#কলকাতা: শিয়ালদহ থেকে মহাত্মা গান্ধি রোড ধরে পায়ে পায়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট। ট্রাম লাইন জুড়ে এঁকে-বেঁকে এগোলেই রাস্তার একটা ধার ধরে শুধুই ওদের রাজত্ব। সার দিয়ে পরপর বিয়ের কার্ডের দোকান। মূলত বিয়ের কার্ড হলেও অন্নপ্রাশন, পাড়ার গণেশ পুজো, বাঙালির সর্বশেষ্ঠ শারোদৎসব থেকে যে কোন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পত্র ছাপান ওরা। বছরভর ভিড় লেগে থাকে দোকানগুলোতে।
ইদানিং কলকাতার এই কার্ড পাড়াতেই যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। অধিকাংশ দোকানে ঝাঁপ বন্ধ। হাতে গোনা যে'কটা দোকান খোলা, সেখানেও মাছি মারার লোক নেই। করোনা আর লকডাউনে মার খেয়েছে বিয়ে সহ বাঙালির সামাজিক অনুষ্ঠান। আর তাতেই নাভিশ্বাস উঠেছে মহাত্মা গান্ধি রোডের কার্ড পাড়ার।
কথা হচ্ছিল এই পাড়ার তিন দশক পুরনো দোকানদার জীবন পোদ্দারের সঙ্গে। দোকানের নাম কিশোরী পেপার হাউজ। বিক্রি-বাট্টা নেই। অর্ডার নেই। তবু এক বুক আশা নিয়ে রোজ দোকান খুলে ঠাকুরের সামনে ধুপ-ধুনো দিয়ে দোকানে বসে থাকেন। সন্ধে নামলে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান একরাশ শূন্যতা নিয়ে। বলছিলেন, "করোনা আর লকডাউনে এমনিতেই বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ। যে-টুকু যা হচ্ছে, তাতেও ৫০ জনের বেশি নিমন্ত্রণ করা যাবে না। বাড়ির লোকই তো থাকে গোটা তিরিশ। কার্ডের অর্ডারটা আসবে কোথা থেকে বলুন!"
তাহলে কীসের আশায় এসে দোকান খুলে বসেন? এম ডি কার্ড কর্নারের সঞ্জীব ঘোষ বলেছিলেন,"সামনে পুজো। এই সময়টা প্রচুর কাজ আসত। যদি এই বছরেও ব্যবসা আসে! সেই আশাতেই দোকান খোলা। মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকত। এখন তো দিনে ৫০, ১০০ টাকা উপার্জন হয় না।"
পরিস্থিতি সত্যিই কঠিন। দোকান ভাড়া, বিদ্যুতের বিল, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেওয়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ এমজি রোডের কার্ড-দোকান মালিকদের। এক যুগ পুরনো দোকান শুভ পরিণয়-র মালিক নিতাই সাহা বলছিলেন,"শেষ ব্যবসা করেছি মাঘ মাসে। তারপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দোকান বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি যা, তাতে আশ্বিন, অগ্রাহয়ণেও কী হবে জানি না!" সন্ধে নামার আগেই অন্ধকার নামে কলকাতার কার্ড পাড়ায়। অনিশ্চয়তার চোরকাঁটায় ভরা ওদের সামনের দিনগুলোও।
PARADIP GHOSH