Birbhum: প্লাস্টিক থেকেই পেট্রোল, রান্নার গ্যাস উৎপাদন! বীরভূমের বাঙালির বিষ্ময়কর আবিষ্কার
- Published by:Simli Raha
Last Updated:
প্লাস্টিক থেকেই পেট্রোল, গ্যাস তৈরি করার যন্ত্র তৈরি করে বিশ্বের কাছে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন বীরভূমের এক বাঙালি গবেষক।
মাধব দাস, বীরভূম : বিশ্বের কাছে চিন্তার কারণ হল প্লাস্টিক। যে প্লাস্টিক প্রকৃতিতে মিশে না, আবার পোড়ালে বায়ু দূষণ হয়। তবে এ বার এই প্লাস্টিক থেকেই পেট্রোল, গ্যাস তৈরি করার যন্ত্র তৈরি করে বিশ্বের কাছে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন বীরভূমের এক বাঙালি গবেষক।
প্লাস্টিক থেকে পেট্রোল, গ্যাস উৎপাদন করার এমন যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন বীরভূমের শান্তিনিকেতনের বাঙালি গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী। নিজে একজন তৈল পরিশোধন প্লান্টের কর্মী হওয়ার দরুন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এমন যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। এই যন্ত্র থেকে তৈরি হওয়া পেট্রোল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র এবং গ্যাস দিয়ে রান্না করার মত কাজ এই বাঙালি গবেষক নিজেই করেছেন এবং সফলতা পেয়েছেন।
advertisement
বাঙালি এই গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী তাঁর এই যন্ত্রটি নিজের বাড়িতেই বিভিন্ন গবেষণার মধ্য দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি দীর্ঘ দশ-বারো বছরের বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর যন্ত্রটি তৈরি হলে ২০১৮ সালে সেই যন্ত্রের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট পাওয়ার জন্য ভারত সরকারের কলকাতার অফিসে আবেদন করেন। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে মেশিনটির পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণ চলার পর অবশেষে ২০২১ সালে তিনি এই যন্ত্রটির ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট পান।
advertisement
advertisement
তবে এই যন্ত্রটির খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ মানুষদের মধ্যে বেশ কতকগুলি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। সেই সকল প্রশ্নগুলির মধ্যে অন্যতম হল, এই যন্ত্র দিয়ে কত কেজি প্লাস্টিক থেকে কত লিটার পেট্রোল অথবা গ্যাস উৎপাদিত হতে পারে? কৌতুহল, এই যন্ত্র দ্বারা জ্বালানি তৈরি করতে খরচ কত পড়বে? এই যন্ত্র দিয়ে তৈরি জ্বালানি কোন কোন যানবাহন অথবা কী কী কাজে লাগানো যাবে?
advertisement
কত প্লাস্টিকে কত জ্বালানি উৎপাদিত হয়?
এই বিষয়ে বাঙালি ওই গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এক কেজি ভাল মানের প্লাস্টিক অর্থাৎ তাতে ধুলোবালি না থাকলে ৯৫ শতাংশের জ্বালানি উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে অর্থাৎ ৯৫ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ৫৫ শতাংশ পেট্রোল উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী এক কেজি ভাল মানের প্লাস্টিক থেকে ৩৬০ গ্রাম গ্যাস এবং ৫৫০-৬০০ (ওজন হিসাবে ৫০০ গ্রাম) মিলিলিটার পেট্রোল উৎপাদিত হয়।
advertisement
এই পেট্রোলে কী কী যানবাহন চালানো যেতে পারে
এই পেট্রোল ব্যবহার করে যে সকল ভ্যান রাস্তায় দৌঁড়াচ্ছে সে গুলি চালানো যেতে পারে। লো কম্প্রেসারের যে কোনও ইঞ্জিন চালানো যেতে পারে এই পেট্রোল ব্যবহার করে বলেই জানিয়েছেন বাঙালি গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী। এ ছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, একটি ডিজি জেনারেটর তিনি এক ঘণ্টার বেশি এই পেট্রোল ব্যবহার করে চালিয়েছেন এবং তাতে ওই ডিজি জেনারেটরের কোনও রকম ক্ষতি হয়নি।
advertisement
এই যন্ত্র দিয়ে তৈরি গ্যাস কী কী কাজে ব্যবহৃত হতে পারে?
রান্না ছাড়াও অন্যান্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এই যন্ত্র দিয়ে তৈরি গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাস্টিক থেকে তৈরি হওয়া এই গ্যাস স্টোর করে যে কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এক লিটার পেট্রোল বানাতে খরচ কত?
যেহেতু এই প্রকল্পটি বর্তমানে বাড়িতেই তৈরি করে ওই গবেষক ব্যবহার করছেন সেই ক্ষেত্রে এক লিটার পেট্রোল বানাতে কত খরচ তার সঠিক হিসেব দেওয়াটা খুব মুশকিল বলে জানিয়েছেন পুণ্যব্রত বাবু। তবে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে কেবলমাত্র ওই যন্ত্রটি চালানোর জন্য যে বিদ্যুৎ খরচ হয় সেটাই খরচ। তবে এই প্রকল্পটি যদি কোন পৌরসভা অথবা সরকারি উদ্যোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে এক লিটার পেট্রোল বানাতে যে খরচ দাঁড়াবে তা সম্পূর্ণটাই লাভ। কারণ হিসেবে তিনি যুক্তি দিয়ে যা জানিয়েছেন তা হল, প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। যেমন পরিবেশ নোংরা হওয়া, নর্দমা ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে পৌরসভাকে সেগুলি পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত ভাবে আলাদা করে খরচ করতে হয়। কিন্তু এই যন্ত্র দিয়ে প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি তৈরি করার পদক্ষেপ নেওয়া হলে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক পড়ে থাকবে না। পরিবেশ থেকে প্লাস্টিক মুক্ত হলে প্লাস্টিক মুক্ত করার খরচ করতে হবে না কর্তৃপক্ষকে।
advertisement
কিভাবে এমন যন্ত্রের চিন্তা এল?
একদিন পুণ্যব্রত বাবু তাঁর স্ত্রী’র সঙ্গে ফেরার সময় একটি জায়গায় প্রচুর জমে থাকা প্লাস্টিক দেখতে পেয়ে তার স্ত্রী তাঁকে বলেন, 'তোমরা এই প্লাস্টিক নিয়ে কিছু করছো না কেন? তোমরা তো এই পেট্রোলিয়াম প্লান্টের সাথে যুক্ত'। স্ত্রীর সেই কথা থেকেই পুণ্যব্রত বাবুর মধ্যে প্লাস্টিক থেকে কিছু একটি তৈরি করার চিন্তাভাবনা তৈরি হয়। যে হেতু প্লাস্টিক ইথিলিন বা প্রোপেলিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি। এর পরেই তিনি নিজের বাড়িতে গোপনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। আর সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলার পর অবশেষে তিনি সফলতা পান।
পদ্ধতি
প্লাস্টিক তৈরির ক্ষেত্রে ইথিলিন নামক গ্যাসকে পলিমারাইজ অর্থাৎ অনেক ইথিলিন অনু একসঙ্গে জোড়া লেগে লম্বা মালার মতো তৈরি হয়। এই যন্ত্রটি ঠিক এর উল্টো কাজ করে। অর্থাৎ মালার মতো জোড়া লেগে থাকা ইথিলিন অণুগুলিকে উত্তাপের মাধ্যমে ভেঙ্গে দেয়। তবে সেই টুকরোগুলি গ্যাস হবে না তরল হবে তা নির্ভর করে মালাতে কতগুলি অনু রয়েছে তার উপর। যন্ত্রটির সাহায্যে প্লাস্টিকের অনুভূতিকে আলাদা করে শুদ্ধিকরণ এবং শীতলীকরণের মাধ্যমেই গ্যাস এবং তরল উৎপাদিত হচ্ছে।
বাঙালি এই গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা। তিনি ছোট থেকেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। রসায়ন বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর হওয়ার পর তিনি অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিষয়ের উপর পিএইচডি করেন। পরে তিনি ইন্ডিয়ান অয়েল সস্তায় নিজের চাকরি জীবন শুরু করেন। তেল পরিশোধন প্লান্ট বসানোর তদারকিতে তিনি কর্মরত ছিলেন। নিজের চাকরি সূত্রে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি বিদেশেও গিয়েছেন।
পুণ্যব্রত বাবুর স্বপ্ন
পুণ্যব্রত বাবুর ইচ্ছে এই যন্ত্রটি ফ্রিজের মতো আকারের চলমান যন্ত্র তৈরি করতে। যাতে করে পৌরসভা অথবা গ্রামাঞ্চলের প্রশাসকরা যেখানে প্লাস্টিক রয়েছে সেখানে মেশিনটি নিয়ে গিয়ে সেখানেই পেট্রোল অথবা গ্যাস তৈরি করতে পারে।
Location :
First Published :
August 21, 2021 9:18 AM IST
বাংলা খবর/ খবর/Local News/
Birbhum: প্লাস্টিক থেকেই পেট্রোল, রান্নার গ্যাস উৎপাদন! বীরভূমের বাঙালির বিষ্ময়কর আবিষ্কার