নওদা: রক্তের সম্পর্ক নয়৷ একে আত্মার সম্পর্ক বলা চলে৷ হাজার হাজার টিয়ার সঙ্গে এক ছাপোষা বৃদ্ধের৷ টিয়ারা কেউ বৃদ্ধের পোষ মানা নয়৷ কিন্তু ওই বৃদ্ধের জন্যই কয়েক হাজার টিয়া নিশ্চিন্তে ঘর বেঁধেছে একটি গাছে৷
মুর্শিদাবাদের নওদার কুঠিপাড়া গ্রামের বিশাল কড়াই গাছকে ঘিরেই হাজার হাজার টিয়ার সঙ্গে প্রবীণ চাঁদ মিঞার এই বন্ধন গড়ে উঠেছে৷ আর চাঁদ মিঞার সৌজন্যেই এই কড়াই গাছের সামনে কয়েক হাজার টিয়ার কলরবে থমকে দাঁড়ান বহু মানুষ৷ বৃদ্ধ তাঁদের এগিয়ে গিয়ে বলেন, পাখি দেখছো দেখো, পাখি চুরি করতে যেও না!
আরও পড়ুন: ৪৪, ৪৪! পর পর দু'দিন! পুড়ছে বাংলার এক জেলা, ভয়ঙ্কর গরমের রেকর্ড
নওদার চাঁদপুরের কুঠিপাড়া গ্রামে রাজ্য সড়কের পাশেই রয়েছে এই বিশাল কড়াই গাছ৷ স্থানীয়রাই জানাচ্ছেন, গাছটি ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে রয়েছে৷ গাছের বয়সেরও হয়তো গাছ পাথর নেই৷ এক সময় ব্রিটিশদের নীলকুঠি ছিল এই এলাকায়৷ তার থেকেই এই গ্রামের নাম হয় কুঠিপাড়া৷ সেই কুঠিপাড়ারই এখন অন্যতম আকর্ষণ এই কড়াই গাছ৷
প্রাচীন এই কড়াই গাছের মূল আকর্ষণ তাতে বাসা বাঁধা হাজার হাজার টিয়া৷ সংখ্যাটা প্রায় তিন থেকে চার হাজার হবে বলেই দাবি চাঁদ মিঞার৷ এই কড়াই গাছের থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই চাঁদ মিঞার বাড়ি৷ কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময়টা গাছতলায় বসে টিয়া পাখিদের দিকে তাকিয়েই কেটে যায় চাঁদ মিঞার৷ বলা ভাল, টিয়াগুলিকে পাহাড়া দেন তিনি৷ যাতে চোরা শিকারী বা অন্য কেউ গাছের মধ্যে থাকা পাখির ছানাদের চুরি না করতে পারে৷ দিনে হোক বা রাতে, চাঁদ মিঞার কড়া নজরদারি চলে গাছের উপরে৷ আর তাতেই নিশ্চিন্ত টিয়ার দল৷
আরও পড়ুন: তীব্র দাবদাহে দিনে মাঠে যাওয়া দায়, বাধ্য হয়ে রাতেই চাষ করছেন কৃষকরা
একসঙ্গে হাজার হাজার টিয়া পাখির এই কলরব শুনে গাছের সামনে থমকে দাঁড়ান বহু মানুষ৷ তাতে অবশ্য আপত্তি নেই চাঁদ মিঞার৷ কিন্তু বেগতিক দেখলেই লাঠি হাতে রুখে দাঁড়ান তিনি৷ চাঁদ মিঞার কথায়, 'আমার জীবন থাকতে এই গাছের পাখি কাউকে ধরতে দেবো না৷ অনেকে আসে দেখে, ছবি তোলে৷ কেউ পাখি দেখতে আসলেও বলে দিই পাখি দেখছো দেখো, কিন্তু বাসা থেকে পাখি পেড়ে নেওয়া চলবে না৷ সারাদিন আমি এই গাছের তলাতেই থাকি৷'
যখন বাড়ি যান, সেখান থেকে চাঁদ মিঞার নজর থাকে গাছের দিকে৷ ছাদে উঠেও গাছের ডালে ডালে চোখ বুলিয়ে দেখে নেন তিনি৷ তবে ভয় বেশি রাতে৷ তখনও অবশ্য সজাগ থাকেন চাঁদ মিঞা৷ আর এই গাছ নিরাপদ জেনেই হয়তো হাজার হাজার টিয়া সেখানেই সংসার পেতেছে৷
টিয়াদের সঙ্গে কবে থেকে তাঁর এমন সম্পর্ক গড়ে উঠল, তা সঠিক মনে নেই চাঁদ মিঞার। তিনি বলেন, 'যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে তখন থেকেই ওদের দেখছি। আমার বাড়িতে থাকতে ভাল লাগে না। তাই গাছের নীচে চলে আসি। আর আমি দেখাশোনা করি বলেই পাখির সংখ্যা এতটা বেড়েছে।'
সহ প্রতিবেদন: রাকিবুল ইসলামনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Murshidabad, Parrot