Durga Puja 2021: প্রতিমায় ঘরোয়া টান আর আভিজাত্যের আঁচ! স্মৃতির মোড়কে লাটাগুড়ির পাল চৌধুরী বাড়ির পুজো...
- Published by:Sanjukta Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
Durga Puja 2021: কোভিডকালেও আয়োজনে একফোটাও ত্রুটি নেই ঐতিহ্যবাহী পাল চৌধুরী বাড়ির ৭২তম দুর্গাপুজোয়।
#লাটাগুড়ি: ঘন জঙ্গল, রিসর্ট, মূর্তি নদী, লাটাগুড়ি বললে এমনই একটা ছবি ভেসে ওঠে চোখে। দুর্গাপুজো? সেভাবে একেবারেই মনে আসে না আমাদের। কারণ সেই ১৯৫০ সালেও পুজো (Durga Puja 2021) বলতে এই সবুজঘেরা এলাকায় ছিল একটিমাত্র পুজো, লাটাগুড়ি বাজারের সর্বজনীন দুর্গাপুজো। বর্তমানে নেতাজি সংঘের পুজো (Durga Puja 2021) বলে যেটি মূলত পরিচিত। অথচ খোঁজ নিলে জানবেন, ১৯৫০-র আগেও এই বাজারের পুজো ছাড়া তেমন পুজো হত না লাটাগুড়িতে (Lataguri)। তবে একই সাল থেকে এক বাড়িতে শুরু হয়েছিল জনসমাগম, যা বর্তমানে সামলাচ্ছেন নবীন প্রজন্মরা।
তখন ১৯৫০ সাল। সদ্য স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে ভারতবাসী। তখন থেকেই পথচলা পাল চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021)। স্বর্গীয় নিত্যগোপাল পাল চৌধুরী এই পুজো শুরু করেন। সহযোগিতা করতেন তাঁর স্ত্রী স্বর্গীয় সুনিতিবালা পাল চৌধুরী। ১৯৭০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত দীর্ঘদিন পুজোর দায়িত্ব পালন করেন রঞ্জিত পাল চৌধুরী। মণ্ডপের দায়িত্বে থাকতেন পরিবারের সদস্য স্বর্গীয় শ্রী মানিক ঘোষ মহাশয় এবং বাড়ির মেজো ছেলে শ্রী অশোক পাল চৌধুরী।
advertisement
advertisement
বাড়ির বড়ো জামাই স্বর্গীয় ক্ষিতিশ রঞ্জন গুপ্ত অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন বাড়ির পুজোকে। তাঁদের অবর্তমানে বেশ কয়েক বছর ধরে পুজোর (Durga Puja 2021) দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিপ্লব পাল চৌধুরী এবং স্বপন পাল চৌধুরী। ২০২১-এ পুজোর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়েছেন সায়ন্তন পাল চৌধুরী। এই পুজোয় বাড়ির সকল সদস্য এক হয়। পুজোর সময় বাড়ির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০-৬০। এছাড়াও স্থানীয় লোকজন, পাড়া পড়শী, এবং বাইরের বহু মানুষ আসেন। সবার সমাগমে বাড়ি আনন্দময় হয়ে ওঠে।
advertisement
দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) সময় যেন এই বাড়ির রূপ পালটে যায়। এই বছর লাটাগুড়ি পাল চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো ৭২তম বর্ষে পদার্পণ করল। তাই জাঁকজমক দেখার মতোই। "পুজোর দায়িত্ব পেয়ে কেমন লাগছে?" জিজ্ঞেস করতেই একগাল হেসে সায়ন্তনবাবু বলেন, "বেশ মজা লাগছে। জেঠুর বকা খাচ্ছি। কাজও করছি। নিজের পরিবারের পুজোয় কাজ করা থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে?"
advertisement
ঘটপুজোর মাধ্যমে পুজোর সূচনা হয় এই বাড়িতে। এক প্রথা আজও বহাল। প্রসিদ্ধ তন্ত্রসাধক শ্রী শ্রী শচ্চিদানন্দগিরি মহারাজ প্রথম পুরোহিত হিসেবে পুজো করেছিলেন। ১৯৫০-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এই বাড়ির পুজো প্রয়াত নিত্যগোপাল পাল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। ১৯৫৮ সালে নিত্যগোপালের স্ত্রী সুনিতিবালাদেবীর মৃত্যুর পর গুরুদেব বিধান দিয়েছিলেন যে দুর্গাপুজো যেন কোনওমতে বন্ধ না হয়। নিজেদের নামে পুজো বা সংকল্প করতে না পারলে অন্য কারও নামে তা করতে হবে। সেই রীতি আজও বহাল। ৭২ বছর ধরে দুর্গাপুজো ধারাবাহিকভাবে চলছে। ১৯৬২ সালের পূজার পৌরোহিত্যের দায়িত্ব পালন করেন ময়নাগুড়িনিবাসী প্রতাপ গোস্বামী।
advertisement
আগের সময়ের কথা বলতে বলতে চোখ চকচক করে ওঠে বাড়ির প্রবীণ সদস্যের। সেসময় পুজোয় চলত নাটক। লাটাগুড়ির জঙ্গল ও বনবস্তি থেকে অনেকেই নাটক দেখতে আসতেন। যেখানে মন্ডপ তৈরি হত, সেখানেই পুজোর পরে নাটমঞ্চ তৈরী করে বিভিন্ন নাটক হত। সেখানে নামীদামি নাট্যকররা আসতেন এবং তাঁদের নাটক মন্ত্রমুগ্ধ করত সবাইকে। বাড়ির মহিলারা সমস্ত কাজের দেখভাল করেন এবং দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। দীপা পাল চৌধুরী, অনিমা পাল চৌধুরী, অদিতি পাল চৌধুরী, উমা পাল চৌধুরী, ইলা পাল চৌধুরী, পাপিয়া পাল চৌধুরীরা নিয়ম মেনে পুজো করেন। এছাড়া বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের মহিলারাও শিখছেন এবং কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির মেয়ে জামাইরাও সমানভাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন।
advertisement
বাড়ির প্রথম প্রতিমা এক চালাতেই হত। ছোট পুতুলের মতো প্রতিমা। এক চালাতে প্রতিমা হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই ঘাড়ে করে প্রতিমা নিরঞ্জন চালু হয়। যা পাল চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্য হিসাবে বহাল থাকে। বছরের পর বছর প্রতিমা আয়তনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে একচালা বা কাঠামোর যুগ শেষ হয়ে গেলেও টিকে রইল ঘাড়ে করে প্রতিমা নিরঞ্জনের ধারা। এই কারণেই প্রতিমার কাঠামগুলি আলাদা আলাদা হয়ে গেল বহন করার সুবিধার্থে।
advertisement
তখনকার দিনে পূজার কয়েক’টা দিন মণ্ডপের সামনে টিনের ছাউনি দেওয়া হত। মণ্ডপের ভিতর ও বাইরে সাজসজ্জা হত খবরের কাগজ ও রঙীন কাগজ দিয়ে। রাত জেগে মণ্ডপ সাজাতো বাড়ির একমাত্র ডেকোরেটর সানু উড়িয়া। বাড়ির দুই পরিচারক সানু ও নীলকণ্ঠ সব ব্যাপারেই অক্লান্ত পরিশ্রম করতো। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব বিষয়ে ওঁদের উৎসাহ ছিল দেখার মতো।
বর্তমাবে মৌলানিনিবাসী মনোজিৎ চক্রবর্তী পৌরোহিত্যের দায়িত্ব পালন করছেন। কোভিডের কারণে এবার প্রতিমার মূর্তি ছোট হয়েছে। অনেকেই হয়ত আসতেও পারছেন না। তবে কোভিডকালেও আয়োজনে একফোটাও ত্রুটি নেই ঐতিহ্যবাহী পাল চৌধুরী বাড়ির ৭২তম দুর্গাপুজোয়।
ভাস্কর চক্রবর্তী
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
October 09, 2021 11:21 PM IST