Kali Puja 2021: একান্ন সতীপীঠের এক পীঠ দেবী পূজিত হয় ভীমা কালী রূপে

Last Updated:

যুগ যুগ ধরে তমলুকের অধিষ্ঠাত্রীদেবী রূপে মা পুজিত হয়ে আসছেন

সৈকত শী, তমলুক: পুরাণে কথিত একান্ন সতীপীঠের একপীঠ তমলুকের দেবী বর্গভীমা। কথিত আছে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের খন্ডিত দেবী সতীর বাম পায়ের গোড়ালি এখানে পড়েছিল। দেবী সতীর দেহাংশ অখন্ড ভারত ভূমির যেসব জায়গায় পড়েছিল সেখানে গড়ে উঠেছে সতীপীঠ এবং দেবী পুজিত হয় কালীরূপে। সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ দেবী বর্গভীমা এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। এছাড়াও দেবীর মন্দির নির্মাণ নিয়ে আরো কয়েকটি মিথ প্রচলিত আছে। দেবী বর্গভীমা মায়ের ভোগে দৈনন্দিন শোল মাছ আবশ্যিক। আজও তমলুকের কোন কালীপুজো (Kali Puja 2021) শুরু হয় না দেবী বর্গভীমা মায়ের পুজো না দিয়ে।
পুরাণ অনুসারে দক্ষযজ্ঞ অপমানিত বোধ করায় দেহ ত্যাগ করে। শিব দক্ষযজ্ঞ নষ্ট করে সতীর দেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করে। শিবের প্রলয় নৃত্যে ত্রিলোকের বিপদ অবশ্যম্ভাবী বুঝে ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ খন্ডিত করে। শক্তির দেহের খন্ডিত অংশ মর্ত্যলোকের যেখানে যেখানে পড়ে সেখানেই গড়ে ওঠে সতীপীঠ। সতীর দেহ একান্ন খণ্ডে খণ্ডিত হয়। এই একান্ন জায়গায় একান্নটি সতীপীঠ গড়ে ওঠে এবং দেবী পুজিত হয়ে আসছে। পুরাণ অনুসারে সতীর দেহের বাম গুলফ বা বাম পায়ের গোড়ালি এখানে পড়ায় এটি একটি একান্ন সতীপীঠের একটি অন্যতম সতীপীঠ হিসেবে পুজিত হয়। কথিত আছে একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দির স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছিলেন।
advertisement
দেবীর মন্দির নির্মাণ নিয়ে আরও দুটি কাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান লাভ করেছে। একটি কাহিনী হলো শোল মাছের কাহিনী। কথিত আছে তাম্রলিপ্ত নগরীর রাজা তাম্রধ্বজ দেবীবরণ মায়ের মন্দির নির্মাণ করে। রাজা তাম্রধ্বজের নিয়োজিত এক জেলে প্রত্যহ রাজপরিবারে মাছ সরবরাহ করত। রাজ পরিবারে প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঐ জেলে বউয়ের প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ রাজ পরিবারের জন্য জোগাড় করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। এরকম একদিনে ওই জেলে বউ মরা মাছ নিয়ে জঙ্গলের সম্পুর্ন পথ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাজপরিবারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় রাস্তায় অপরিচিতা নারীর দেখা পান। ঐ জেলে বউ তার কথা সবিস্তারে সেই নারীকে বলেন। তখন সেই অপরিচিতা নারী জেলে বউকে বলেন তার মরা মাছ জীবিত করা সম্ভব। জঙ্গলের মধ্যে এক কুন্ড আছে সেই কুন্ডের জল মাছের উপর ছড়ালেই মরা মাছ জ্যান্ত হয়ে যাবে। এই কথা বলার পর ওই অপরিচিতা নারীর দেখা আর পাননি ঐ জেলে বউ। অপরিচিতা নারীর বর্ণিত পবিত্র কুন্ডু খুঁজে পান জেলে বউ এবং কোন সেই কুণ্ডের জল মরা মাছের ওপর ছড়াতেই মাছ জ্যান্ত হয়ে যায়। এরপর জেলে বউ প্রতিদিনই কুন্ডে জল ছিটিয়ে মরা মাছ জ্যান্ত করে রাজপরিবারের জন্য নিয়ে যায়। প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ সরবারহ দেখে তাম্রলিপ্ত রাজার সন্দেহ। জেলে বউকে জিজ্ঞেস করতেই সে সব সত্যি কথা বলে দেয়। রাজা তাম্রধ্বজ সপারিষদ সেই কুণ্ড দেখতে এলে দেখতে পান একটি বেদী ও বেদীর উপর অধিষ্ঠিত দেবী মূর্তি। রাজা তাম্রধ্বজ জঙ্গল পরিষ্কার করে ওই জায়গায় মন্দির নির্মাণ করেন। অনেকের মতে এটি দেবী বর্গভীমা মন্দির রূপে বর্তমানে পুজিত হয়।
advertisement
advertisement
দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দির নির্মাণের পেছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাহিনী বর্তমান। এই কাহিনীটি গড়ে উঠেছে চন্ডীমঙ্গল কাব্যের নায়ক ধনপতি সওদাগরকে নিয়ে। ধনপতি সওদাগর তাম্রলিপ্ত বন্দর হয়ে বাণিজ্যতরী নিয়ে সিংহল যাত্রাকালে দেখতে পান এক লোক সোনার কলসি নিয়ে যাচ্ছে। ধনপতি সওদাগর কৌতূহলবশত ওই লোককে জিজ্ঞেস করেন এই সোনার কলসি কোথায় পেয়েছে, উত্তরে সেই লোক বলেন জঙ্গলের মধ্যে একটি পবিত্র কুণ্ড আছে যেখানে পেতলের পাত্র ডোবালে সোনার পাত্র হয়ে যায়। এরপর ধনপতি সওদাগর অনেক পেতলের পাত্র পবিত্র কুন্ডের জলে ডুবিয়ে সোনায় রূপান্তরিত করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাণিজ্যে প্রভূত লাভ হয়। ফিরে আসার সময় তাম্রলিপ্ত বন্দরে নোঙ্গর করে ঐ পবিত্র কুণ্ড ঘিরে দেবী মায়ের মূর্তি ও মন্দির নির্মাণ করেন। তমলুকের বর্গভীমা মায়ের মন্দির নির্মাণ নিয়ে নানান কাহিনী থাকলেও পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এটি একটি সতীপীঠ হিসেবেই দেবী পুজিত হয়।
advertisement
সতীর একান্ন পীঠের এক পীঠ তমলুকের দেবী বর্গভীমা, বর্তমানেও নিষ্ঠার সাথে পুজিত হয় মা, শক্তি পুজো শুরুর আগে রয়েছে অনুমতি নেওয়ার প্রথা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের আজও মধ্যমণি মা বর্গভীমা। কয়েক হাজার বছর ধরে শক্তি স্বরূপিণী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে দেবী বর্গভীমার আরাধনা চলে আসছে। মতান্তরে তিনি ভীমরূপা বা ভৈরব কপালী নামেও পরিচিত। অতীতের প্রায় সব কিছুই ধ্বংসের মুখে চলে গেলেও স্বমহিমায় আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এই সুবিশাল মন্দির। ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে এই দেউলের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার অজস্র কাজ। তার মধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে।
advertisement
পুরাণ বলে, দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পরমন্দিরের সেবায়েতের কথায় ধর্ম-অর্থ-কাম ও মোক্ষ। এই চারটি বর্গ দান করেন বলেই মায়ের নাম দেবী বর্গভীমা। নীল তন্ত্র মতে মায়ের আরাধনা করা হয় এখানে। কালীপুজোর (Kali Puja 2021) দিন রাজবেশে মাকে সাজিয়ে মহা ধুমধামে পুজো হয়। বছরের অন্য দিনগুলিতে মাকে ভোর চারটেয় স্নান করিয়ে স্বর্নালঙ্কারে সাজানো হয়। অন্নভোগে নানা ব্যঞ্জনের পাশাপাশি এখনও রোজ মাকে নিবেদন করা হয় শোল মাছের ঝোল। ভক্তরাও মাকে মিষ্টি ভোগের পাশাপাশি মনোবাঞ্ছা পূরণে তাল, ওল, কচু এবং শোল মাছ নিয়ে মন্দিরে হাজির হন। ভিন ধর্মের মানুষজনও আসেন এই মন্দিরে। যুগ যুগ ধরে তমলুকের অধিষ্ঠাত্রীদেবী রূপে মা পুজিত হয়ে আসছেন। অতীতে এই তল্লাটে কোনও শক্তিপুজোর চল ছিল না। পরবর্তীতে জেলায় শক্তিপুজোর (Kali Puja 2021) চল শুরু হয়। এখনও সমস্ত শক্তিপুজো শুরুর অনুমতি নিতে হয় দেবী বর্গভীমা মায়ের কাছ থেকে।
বাংলা খবর/ খবর/Local News/
Kali Puja 2021: একান্ন সতীপীঠের এক পীঠ দেবী পূজিত হয় ভীমা কালী রূপে
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
  • ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে !

  • দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে

  • কলকাতা-সহ বাকি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে রবিবার পর্যন্ত

VIEW MORE
advertisement
advertisement