করোনা আবহে নয়া ভয় ‘রেক্টাল ব্লিডিং’! যা জানালেন বিশেষজ্ঞরা
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
করোনা আবহে নয়া ভয় ‘রেক্টাল ব্লিডিং’! যা জানালেন বিশেষজ্ঞরা
ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: করোনা আতঙ্কে ঝড় সামলাতে হিমশিম গোটা বিশ্ব। তার মাঝেই মিউকরমাইকোসিস, ব্ল্যাক হোয়াইট, ইয়েলো, গ্রিন ফাঙ্গাসের ধাক্কায় জেরবার প্রায় সকলে। আর এবার সেই তালিকায় জুড়ল নয়া নাম। রেক্টাল ব্লিডিং।
ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পাঁচজন করোনা রোগীর শরীরে রেক্টাল ব্লিডিংয়ের খোঁজ মিলেছে। তারমধ্যে একজনের মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নয়া এই বিপদ আদতেও কতটা ভয়ঙ্কর সেসম্পর্কে নিউজ ১৮ লোকালকে বিস্তারিত তথ্য দিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ খাঁ।
কী এই 'রেক্টাল ব্লিডিং'; প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ খাঁ নিউজ ১৮ লোকালকে বলেন, 'রেক্টাল ব্লিডিং বা পার-রেক্টাল ব্লিডিং বা ব্লিডিং পিআর। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণের প্রবণতা। বিভিন্ন কারণে এই রোগ শরীরে দানা বাঁধতে পারে।'
advertisement
advertisement
রেক্টাল ব্লিডিংয়ের উপসর্গ কী?
মলের সঙ্গে রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, ক্লান্তি, গ্ল্যান্ড ফোলা, জ্বর, মাংসপেশীতে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি এমনকি আলসার। ডাঃ কল্যাণ খাঁ'য়ের মতে, 'মলদ্বার থেকে রক্ত মলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে বের হয়। কখনও তার মিউকোসাস জাতীয় পর্যন্ত হয়। রক্তক্ষরণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে অনেকের তলপেটে ব্যাথা, মাথা ও শরীরে যন্ত্রনা হতে পারে। যেহেতু এই রোগের ফলে রক্ত ক্ষরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাই শরীরে ক্লান্তি, মাংসপেশীতে যন্ত্রনা, গ্ল্যান্ড ফুলে উঠতে পারে। এছাড়াও জ্বর, কাশি এমনকি শ্বাসকষ্টও পর্যন্ত হতে পারে।'
advertisement
কোন বয়সে বা কারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ খাঁ নিউজ ১৮ লোকালকে বলেন, 'যেকোনো বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সদ্যজাত ও বয়স্ক বা প্রৌঢ়ের ক্ষেত্রে এই রোগ হলে চিন্তার বিষয়। পাশাপাশি, যাঁরা সদ্য করোনা থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হতেও পারেন। কারণ, করোনাজয়ীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু নড়বড়ে অবস্থায় চলে যায়। তাই তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। অসুস্থ সদ্যোজাতরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।'
advertisement
এই রোগ নির্ণয় করা পদ্ধতি, প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক বলেছেন, 'অকাল্ট ব্লাড টেস্ট বলে একটি রুটিন পরীক্ষা হয়। যার মাধ্যমে এই রোগকে চিহ্নিত করা যায়। এছাড়াও আরও অনেক উপায়ে এই রোগকে চেনা যায়।'
কোভিডের ধাক্কার মাঝে কার্যত প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে রেক্টাল ব্লিডিং। সম্প্রতি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ভরতি থাকা পাঁচজন করোনা রোগীর শরীরে রেক্টাল ব্লিডিং রোগের খোঁজ মিলেছে। তার মধ্যে একজনের প্রাণহানিও হয়েছে। তবে এবিষয়ে কল্যাণবাবু অবশ্য বলেন, 'করোনার সঙ্গে এই রোগের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও একটি সূত্র থেকেই যায় যা নস্যাৎ করার কোনও জায়গা থাকছে না। করোনার অন্যতম চরিত্র হল অন্য রোগের ভয়াবহতাকে তরান্বিত করা। ফলে যোগসূত্রকে নাকচ করা এইমুহূর্তে যাচ্ছেই না। বছর ফেরৎ ঘুরে এলে লক্ষ্য করা যাবে যে করোনার যে লক্ষণগুলি ছিল তার মধ্যে ডাইরিয়াও কিন্তু বর্তমান। সেইসঙ্গে ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস'ও কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইদানিংকালে। যার দরুন অন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আর এই লক্ষণগুলি রেক্টাল ব্লিডিং রূপে কিন্তু মাথাচাড়া দিতেই পারে।'
advertisement
এই রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ খাঁ নিউজ ১৮ লোকালকে বলেন, 'করোনা ভাইরাস সম্বন্ধীয় যে গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস বা রেক্টাল ব্লিডিং যদি এমন কোনও রোগীর হয় যাঁর শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোমর্বিডিটি রয়েছে, সেক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এবং তদস্থলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।'
যদি এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তবে রোগীর কী করনীয়, প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক কল্যাণ খাঁ নিউজ ১৮ লোকালকে জানান, সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের বাড়তি সচেতন হতে হবে বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে। কোভিড চলাকালীন বা কোভিড পরবর্তী সময়ে রোগীর গ্যাস্ট্রোএন্টেস্টিনাল উপসর্গ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কোভিড-১৯ সেরে যাওয়ার পর তলপেটে ব্যাথা কিংবা মলের সঙ্গে রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দিলেই সাবধান হোন। তড়িঘড়ি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এই রোগ শরীরে থাবা বসানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসার প্রয়োজন। নইলে এই রোগ অতি বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনাজয়ীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললেই এই রোগ থেকেও জয় নিশ্চিত।
Location :
First Published :
July 08, 2021 10:14 PM IST