#কলকাতা: প্যাশন যে কোনও দিন বইয়ের তলায় চাপা পড়ে থাকে না সেটা প্রমাণিত হল আবার। নিজেদের ভাললাগা, ভালবাসা নিয়ে শত কাজের মাঝেও যে বারবার ফিরে আসা যায় তার প্রমাণ আবারও রাখলেন খড়গপুর আইআইটি র গবেষক পড়ুয়ারা। ২৫ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উচ্চ প্রশংসিত হয় তাঁদের প্রথম সিনেমা "অফসাইড"। কিন্তু প্রশংসায় ভেসে যাওয়া নয়, বরং তার থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও ভাল কাজ করে যেতে চাওয়াই জীবনের লক্ষ্য বলে জানালেন সিনেমার পরিচালক শাওন বাগ। অফসাইড এর সাফল্যের পর সমাজের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে একদল গবেষক পড়ুয়া। লক্ষ্য সমাজকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে আরও একটি সাফল্যের পালক যুক্ত হল এই গবেষক পড়ুয়াদের প্যাশনের মুকুটে।
সম্প্রতি জয়পুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (JIFF) ২০২১ -এ মনোনীত হয়েছিল "অফসাইড"-র পাশাপাশি তাঁদের বানানো নতুন ছবি "পিছুটান"। বিশেষ বিভাগ সেরা ছবি মনোনীত হয়েছে এই পড়ুয়াদের বানানো দ্বিতীয় সিনেমা "পিছুটান"। বিশ্বের ৮৫ দেশ থেকে পাঠানো আড়াই হাজারেরও বেশি সিনেমার মধ্যে বেছে নেওয়া ২২০টি সিনেমার মধ্যে তাঁদের সিনেমা জায়গা করে নিয়েছে এবং সেরার পুরস্কার পেয়েছে।'পিছুটান'-র সঙ্গে যুক্ত আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মোবাইলের ক্যামেরাবন্দির মাধ্যমে একটি আস্ত সিনেমা নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম গবেষক পড়ুয়া সায়ন দাশগুপ্ত, অভীক ভঞ্জ ও জিৎ মজুমদারদের সাথে আলোচনায় জানা গেল, পিছুটান গল্পে সমাজের সেই সব মানুষ যাদের সভ্য সমাজে যৌনকর্মী বলে পরিচয়। ওঁদের কোথাও একটা করুণা বা ঘৃণার চোখে দেখে। পিছুটান এই প্রচলিত ধারণার উর্ধ্বে উঠে মানুষকে দেখতে শেখায় যে ওটাও একটা পেশা। ঠিক আমার আপনার পেশার মতই এবং তাঁরা ওই পেশার সাথে যুক্ত একজন দক্ষ কর্মী।
এ ছাড়া সেই পেশার প্রতি যে তাদের একটা ভালোলাগা তৈরি হতে পারে আর পাঁচটা পেশার মতই, তাদের ও যে পেশাগত বন্ধু হতে পারে, সম্পর্ক হতে পারে আমার আপনার মতই সেইসব নিয়েই 'পিছুটান' যা আপনাকে অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।পরিচালক শাওন জানালেন, 'এই অন্য ধরনের ,অন্য স্বাদের সিনেমার জন্য সেরার সম্মানের খবর তাঁদের কাছে অনেকটা খোলা হাওয়ার মত এবং তাঁরা আরও উৎসাহিত হয়ে পরবর্তী প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করেছেন বাড়িতে বসেই।
'পিছুটান'-র শুটিং সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, সম্পূর্ণ সিনেমাটি মোবাইলে বানানো হয়েছে এবং মাত্র ৮ ঘণ্টার শুটিংয়ে তাঁরা এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন। মূলত সময় এবং খরচ বাঁচানোর জন্য এই সিনেমার কিছু দৃশ্য তাঁরা পথচলতি মানুষের সাথে বা গাড়ির দৃশ্যে রাস্তায় যাওয়া গাড়ি থামিয়ে শুটিং করেছেন। যা আদপে তাঁদের শুটিংকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে বলে জানালেন জিৎ। যিনি এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন। আইআইটি খড়্গপুরের এই তরুণ গবেষক পড়ুয়ারা নিজেদের গবেষণার কাজের ফাঁকে ফাঁকে সমাজকে এক 'অন্য' সচেতনতার বার্তাও দিয়ে চলেছেন। যে বার্তা সমাজকে নতুন পথের দিশা দেখাচ্ছে।
VENKATESWAR LAHIRI