হোম /খবর /মুর্শিদাবাদ /
আজও মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়ায় ঐতিহ্য মেনে নবাবী বিরিয়ানি দেওয়া হয় রোজাদারদের

Murshidabad News- নবাবী ঐতিহ্য মেনে মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়াতে আজও রোজাদারদের জন্য  তৈরি হয় বিরিয়ানি  

X
ইমামবাড়াতে [object Object]

রমজান মাসে রোজা রাখা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখান থেকে রোজার একমাস  খাবার পেয়ে থাকে। তন্দুরী রুটি, ছোলার ডাল সঙ্গে ফল আবার কখনো বিরিয়ানি। নবাবী আমলে ষাট জন পেলেও এখন প্রায় ২০০ জনকে দেওয়া হয় এই খাবার

  • Share this:

#মুর্শিদাবাদঃ বিরিয়ানি শব্দটা শুনলে প্রায় সকলেরই চোখ আর রসনা সিক্ত হয়ে ওঠে। ফারসি 'বিরিয়ান' শব্দ থেকে উৎপত্তি আজকের বিরিয়ানিরএর অর্থ হলসুগন্ধি মশলা সহযোগে রান্নার আগে ভেজে নেওয়াখৃ্ষ্টীয় একাদশ শতকে ইরানি পন্ডিত তথা ভারত বিশেষজ্ঞ আলবেরুনীর লেখাতেও বিরিয়ানির উল্লেখ পাওয়া যায়

কেউ কেউ বলেন, আরব কিংবা তুর্কিদের হাত ধরেই বিরিয়ানির প্রবেশ এই উপমহাদেশে। আবার কেউ বলেন, মুঘল সম্রাট শাহজাহান পত্নী মুমতাজ, বাদশাহর সৈন্যদের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাওর্চিকে হুকুম দেন সুগন্ধি চাল মশলা, ঘি ও গোশ্ত সহযোগে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করতে। সেখান থেকেই উৎপত্তি বিরিয়ানির। যাই হোক,  দিল্লির নবাব বাদশাহর হাত ধরেই যে উপমহাদেশের মূল ভূখণ্ডে এর আগমন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একদা সুবে বাংলার দেওয়ান আর পরবর্তীতে সুবে বাংলার নবাবী পাকশালায় যে বিরিয়ানির সিংহাসন মজবুত থাকবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

মুর্শিদকুলির সাধের মুর্শিদাবাদেও এর বহুল ব্যবহার দেখা যায় পরবর্তীতে। যদিও কলকাতায় এর আগমন লখনউ এর নির্বাসিত নবাব ওয়াজেদ আলির শাহর হাত ধরে। একসময়, লালবাগের নবাবী ইমামবাড়ায়, রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারে বিতরণ করা হত বিরিয়ানি। কিন্তু এখন সেই নবাবও নেই, নেই তাঁর রাজ্যপাটও। তাই রোজাদারদের জন্য বরাদ্দ বিরিয়ানির পরিবর্তে দেওয়া হয় তন্দুরি রুটি ছোলার ডাল, ফল ইত্যাদি। যা নেওয়ার জন্য আজও ভিড় করেন রোজাদাররা। হাতি শালে হাতি, ঘোড়া শালে ঘোড়া, কাছারি বাড়ি, কর্মচারী, পাইক বরকন্দাজ নহবতখানা, সুসজ্জিত পুষ্পোদ্যান, অতিথিশালা না থাকলেও, রমজান মাসে খাবার বিতরণ আজও প্রথা মেনেই হয়ে চলেছে।

ইতিহাস বলছে, এই নিজামত ইমামবাড়া ১৭৪০ সালে তৈরি করেছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। পৃথিবীর বৃহত্তম এই ইমামবাড়া ১৮৪২ ও ১৮৪৬ সালে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায়, ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে নবাব নাজিম মনসুর আলি খাঁর আমলে পুনর্নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা রমজান মাসে চালু করেন খাবার দেওয়া।

কুরানের হাদিসে আছে, কোনো মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি যদি রমজান মাসে রোজা পালন করতে না পারেন, তাহলে তার পরিবর্তে ষাট জন মানুষকে খাওয়াতে হবে। লন্ডনে পড়াকালীন নবাব ওয়াসিফ আলির পক্ষে রোজা পালন সম্ভব না হওয়ায় হাদিসের নিয়মানুসারে ষাট জনকে খাওয়ানো হত। সেই ধারা আজও বহন করে চলেছে সরকার। ১৯৮৫ সালে রাজ্য সরকারের আইন বিভাগ এটি অধিগ্রহণ করে। রমজান মাসে রোজা রাখা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখান থেকে রোজার একমাস খাবার পেয়ে থাকে। তন্দুরী রুটি, ছোলার ডাল সঙ্গে ফল আবার কখনো বিরিয়ানি।

নবাবী আমলে ষাট জন পেলেও এখন প্রায় ২০০ জনকে দেওয়া হয় এই খাবার।সারাদিন উপোস করে সন্ধ্যায় ইফতার সারেন নবাবী ইমামবাড়ার খাবার খেয়ে। যার খরচ রাজ্য সরকার বহন করে। পাচক জানান, নবাবী আমলের জাঁকজমক আর না থাকলেও এখনো ঘুগনি, কচুরি, ছোলার ডাল, রুটি, ফল মানুষকে দেওয়া হয়।

ইমামবাড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী কাশ্মার আলি বলেন, বর্তমানে রমজান মাসের ১৫ তম দিন এবং ২৯ তম দিনে ইফতারে বিরিয়ানি দেওয়া হয়। বাকি দিনগুলি ডাল রুটি বিতরণ করা হয়। আগে আরো জাঁকজমকের সাথে ইফতারের আয়োজন করা হত। নবাবের বংশধর সৈয়দ আলি মির্জা বলেন, লন্ডনে পড়াশোনা করা নবাবের পক্ষে রোজা করা সম্ভব ছিল না। তাই হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী একজন রোজা না করতে পারলে তার পরিবর্তে ষাট জনকে খাওয়ানোর ধারা আজও বহন করে চলেছে সরকার। এখনও রমজান মাসে প্রতিদিন এখান থেকে ইফতারের খাবার দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে।

Koushik Adhikary 

Published by:Samarpita Banerjee
First published:

Tags: Eid, Murshidabad, Ramzan 2022