দরজায় তালা তরিবাড়ি বুদ্ধমন্দিরে, পর্যটনে ভাটার আশঙ্কা
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
বিশাল আকৃতির এই মন্দিরের চারপাশে রয়েছে নানান ওয়ালআর্ট। অনেক জায়গায় আবার রয়েছে বুদ্ধিস্ট ট্র্যাডিশনাল আর্টওয়ার্ক। সেগুলি এককথায়, 'সেলফি কর্নার'-এ পরিণত হয়েছিল।
শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি শহর হল পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। এখানে দার্জিলিং যাওয়ার পথে সুকনার জঙ্গলঘেরা রাস্তা থেকে কলকল করে বয়ে চলা নদী, সবই রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পশুপ্রেমীদের জন্য বেঙ্গল সাফারি। তবে বেঙ্গল সাফারি লাগোয়া কাঁটাতার ঘেরা রাস্তায় বিচরণ করছে এক সুন্দর বুদ্ধমন্দির। নাম \এওয়াম বুদ্ধ মোনাস্ট্রি'! পোশাকি নাম তরিবাড়ি বুদ্ধমন্দির।
কোভিড বিধিনিষেধকে মান্যতা দিয়ে তরিবাড়ি বুদ্ধমন্দির কর্তৃপক্ষ বন্ধ রেখেছে দরজা। স্থানীয়রাও যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন তাঁদের। সেই রাস্তায় ঢুকলে চারিদিকে কার্যত লকডাউনই মনে হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কোথাও যেন ধুঁকছে পর্যটন শিল্প। সেইসঙ্গে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় ইকোনমি। যদিও সরকারি সূত্রে খবর, বুদ্ধমন্দিরটি যেহেতু বৌদ্ধ পুরোহিতদের দ্বারা সঞ্চালিত, তাই সেই মন্দির খোলা বা না খোলা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে মন্দির কর্তৃপক্ষের উপর। এই পরিস্থিতিতে শহরের অদূরে থাকা এই স্থানীয়দের অবসরকালীন প্রিয় 'পর্যটনকেন্দ্র' আজ পর্যটকহীন অবস্থায় সটাং দাঁড়িয়ে।
advertisement
শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তরিবাড়ি নামক এই গ্রাম। মূলত নেপালি অধিবাসীদের বসবাস এখানে। মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঞ্চুয়ারি লাগোয়া এই গ্রামের বিশেষত্ব বলতে এওয়াম মোনাস্ট্রি। ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ি আসার পথে বাদিক দিয়ে যেতে হয় এই গ্রামে। বেঙ্গল সাফারি পার করে সোজা সবুজ ও কাঁটাতার ঘেরা রাস্তায় চলতে থাকলেই মিলবে সেই সাইনবোর্ডের দেখা। সেখানেই নির্দেশ পেয়ে যাবেন, ঠিক কোনদিকে এই মোনাস্ট্রি!
advertisement
advertisement
অনেকটা দূর থেকেই দেখা যায় এই সযত্নে, সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা এই মোনাস্ট্রিকে। যা কিনা দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের চেকলিস্টে থাকে। সামনে এলেই বোঝা যাবে ঠিক কতটা বড় এই বুদ্ধমন্দির!
বিশাল আকৃতির এই মন্দিরের চারপাশে রয়েছে নানান ওয়ালআর্ট। অনেক জায়গায় আবার রয়েছে বুদ্ধিস্ট ট্র্যাডিশনাল আর্টওয়ার্ক। সেগুলি এককথায়, 'সেলফি কর্নার'-এ পরিণত হয়েছিল।
advertisement
এই এলাকার মানুষের পেটে অন্ন আসে পর্যটকদের সুবাদেই। স্থানীয়দের ব্যবসাবানিজ্য সব পর্যটকদের ঘিরেই। বিশালাকৃতির গেটের সামনে ঝোলানো হয়েছে বিধিনিষেধের নোটিশ। ফলে গেটের তালা তো বন্ধই, উপরন্ত মানুষের রোজগারের রাস্তাও বন্ধ। বললে ভুল হবে না, এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৯৪ টি পরিবার এখন সুদিনের আশায় রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'লকডাউন হওয়ায় করোনা সংক্রমণ যে কমেছে তা বললে ভুল হবে না। প্রতিদিন জেলা প্রশাসন তরফে যে বুলেটিন প্রকাশ করা হয় তাতেই সবটা একেবারে স্পষ্ট। তবে এই লকডাউনে সবথেকে বড় ধস নেমেছে পর্যটন শিল্পে ও তারসঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর ওপর। বেঙ্গল সাফারি বন্ধ। বন্যদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে সেই সাফারি পার্কের ঠিক পেছনে তরিবাড়ি এলাকায় রয়েছে একটি বুদ্ধ মন্দির। যেখানে শিলিগুড়ি ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষেরা এমনকি দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরাও আসেন। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের জেরে তা এখন বন্ধ বলে শুনেছি। এতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে ওই এলাকার ছোট ও হোস্টে ব্যবসায়ীদের।'
advertisement
তিনি বলেন, 'মন্দিরটি বৌদ্ধ পুরোহিতদের দ্বারা সঞ্চালিত ও পরিচালিত হয়। মন্দিরের নির্দিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি রয়েছে। করোনার কারণেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত; এই মন্দির বন্ধ রাখার। সুতরাং এখানে কিছুটা হলেও পর্যটন শিল্পে ধাক্কা তো অবশ্যই লেগেছে।'
সম্রাটবাবু আরও বলেন, 'সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যটন ও পর্যটনের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে যুক্তদের টিকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই মোতাবেক কাজ প্রায় শুরু। টিকাকরণ হয়ে গেলে পর্যটকরা যেমন নির্দ্বিধায় যাতায়াত শুরু করতে পারবেন; তেমনই আমরাও একটি কথা বলতে পারব আওয়ার বেঙ্গল টুরিজম ইজ ভ্যাকসিনেটেড।'
advertisement
এদিকে তরিবাড়ি হোমলি হোমস্টের মালিক ইউডেন লেপচা বলেন, 'গত বছর পুজোর পর থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। কিন্তু তারপর আর কোনও পর্যটকদের দেখা নেই।' বুদ্ধমন্দির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'মন্দির মাঝে একবার খুলেছিল। কিন্তু সেইসময় বাইরের কোনও মানুষ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। নিত্যদিন বহু মানুষ দুপুরের পর থেকে আসতেন ঠিকই কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।'
advertisement
তিনি বলেন, 'এখন লকডাউন। এইসময়ে এলাকার বহু মানুষ আগে হোমস্টে বা অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা অনেকেই বাইরে চলে গিয়েছেন। আবার অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।'
তবে বলাবাহুল্য স্থানীয়দের মধ্যে সবাই সচেতন। শুধুই অপেক্ষা পর্যটকদের। আর সুস্থ পৃথিবীর। পর্যটক আসা শুরু হলেই ফের শুরু হবে কোলাহল, ফিরবে পুরোনো দিন। সেই সুদিনের আশায় দিন গুনছেন স্থানীয়রা
ভাস্কর চক্রবর্তী
Location :
First Published :
June 17, 2021 9:37 PM IST