র এখন পাল্টে গিয়েছে। অবাঙালিদের ধনত্রয়োদশী উৎসবকে আপন করে নিয়েছে বাঙালি। তাদের অনুসরণ করেই ধনী থেকে সাধারণ, সব বাঙালিই মেতেছে সঞ্চয়ের উৎসবে। হুজুগ হলেও অবশেষে বেহিসেবী বাঙালি পা বাড়িয়েছে সঞ্চয়ের পথে। দীপাবলীর আগে থেকেই শুরু হয়েছে কেনাকাটা। সমৃদ্ধি কামনায় ক্ষমতা অনুযায়ী সবাই চাইছে ধনতেরাসে মূল্যবান কিছু ধাতু কিনতে। ধনতেরাসে শহর জুড়ে আলোর রোশনাই, গয়না ও বাসনের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। ভারতীয় শাস্ত্র মতে, পাঁচদিনের দীপাবলি উৎসব সূচনা হয় এই ধনতেরাসের হাত ধরে। প্রথা মতো অশুভ শক্তি বিনাশের জন্য ধাতু কিনে প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হবে ধনদেবীর আরাধনা।