সন্দেশের উপর নৃত্যরতা নর্তকী, সন্দেশ এতটুকু ভাঙছে না ! এমন দৃশ্যরও দেখা মিলত কলকাতায়...

Last Updated:

বিলাসবহুল এক নাচঘর, নাচঘরের ঠিক মাঝখানে এক বিশাল তবক-তক্তি সন্দেশ। নরম তুলতুলে । সন্দেশের উপর নৃত্যরতা এক নর্তকী। তিনি মনের আনন্দে নিজেকে উজাড় করে নাচছেন, অথচ সন্দেশ যেমন কে তেমনই রয়ে যাচ্ছে! কোথাও থেকে এতটুকু ভেঙে যাচ্ছে না!

#কলকাতা: বিলাসবহুল এক নাচঘর, নাচঘরের ঠিক মাঝখানে এক বিশাল তবক-তক্তি সন্দেশ। নরম তুলতুলে । সন্দেশের উপর নৃত্যরতা এক নর্তকী। তিনি মনের আনন্দে নিজেকে উজাড় করে নাচছেন, অথচ সন্দেশ যেমন কে তেমনই রয়ে যাচ্ছে! কোথাও থেকে এতটুকু ভেঙে যাচ্ছে না!
গল্পকথা মনে হচ্ছে তো? মনে হচ্ছে তো নিতান্তই কোনও অলীক কল্পনা! এমনটাও কি সম্ভব? নর্তকীর পায়ের আঘাতে নরম সন্দেশ এতটুকুও ভেঙে যাবে না, তাও আবার কখনও হয় নাকি?
হয়! এমন অবিশ্বাস্য দৃশ্যের দেখা মিলত খোদ কলকাতার বুকেই! সে বহুদিন আগের কথা! পাথুরিয়াঘাটের খেলাতচন্দ্র ঘোষের বাড়ির জলসায় নরম সন্দেশের উপর ছন্দে ছন্দে নেচে উঠতেন নামীদামী নর্তকীরা।
advertisement
advertisement
৮৭ নম্বর পাটুরিয়াঘাট স্ট্রিটের বিলাসবহুল জলসায় শুধু সন্দেশই নয়, দোলের সময় নাচঘরের মেঝেতে বিছিয়ে দেওয়া হত ১০-১২ ইঞ্চি পুরু আবির। আর সেই আবিরের উপর দেখা মিলত নৃত্যরতা নর্তকীদের।
অবশ্য, আজ এইসব রঙিন ছবি রয়ে গিয়েছে শুধু সাদা-কালো স্মৃতি হয়ে!
এখন খেলাত ঘোষের নাচঘরে তৈরি হয়েছে 'খেলাত ঘোষ মেমোরিয়াল হল'। রয়েছে কাঠের একটি ছোট মঞ্চও। ১৯৭০ থেকে চালু হয়েছে 'খেলাস ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট'। খেলাতবাবু জীবদ্দশায় যেসব ভাল-ভাল কাজ করেছিলেন এবং করতে চেয়েছিলেন, এই ট্রাস্টের মাধ্যমে সেই জনকল্যানমূলক কাজগুলিকেই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
advertisement
কিন্তু কে ছিলেন এই আপাদমস্তক আমুদে, রসিক, বিলাসী খেলাতচন্দ্র ঘোষ?
ওয়ারেন হেস্টিংস-এর বেনিয়ান রামলোচন ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান দেবনারায়ণের ছেলে খেলাতচন্দ্র। ২৮ বছর বয়সে তিনি ৪৬ পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিটের আদিবাড়ি ছেড়ে চলে আসেন এই বাড়িটিতে। সাহেবদের সঙ্গে ব্যবসা করেই তাঁর লক্ষী ভাগ্য খোলে।
খেলাতচন্দ্রর ৮৭ নম্বর পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিটের বাড়িটি প্রায় চার বিঘে জমির উপর দাঁড়িয়ে। বিশাল বিশাল থাম। তিনটে সিংহদরজা। এখন অবশ্য পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিটের ওপর শুধু একটি দরজাই খোলা থাকে। বাকি দুটি বন্ধ। বাড়ির দু'দিকের নহবতখানা এখন অচল। অথচ, একদিন সানাইয়ের শব্দে সকালে আরমোড়া ভাঙত গোটা বাড়ি!
advertisement
বাড়ির একতলায় প্রায় ৮৫ ফুটের টানা মার্বেল পাথরের করিডর। এই করিডর থেকেই সিঁড়ি উঠে গিয়েছে দোতলায়। চকমেলানো বাড়ি। করোডোরের বাঁদিকে বারো ধাপ সিঁড়ি উঠে ঠাকুরদালান। ঠাকুরদালানের নীচেও কিছু ঘর আছে, কিন্তু সেগুলো এখন তালাবন্ধ হয়েই থাকে! এখনও নিয়মিতভাবে থাকুরদালানে দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক, সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তি গড়া হয়। ঘটপুজো হয় কোজাগরী ও দীপান্বিতা লক্ষ্মীর। পালন হয় রাস, ঝুলন, দোল-ও।
advertisement
খেলাতচন্দ্রর দত্তক পুত্র রমানাথ। তাঁর সাহেব প্রীতিও ছিল তুলনা করার মতো। ১৯০২ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়া মারা যান। তখন কলকাতায় দেখা গিয়েছিল অভূতপূর্ব এক শোক মিছিল। সাদা পোশাকে খালি পায়ে হাজার হাজার মানুষ ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন। সারা ভারতে নাকি এরকম সমাবেশ হয়নি। এই সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের খাওয়ানো হয়েছিল পেট ভরে । আর এই পুরো ব্যাপারটির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রমানাথ।
advertisement
এহেন রমানাথের তিন ছেলে- গণেশ, সিদ্ধেশ্বর ও অক্ষয়। ঠাকুরদা'র মতো সিদ্ধেশ্বরও ছিলেন বড় আমোদপ্রিয়। কোজাগরী লক্ষ্মী ও জগদ্ধাত্রী পুজোয় বাড়ির উঠানে শ্রেষ্ঠ নটনটীদের অভিনয়ের আসর বসাতেন। ১৯৬২ সালে, রসরাজ অমৃতলাল বসুর সভাপতিত্বে এ বাড়িতে ফ্যান্সি ড্রেস প্রতিযোগিতার উপহারও বিতরণ করা হয়েছিল। তাঁর সময়ে, মহাত্মা গান্ধীও এসেছিলেন এই বাড়িতে। সভা কোথায় বসেছিল জানেন? খেলাতচন্দ্র ঘোষের সাধের নাচঘরে!
advertisement
এই বাড়ির বর্তমান মালিক রমানাথের তৃতীয় ছেলে অক্ষয়বাবুর দত্তকপুত্র অসিতকুমার ঘোষ। তিনিই খেলাতচন্দ্র ঘোষের উত্তরাধিকারী। বড়বাজার, স্ট্র্যান্ড রোড, বালিগঞ্জ, ল্যান্সডাউন রোড, ধর্মতলা স্ট্রিট, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিট, বৌবাজার, হাতিবাগান, মানিকতলায় এঁদের শ'খানের ভাড়া বাড়ি আছে।
পাথুরিয়াঘাটে খেলাতচন্দ্র ঘোষের নামে রয়েছে রাস্তা। একসময়ে তাঁর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- 'খেলাত ঘোষ ইন্সটিটিউশন'-এ শিক্ষকতা করতেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি হন এই বাড়ির 'গার্জেন টিউটর।' সিদ্ধেশ্বরের আমলে তাঁকে নায়েব করে, ভাগলপুরের জমিদারির ভার দেওয়া হয়। সেখানে, ইসলামপুরে কাছারি বাড়িতে বসে বিখ্যাত কিছু গল্প-উপন্যাস লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ।
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
সন্দেশের উপর নৃত্যরতা নর্তকী, সন্দেশ এতটুকু ভাঙছে না ! এমন দৃশ্যরও দেখা মিলত কলকাতায়...
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement