ফিনিক্সরূপী যুবক-যুবতী দিল ঢাকিদের নতুন প্রাণ, আনন্দে মাতল ময়নাগুড়ি
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
ফিনিক্সরূপী যুবক-যুবতী দিল ঢাকিদের নতুন প্রাণ, আনন্দে মাতল ময়নাগুড়ি
ভাস্কর চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: করোনা অতিমারির প্রভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে ঢাকিদের আয় উপার্জন বন্ধ তাই আজ ফিনিক্স ফাউন্ডেশন এর তরফ থেকে এবং স্বর্গীয়া বকুলরানী সরকারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ময়নাগুড়ির ঢাকিদেরকে সাহায্যার্থে এগিয়ে এল ফিনিক্স ফাউন্ডেশন। চাল, ডাল, সোয়াবিন, চালকুমড়ো, আলু, দুধ, আম, চাপাতা, চিনি, লেবু সমেত কিছু খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এদিন বিনা পয়সার বাজারে ৬০-এর বেশি ঢাকি পরিবারের পাশে দাঁড়াল ফিনিক্স ফাউন্ডেশন।
করোনা ভাইরাস আগেই আধমরা করেছিল। ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় সব জায়গাতেই বন্ধ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজো অবস্থা বদলানোর আশা করা হলেও তা বদলায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে যায় গতবছর। উলটে আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনা ভাইরাস। অগত্যা লকডাউন করে \'ড্যামেজ কন্ট্রোল\' করে চলেছে সরকার। তাই চলতি বছরেও ঢাকে কাঠি পড়বে কি না তা নিয়ে ধন্দে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি অঞ্চলের ঢাকিরা। অনেকেই পেশা বদলেছেন, অনেকের আবার বাপ-ঠাকুরদার বংশ পরম্পরার পেশা। তাই বাপ-ঠাকুরদার হাত থেকে নেওয়া এই পেশাকে ছাড়তেও পারছে না অনেকে।
advertisement
মায়ের অকাল বোধনে উপার্জন হলেও করোনার কোপে সেই পথে এখন কাঁটা। পকেটে টান। খালি পেটে রাত কাটছে অনেক ঢাকি পরিবারের। অনেকে তো ঋণের টাকাই শোধ করতে পারছেন না। বাড়ছে সুদের বোঝা। ফলে কার্যত সংকটের মুখে বাংলার টেরাকোটা শিল্পের মতো এই অনন্য ঢাকবাদ্যকলা। ঢাকিদের অস্তিত্ব না থাকলে আমরা পুজোটা ঠিক উপভোগই করতে পারতাম না। ঢাকি ছাড়া পুজো? এ আবার হয় নাকি! মাসকয়েক আগে বাসন্তী পুজোতেও ঢাকিদের \'ঢাক পেটানো\' শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এবার তাঁদের আর্তনাদ শুনে ছায়াসঙ্গী হলেন ফিনিক্স ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
advertisement
advertisement
তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে, শিল্পীগুলোকে অনাহারে অর্ধাহারে না থাকার অঙ্গীকার নিল একদল যুবক-যুবতীরা। তাঁরা ফিনিক্স ফাউন্ডেশন! জনা ৬০ ঢাকি পরিবারের হাতে র্যাশন তুলে দিল সংগঠনের সদস্য-সদস্যারা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রনি সাহা বলেন, \'গ্রামবাংলায় বহু ঢাকিরা পিছিয়ে। করোনার কোপে তাঁদের এখন সর্বসান্ত অবস্থা। তাই সেইসব ঢাকি ভাই-বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে ফিনিক্স ফাউন্ডেশন।\'
advertisement
বলাবাহুল্য, \'ফিনিক্স বা অগ্নিপক্ষী\' নিজেকে জ্বালিয়ে ভস্মে পরিণত করে। তারপর সেই ভস্মস্তূপ থেকে আবার নতুন করে জন্ম নেয়। জনাকয়েক যুবক-যুবতীরাও যেন সেই সর্মপণকে গ্রহণ করেছে। সত্যি যেন ছাঁইয়ের ঢিপি থেকে পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে ফিরে আসা। তারপর নিজের জীবনকে অন্যদের সেবা নিয়োগ করা। করোনা ভাইরাস যেমন মনুষ্য প্রাণগ্রাসে উদ্যত; তেমনই সেই মানবকূলই মানুষের পাশে সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড়িয়েছে। লড়াইয়ের জন্য। যা যথেষ্ট প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলেই মনে করছে অনেকে।
advertisement
এদিন যুবদের এই উদ্যোগ দেখে মনে হল, সত্যিই সেই কথাটা ঠিক \'মানুষ মানুষের জন্যে\'! এদিকে, অকালে ঢাকে কাঠি পড়ায় আনন্দে মন ভরে ওঠে গোটা ময়নাগুড়ি শহরের। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ভুলে যায় সবাই মহামারির শোক, কষ্ট, মলীনতা!
view commentsLocation :
First Published :
June 22, 2021 6:58 PM IST
