Siliguri: রাত হলেই ধোঁয়ায় ঢাকছে শহর শিলিগুড়ি ! শ্বাসকষ্ট চোখে জ্বালা ! ধোঁয়াশায় প্রশাসন
- Published by:Piya Banerjee
- news18 bangla
Last Updated:
Siliguri: নয়া আতঙ্ক শিলিগুড়িতে। কোথা থেকে আসছে এই অজানা ধোঁয়া
#শিলিগুড়ি: দিল্লির প্রতিচ্ছবি এবার উত্তরের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর শিলিগুড়িতে। টানা দু'দিন ধরে অজানা ধোঁয়ায় ঢেকেছে শহর। এদিকে এই রহস্যময় ধোঁয়ার জেরে চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার রাতের শিলিগুড়ি শহরের ধোঁয়ার রহস্যভেদ হল না বুধবার রাত গড়ালেও। বন দপ্তর থেকে দমকল, এমনকি মহকুমা প্রশাসনেরও কাছে নেই উত্তর এই রহস্যময় ধোঁয়ার। আর এই ধোঁয়াকে কেন্দ্র করেই দিল্লিকে মনে করাল শহর শিলিগুড়ি।
করোনার থাবার আগে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছিল রাজধানী দিল্লি এমনটা খবর শুনতে পাওয়া গিয়েছিল। দূষিত বায়ুর জেরে ভোরের আলো ফুটলেও ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে ছিল শহরের চারিদিক। বুধবার রাতেও কার্যত একইরকম ঘটনা ঘটল উত্তরের শিলিগুড়িতে। দিনকয়েক আগে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও শিলিগুড়ির রহস্যময় ধোঁয়ার কারণ এদিন পর্যন্ত অজানাই সবার।
মঙ্গলবার রাত ন’টা থেকেই একটু একটু করে ধোঁয়ায় ঢাকতে শুরু করে শিলিগুড়ি শহর। রাত বাড়তেই ধোঁয়ার জেরে রীতিমতো চোখ জ্বলতে শুরু করে। দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। বুধবারও একই ধাচে শুরু হয় এই রহস্যময় ধোঁয়ার দাপট। এদিকে ধোঁয়ার কারণ জানতে রাস্তায় পর্যন্ত নেমে আসেন বাসিন্দাদের অনেকে। আতঙ্কে ঘনঘন ফোন যায় দমকল, বন দপ্তর, পুলিশের কাছে। কিন্তু, সেই শর্ষের মধ্যেই ভূত! উত্তরহীন সেই প্রশাসন।
advertisement
advertisement
এদিকে, এই খবর লেখা পর্যন্ত Central Pollution Control Board, Ministry of Environment, Forests and Climate Change -অনুযায়ী শিলিগুড়ির National Air Quality Index যথাক্রমে ২৬৭ একিউআই (AQI)। যা 'poor' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বাতাবরণ শ্বাসকষ্ট সহ চোখ জ্বালার কারণ হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম।
হিমালয়ান নেচার অ্যাণ্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (HIMALAYAN NATURE & ADVENTURE FOUNDATION - HNAF) -এর কর্নধার তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম পরিবেশবিদ অনিমেষ বসু News 18 -কে বলেন, 'শিলিগুড়িতে এই ধোঁয়া প্রচুর নয়, এটার প্রায় প্রত্যেক বছরেরই বাধাধরা একটা ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে শীতের সময় থেকে শুরু করেই বসন্তের এই সময়কালটা জুড়ে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। এটার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আমাদের এই ড্রাম্পিংগুলো মানে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে প্রতিদিনই আগুন জ্বলছে অল্পবিস্তর করে। সেই আগুনের জন্যই এই ধোঁয়ার সৃষ্টি হতে পারে।'
advertisement
পাশাপাশি তিনি বলেন, 'এই মরশুমে শুষ্ক আবহাওয়া ও তাপমাত্রা যেকোনও বছরের তুলনায় এ বছর একটু বেশি। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই আর মার্চের শুরুতেই সর্বাধিক উষ্ণতায় কাটছে গোটা উত্তরবঙ্গ এবং শিলিগুড়িও তার থেকে বাদ যায়নি। এবং এই যে শুষ্কতার কারণে আরও বেশি করে ডাম্পিং ইয়ার্ডে আগুন জ্বলেছে। ফলত দূষিত হচ্ছে শহরতলির পরিবেশ।'
advertisement
এই ধোঁয়া সৃষ্টির কারণ বলতে গিয়ে অনিমেষবাবু বলেন, 'গোটা উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলগুলি; যেমন শিলিগুড়ির একদিকে মহানন্দা, আরেকদিকে বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল এবং এই মুহূর্তে গোটা উত্তরবঙ্গে প্রায় একশটা জায়গায় ফরেস্টে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। তা প্রত্যেক বছরে ঘটে এ বছরে যেহেতু ওয়েদারের জন্য আরও বেশি করে ঘটেছে। এটা বনদপ্তরের কাছেও বড় একটা সমস্যার ব্যাপার। সেরকমভাবে ম্যান পাওয়ার না থাকায় জঙ্গলের মধ্যে আগুন লাগলেই যেখানে ফায়ার ব্রিগেড ঢুকতে পারে না ফরেস্ট গার্ড দিয়ে সে আগুন নেভানো যায় না। আর সেখান থেকে উৎপন্ন ধোঁয়ার জেরে শ্বাসকষ্ট সহ চোখ জ্বালা বিশেষ করে অসুস্থ মানুষদের এবং বৃদ্ধদের এই অসুবিধাটা হচ্ছে। আর এই গত দু'দিন ধরে এই সমস্যাটাই ব্যাপকভাবে শহরবাসী অনুভব করছে। আমি মনে করি এটা অবশ্যই প্রশাসনিকগত ভাবে দেখা উচিত।'
advertisement
যদিও এই রহস্যময় ধোঁয়া চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক মহলে। এ প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি গর্ভমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) ডাঃ কল্যাণ খাঁ-কে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যাদের COPD বা অ্যালার্জি টাইপের আছে তাদের জন্য এটা ভীষণই ক্ষতিকর। আমি নিজেই বিষয়টা লক্ষ্য করেছি যে ধোঁয়াটা রাত বাড়তেই বাড়ছে। এটা আসলে স্মগ। আর এই ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকে বিশাল ক্ষতি করবে।'
advertisement
ডাক্তারবাবুর কথায়, 'ডাক্তারি পরিভাষায় সাধারণত ৫ - ১০ মাইক্রোনের পার্টিকেল মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক। আজ যা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে তা চোখের জন্য যেমনটা ক্ষতিকারক। বিশেষ করে যারা রাতে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে করে তাদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকারক।'
এতো সমস্যার কথা বললেন, তবে সমাধানটা কী প্রশ্ন করা হলে কল্যাণবাবুর জবাব, 'প্রশাসনিক স্তরে যারা আছেন তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। ওই পর্যায়ে যা করনীয় তাই করতেই হবে। এটা যেখান থেকে আসছে তার উৎসস্থল বের করে যত শীঘ্রই সম্ভব সেটাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনথ্যা বড় বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। তাছাড়া, আমি বলব বাইরে রাতে বেরোলে চোখে প্রটেকশন নিয়ে বেরোতে। হাতে গ্লাভস বা ফুলহাতা জামা পড়তে হবে। যাতে করে চামড়া কোনওভাবে ইফেক্ট না হয়। আর নাকের ক্ষেত্রে বিশেষ করে N-95 মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সেটা করোনা শুধু নয়, এই রহস্যময় ধোঁয়া থেকেও আমাদের ফুসফুসকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাবে।'
advertisement
ভাস্কর চক্রবর্তী
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
March 17, 2022 6:17 PM IST