#মুম্বই: ছোট বাচ্চা-শিশুদের দেখলেই গাল টিপে আদর করার প্রবণতা আমাদের সবারই কম-বেশি রয়েছে। কিন্তু সেই ছোঁয়ায় কারও কোনও যৌন উদ্দেশ্য বা ইঙ্গিত রয়েছে কিনা তা আমরা খুব একটা ভাবিনি এতদিন। তাতে বাচ্চারা বিরক্ত হচ্ছে কিনা তাও ভাবনায় নেই কারও। যদিও মুম্বইয়ের স্পেশাল প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস (POCSO) বা পকসো আদালতের সাম্প্রতিকতম রায় এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ গুড টাচ ও ব্যাড টাচের ফারাক নিয়ে ফের একবার সামনে এসেছে মুম্বইয়ের এক ঘটনা। গত মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানিতে পকসো আদালতের পর্যবেক্ষণ, যৌন উদ্দ্যেশ্য ছাড়া কোনও শিশুর গাল টিপলে তা কখনওই অপরাধ নয়। মঙ্গলবার ওই আদালত ২৮ বছরের এক ইলেকট্রিশিয়ানকে বেকসুর খালাসের রায় শুনিয়েছে। যদিও ওই আদালতই ৫ বছরের শিশুকন্যার মাকে শ্লীলতাহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে তাকে।
দু'টি ঘটনা একইসঙ্গে একইদিনে ঘটে। শিশুকন্যার গাল টিপে তার মাকেও শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে ওই ইলেকট্রিশিয়ানের বিরুদ্ধে। ৩৩ বছরের মহিলাকে শ্লীলতাহানির দায়ে এক বছরের জেল হয়েছে অভিযুক্তের। যদিও শিশুর গাল টেপার পিছনে কোনও যৌন ইঙ্গিত ছিল না বলেই মনে করছে আদালত। মহিলার বাড়িতে একটি ভাঙা ফ্রিজ সারাই করতে গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটায় অভিযুক্ত।
ওই ইলেকট্রিশিয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতের রায়, 'মহিলার শ্লীলতাহানি করা ছাড়া কোনও মামলা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়নি। অভিযুক্তের বয়স কম, এক বছরের সাজা তাকে নিজেকে শুধরে নিতে সাহায্য করবে। সে কারণেই তাকে এই সাজা শোনানো হয়েছে।' ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী মহিলার শ্লীলতাহানিতে ৫ বছর পর্যন্ত জেল হেফাজতের সাজা হতে পারে। দোষীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের ২ জুন। আদালতে অভিযোগকারিণীর দাবি, তাঁর স্বামী কাজে বেরনোর পর বাড়িতে দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে একাই ছিলেন তিনি। অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তরক্ষীকে একজন ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে দিতে বলায় তিনি অভিযুক্তকে নিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই ইলেকট্রিশিয়ান ফ্ল্যাটটিতে যায়। ফ্রিজের একটি যন্ত্রাংশ খারাপ বলে নিজেই গিয়ে বাজার থেকে সেটি কিনে আনে। মহিলার দাবি, ঘরে ঢুকেই তাঁর গায়ের কাছে গিয়ে মেয়ের গালে হাত দেয় সে। মেয়েটি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে ওঠে। মহিলার দাবি, ফ্রিজ সারাই করার সময় তিনি রান্নাঘরে গিয়েছিলেন। সেই সময় আচমকাই পিছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ওই ইলেকট্রিশিয়ান। তিনি ভয় পেয়ে ধাক্কা দেন তাকে। এর পরই ইলেকট্রিশিয়ানের কাজের টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি।
মহিলার দাবি, ঘর থেকে বেরনোর সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের গালে ফের হাত দেয় অভিযুক্ত। ফের তিনি চিৎকার করে অভিযুক্তকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ঘটনার পরই অ্যাপার্টমেন্টের সুপারভাইজারকে ফোন করে অভিযোগ জানান মহিলা। ভাইকে ফোন করে ঘটনার বিবরণ দেন। এর পরই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্তকে সেদিনই গ্রেফতার করা হয়, যদিও জামিন পেয়ে যায় সে।
পরে আদালতে সেই মামলা উঠলে সাত বছরের শিশুকন্যাকেও ডেকে পাঠানো হয়, সেদিনের বিবরণ শোনা হয়। যদিও মহিলার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয় আদালত। যৌন হেনস্থা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় অভিযুক্তকে। তবে শিশুর বয়ান অনুযায়ী গাল টেপার ক্ষেত্রে কোনও যৌন অভিসন্ধি খুঁজে পায়নি আদালত।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।