হায়দরাবাদ গণধর্ষণকাণ্ড: মৃত্যুর পরও মহিলাকে একে একে ধর্ষণ করেছিল অভিযুক্তরা !
Last Updated:
#নয়াদিল্লি: হায়দরাবাদে তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ, খুনের পর দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়। কেউ চাইছেন দোষীদের ফাঁসি। এখন অভিযুক্তের মা চেয়েছেন, তার ছেলেকেও পুড়িয়ে মারা হোক। এরই মাঝে, সোমবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে, বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন।
তিনি বলেন, ‘‘এরকম অপরাধের ক্ষেত্রে কিছু দেশে পাবলিকই সাজা দেয়। আমিও পরামর্শ দেব দোষীদের পাবলিকের সামনে নিয়ে আসুন। আর তারপর পেটান...৷ ’’
গত কয়েক বছরে, কখনও গরু, কখনও চোর বা শিশুচোর সন্দেহে, কোথাও আবার জয় শ্রীরাম না বলার অভিযোগ বারবার গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এর নিন্দায় সরব হয় দেশের নানা প্রান্তের বিদ্বজ্জনদের একাংশ। উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠিও লেখে। এ বার সংসদে দাঁড়িয়ে সেই গণপিটুনিরই দাওয়াই দিলেন জয়া বচ্চন। যাঁদের হাতে আইন তৈরির দায়িত্ব, তাঁদেরই একজন হয়ে, কীভাবে আইন ভাঙার পরামর্শ দিতে পারেন? এ প্রশ্ন অনেকেরই।
advertisement
advertisement
হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার একটি রিপোর্ট জমা পড়ে আদালতে। সেখানে পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর পরও লরির কেবিনে নিয়ে গিয়ে ২৭ বছরের তরুণীকে চার অভিযুক্তরা একে একে ধর্ষণ করে। মৃত্যুর পরও লরির কেবিনে নিয়ে গিয়ে ২৭ বছরের তরুণীকে চার অভিযুক্তরা একে একে ধর্ষণ করে।
See the Anger of crowd when that 4 r@pists where taken to Custody.#Priyanka_Reddy pic.twitter.com/QU9lSv5gty
— कbiर (@Mumbaichamulgaa) December 2, 2019
advertisement
জয়া বচ্চনকে সমর্থনের পাল্লাটাও কিন্তু কম ভারী নয়। তাঁর মন্তব্য ঘিরে হাজারো বিতর্ক তৈরি হলেও জয় বচ্চন অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়।
Just look at them carefully ! Four accused in #Priyanka_Reddy rape and murder case. They are natives of narayanpeth district. 1. Mohd Arif 2. Jollu Navin 3. Jollu Shiva 4. Chintakunta All aged around 20 to 25yrs. Read it again, All aged around 20 to 25yrs. pic.twitter.com/OGyhYGgMP8 — Shivangi Thakur (@thakur_shivangi) November 30, 2019
advertisement
দোষীদের ‘জনসমক্ষে পিটিয়ে মারা’ উচিত। তেলঙ্গানায় তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ ও খুন কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে সোমবার সংসদে এই মন্তব্য করলেন রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চন। এ দিন লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরকার ও বিরোধী সব পক্ষের সাংসদরাই এই ধর্ষণকাণ্ডের তীব্র নিন্দায় সরব হন। প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন আনতে প্রস্তুত সরকার পক্ষও। লোকসভার পক্ষ থেকে স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রুখতে সংসদ আলোচনায় প্রস্তুত।’’ অন্য দিকে জয়া বচ্চনের এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকদের একটি অংশ।
advertisement
বুধবার রাতে তেলঙ্গানায় তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। ঘটনায় চার অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে ওই চিকিৎসকের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের মতোই ধৃতদের কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠেছে সারা দেশ থেকে। এ বার তার আঁচ লাগল সংসদেও।
advertisement
সোমবার রাজ্যসভা এবং লোকসভা উভয় কক্ষেই এই গণধর্ষণ ও খুন কাণ্ড নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন বিরোধীরা। সেই আলোচনাতেই রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টি সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, ‘‘এই ধরনের লোকদের জনসমক্ষে নিয়ে আসা উচিত এবং পিটিয়ে মারা উচিত।’’
রাজ্যসভায় বক্তব্যের সময় কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জয়া। ধরা গলায় বলতে থাকেন, আমি জানি না, কত বার এই ধরনের অপরাধের জন্য বলতে উঠেছি। আমি মনে করি এ বার সময় এসেছে। নির্ভয়া হোক বা কাঠুয়া কিংবা তেলঙ্গানা—মানুষ চায়, সরকার এর সঠিক ও নির্দিষ্ট জবাব দিক। আমি মনে করি, এটাই আদর্শ সময়।’’ পরের মুহূর্তেই এক গুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জয়া বলেন, ‘‘সরকার কী করেছে ? কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে? নির্যাতিতারা কি বিচার পেয়েছেন? কারও নাম নিতে চাই না। কিন্তু এর জন্য কি নিরাপত্তা দায়ী নয়? আমার মনে হয়, এক দিন আগেও তেলঙ্গানায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তার পরেও কেন আটকানো গেল না?’’
advertisement
কখনও গোমাংস নিয়ে যাওয়া, কখনও চোর বা শিশুচোর সন্দেহে, কোথাও আবার জয় শ্রীরাম না বলায় গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় তোলপাড় হয়েছে দেশ। যে কোনও অজুহাতে গণপিটুনির ঘটনা সারা দেশে বেড়ে যাওয়ায় তার নিন্দা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিদ্বজ্জনদের একাংশ। কিন্তু এ বার সংসদে সেই গণপিটুনির পক্ষেই সওয়াল করায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে জয়ার এই মন্তব্য। সমালোচকদের একাংশের বক্তব্য, একজন সাংসদ হয়ে এবং রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়নি জয়ার।
কিন্তু শুধু আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা— গড়পড়তা এ সব বিষয়কে দুষেই ক্ষান্ত হননি জয়া। বরং কার জন্য, কেন এ সব ঘটনা আটকানো যাচ্ছে না, এর জন্য দায়ী কে বা কারা, তাঁদের নির্দিষ্ট করা এবং নাম প্রকাশ করা এবং নিন্দা করার দাবিও তুলেছেন সাংসদ জয়া।
জয়ার পাশাপাশি এ দিন এডিএমকের রাজ্যসভার মহিলা সাংসদ বিজিলা সত্যনাথ রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘আমার দেশ মহিলা ও শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। দোষীদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’’ কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের যুক্তি, শুধু সংসদ বা বিধানসভায় নয়, সর্বত্র এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার হওয়া দরকার।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুও ঘটনার নিন্দা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেটা প্রয়োজন সেটা শুধু আইন প্রণয়ন নয়। দরকার ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা’ এবং মানসিকতার পরিবর্তন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সেটা করুন এবং সমাজের এই অভিশাপকে দূর করুন।’’
একই ভাবে লোকসভাতেও এ দিন ধর্ষণ-খুন কাণ্ড নিয়ে সরব হন বিরোধী সাংসদরা। আইনশৃঙ্খলা ও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হন সব দলের সাংসদ। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা উচিত নয়।’’ অন্য দিকে সরকার পক্ষের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘ধর্ষণ আইন আরও কঠোর করতে সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আরও কঠোর আইনের জন্য যদি সহমত হয়, সরকার সেটা প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।’’ তবে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার স্পিকারের উপরেই ছেড়েছেন।
পরে স্পিকার আলোচনার প্রস্তাবে সায় দেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের নৃশংস ঘটনা (তেলঙ্গানায় গণধর্ষণ ও খুন) যে ঘটেছে, তার জন্য সংসদের পক্ষ থেকে আমি দুঃখপ্রকাশ ও তীব্র নিন্দা করছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনারবৃত্তি আটকাতে সংসদ ঐক্যবদ্ধ। সরকার পক্ষও আলোচনায় সায় দিয়েছে।’’
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 02, 2019 7:27 PM IST