#নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লির সীমান্তে কৃষি আন্দোলনের সমর্থনে ৩০ জানুয়ারি থেকে এবার অনশনে বসতে চলেছেন আন্না হাজারে। আগে থেকেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এই সমাজকর্মী। দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা কৃষি আন্দোলনে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। এরই মধ্যে কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিল্লিতেই আমরণ অনশনে বসছেন বর্ষীয়ান সমাজকর্মী। আন্না জানিয়েছেন যে, ২০১৮ থেকে কেন্দ্র সরকারকে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলি বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করছেন তিনি। তবে তাতে কান দেয়নি সরকার, অভিযোগ আন্না হাজারের। তিনি বলেছেন যে, সরকারের এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ তিনি। আন্নার অনশন চলবে রালেগান সিদ্ধির যাদব বাবা মন্দির থেকে।
সূত্র মতে, সরকার ইতিমধ্যে আন্না হাজারাকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেছে। আন্নাকে হাজারের এই অনশন আটকাতে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী কৈলাস চৌধুরী ময়দানে নেমে পড়েছেন। অনশেনর আগেই তিনি সিন্দ্রিতে পৌঁছে আন্না হাজারের সঙ্গে কথা বলবেন। কৈলাশ চৌধুরী এর আগে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা স্পিকার হরিভাউ বাগডে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, বিজেপি নেতা রাধাকৃষ্ণ বিভে পাতিল এবং আহমেদনগরের সাংসদ সুজয় ভিখে পাটেল সহ বশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল নেতা আন্না হাজারের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন। যদিও আন্না হাজারে কোনও মূল্যে পিছিয়ে পড়তে প্রস্তুত নন।
আন্না হাজারের অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং গিরিশ মহাজন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এ বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছেন। এই খসড়াগুলি আনা হাজারে দেখানো হবে। এই খসড়া দেখে নিজের বক্তব্য কৃষি মন্ত্রীর কাছে জানাতে পারবেন আন্না। এর পরে, যদি সরকার এতে একমত হয় তবে সম্ভবত আন্না তার এই ভুখ হরতাল প্রত্যাহার করতে পারেন। তবে আন্না তাঁর নিজের সিদ্ধান্তে অটল এবং সরকারের পাঠানোর খসড়ার সঙ্গে তিনি কতটা সহমত হবেন, সেটাই দেখার।
আন্না হাজারে তাঁর কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ করেছেন যে এই আন্দোলনে যেন কোনও হানাহানি না হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষি আন্দোলনে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, "আমি সর্বদা অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চাই। তিনি বলেছিলেন যে গত ৪০ বছরে তিনি বহুবার আন্দোলন করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর জন লোকপাল আন্দোলনে জড়িত ছিল, কিন্তু কেউ কোনও হিংসার পথে হাঁটেননি।" তাঁর মতে, "গান্ধীজি আমাদের শিখিয়েছেন যে শান্তিপূর্ণ যে কোনও আন্দোলনের সর্বাধিক শক্তি।" এর পাশাপাশি তিনি জানান, "কৃষকদের বিষয় নিয়ে আমি পাঁচবার কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। কোনও উত্তর আসেনি। তাই জীবনের শেষ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিলাম।" বলছেন আন্না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিতেও সে কথা উল্লেখ করেছেন।
স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক মর্যাদা এবং কৃষি কমিশনকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া। এর পাশাপাশি, ব্যয়মূল্যে ৫০% বাড়িয়ে এবং সি -২ তে ৫০% যোগ করে এমএসপি দেওয়ার জন্য একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ২৯ মার্চ ২০১৮ তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এই দাবিগুলি মেনে নেওয়ার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সামনে আসেন আন্না হাজারে। রামলীলা ময়দানে চলে অনশন আন্দোলন। তাঁর সেই আন্দোলনে গোটা দেশের সাধারণ মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়ান। চাপে পড়ে সেই নিয়ে আলোচনা করতে সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকে তৎকালীন ইউপিএ সকরার।