Durga Puja 2023: দুগ্গা দুগ্গা... মায়ের পুজো ঘিরে বাংলার নানা অঞ্চলের নানা অদ্ভুত গল্প

Last Updated:

পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ কিবং নবদ্বীপ... গোটা বাংলা জুড়েই দুর্গা ঠাকুরের পুজো ঘিরে নানা অদ্ভুত গল্পের প্রচলন আছে।

নবদ্বীপের ভট্টাচার্যবাড়ি। জমিদার পরিবার। বহু বছর ধরে দেবী দুর্গার উপাসনা করে চলেছেন। কিন্তু এটা তো কোনও নতুন কথা নয়! বাংলা জুড়ে এমন পুজো তো অনেক আছে! তা হলে হঠাৎ এই পুজোর কথা আলাদা করে বলা কেন? আসলে এই পুজোর একটা রহস্য আছে ! এখানে মায়ের গায়ের রং লাল। বলা হয়, বহু বছর আগে একবার মায়ের পুজোর সময় চণ্ডীপাঠ ভুল হয়েছিল। তখনই নাকি দেবীর গায়ের রং লাল হয়ে যায়। কার্তিক এবং গণেশ নিজেদের স্থান পরিবর্তণ করে ফেলেন। মা শুধু লালই হয়ে যান না, মায়ের মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরে যায়। সেইথেকে এখানে মায়ের মূর্তি লাল। অন্যদিকে,  কলকাতার সুভাষ গ্রামের দুর্গার একদিক কালো আর একদিক সোনালি। ওদের ধারণা, কালী আর দুর্গা এক হয়ে গিয়েছেন। মূর্তির কালো দিকটায় হাজার চেষ্টা করেও সোনালি রং করা যায়নি।
দুর্গা ঠাকুরের ‘শতরূপা’ নামের মতোই, সারা বাংলা জুড়ে তাঁকে কেন্দ্র করে শত শত সংস্কার আজও জীবিত। বহু রাজবাড়ি, জমিদার বাড়িতে আজও তিনি নানা রূপে, নানা রীতিতে পূজিত হন। প্রতিটা রূপের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে কোনও না কোনও গল্প! সেইসব গল্প অনেকে বিশ্বাস করেন, অনেক করেন না! কিন্তু ওই যে কথায় বলে না, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! কাজেই অত বাক-বিতণ্ডা, তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে লাভ কী! নিছক গল্প হিসেবে শুনলেও তো মন্দ লাগে না!
advertisement
এই যেমন উত্তর ২৪ পরগনার ধান্যকুড়িয়ার সাহু-দেব বাড়ির দুর্গাপুজো। সাহুরা জমিদার ছিলেন। ওঁদের বাড়ির পুজোতে সিংহর মুখ থেকে একটা ছোট্ট শাড়ির আঁচলের অংশ বের হয়ে থাকে। কেন? পরিবারের লোকরা বলেন, বহু বছর আগে এই বাড়ির এক বউ এলোচুলে সন্ধের সময় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তারপর থেকে বউটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দিন দেখা যায়, বউটির শাড়ির আঁচলের কিছুটা অংশ সিংহর মুখ থেকে বেরিয়ে আছে। সবাই তখন মনে করেন, সিংহটিই বউটিকে গ্রাস করেছে। আজও এই পুজোতে বাড়ির বউরা নির্দিষ্ট একটি সময়ে নির্দিষ্ট একটি পোশাকে দলবেঁধে সেজে মন্দিরের ভিতরে ঘোরা- ফেরা করেন।হুগলি অঞ্চলের একটি দুর্গা পুজো আছে, সেখানে তো আর এক কাণ্ড। এখানে গ্রামের লোকেরা প্রত্যেক বছর পুজো করার সুযোগ পান না। কারণ, মা সব বছর আসেন না তাঁদের কাছে। একটি নির্দিষ্ট পুকুরে দশমীতে মা- কে বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর রথ পর্যন্ত অপেক্ষা! ওইদিন পুকুরের জলে মায়ের কাঠামো ভেসে ওঠে। কিন্তু সব বছর কাঠামো ভেসে ওঠে না। যে-বছর ভাসে না, সে বছর ওখানে পুজো হয় না। স্থানীয়রা মনে করেন, মা না আসা মানেই পৃথিবীতে কিছু না কিছু অঘটন ঘটবেই।
advertisement
advertisement
advertisement
ওদিকে বর্ধমানের পানাগড়ের বিরুডিহা গ্রামের পুজো কেন্দ্র করেও এক অদ্ভুত গল্প শোনা যায়। জমিদার বাড়ির পুজো অথচ এই বাড়ির সকলে থাকেন মাটির বাড়িতে । মাকেও মাটির বাড়িতে রেখেই পুজো করা হয়। তাাঁরা কিন্তু যথেষ্ট স্বচ্ছল! তাহলে মাটির বাড়িতে থাকেন কেন? শোনা যায়, এই বংশের লোকেরা যতবার পাকা বাড়ি করতে গিয়েছেন, ততবারই এই পরিবারের কেউ না কেউ মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই তাঁদের বিশ্বাস, পাকা বাড়িতে থাকলেই কোনও না কোনও অঘটন ঘটবে!
advertisement
মুর্শিদাবাদের সোনারন্দি রাজবাড়ির আজ দৈন দশা! তবে, একসময়ে এই বাড়ির পুজোও ছিল খুব বিখ্যাত। রাজবাড়িতে একটি পুকুর আছে। অনেক মাছ সেখানে কিলবিল করে। প্রত্যেকতা মাছের আলাদা আলাদা নাম। মনস্কামনা পূর্ণ হলে লোকে ওই পুকুরে বিভিন্ন নামে মাছ ছাড়েন। তারপর, এক বছর বাদে এসেও যদি খাবার দিয়ে মাছটাকে নাম ধরে ডাকা হয়, মাছটা লাফ দিয়ে উঠে এসে হাত থেকে খাবার খেয়ে যায়। কোচবিহার অঞ্চলে আবার আরেক অবাক কাণ্ড! দুর্গাকে বিসর্জনের আগে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়।
advertisement
বীরভূমের হেতমপুরের রাজবাড়িতে আবার রাজা দুর্গাপুজো করতেন না। নায়েবদের দিয়ে করাতেন। কারণ, রাজা শক্তির উপাসক ছিলেন না। গ্রামের লোকের আনন্দের জন্য নায়েবদের পরিবারকে দিয়েছিলেন পুজোর ভার। এই বাড়িরই ছাদের একটি অংশে সত্যজিৎ রায় ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর কিছুটা অংশ শ্যুট করেছিলেন। বংশ পরম্পরায় এখনও এখানে নায়েবরাই পুজো করে আসছেন।ঝাড়গ্রাম ও চিলকিগড়ের রাজবাড়ির মাঝখানে গড়ের ভিতরও একটা পুজো হয়। ওই রাজারা রাজস্থান থেকে এসেছিলেন। দুই রাজবাড়ির মধ্যে বিবাহসূত্রে আত্মীয়তা ছিল। বলা হয়, রাজস্থান থেকে আসার সময় দুর্গা মা ওঁদের পিছনে পিছনে আসছিলেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, পিছনে তাকালে আমি আর যাব না। ডলু নদী পার হওয়ার সময় হঠাৎ ওঁরা পিছনে তাকিয়ে ফেলেন। ব্যস, মা ওই গড়েই দাঁড়িয়ে গেলেন। সেই থেকে ওই দুই রাজবাড়ির পুজো চিলকিগড়েই হয়। এখানে নবমীর দিন মহিষ বলি হয়, ছৌ নাচে গমগম করে গোটা গড়।
advertisement
বাংলা জুড়ে এমন হাজারও গল্প লুকিয়ে আছে। শক্তি প্রদর্শনের জন্যই তো রাজা বা জমিদারেরা মায়ের পুজো করতেন। আর যাঁদের পুজো করার অধিকার ছিল না, তাঁরা আশ্রয় নিতেন স্বপ্নের। স্বপ্নাদেশে মা যদি বলেই থাকেন তাঁর পুজো করার জন্য, তাহলে আর আটকায় কে? কে আর অযথা সত্যির পিছনে ছুটে বেড়ায়, আনন্দ ছেড়ে!
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Durga Puja 2023: দুগ্গা দুগ্গা... মায়ের পুজো ঘিরে বাংলার নানা অঞ্চলের নানা অদ্ভুত গল্প
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement