লাহাবাড়িতে স্বামী সোহাগী মা দুর্গা, বসেন শিবের কোলে...পূজিত হয় দেবীর হরগৌরী রূপ

Last Updated:

দড়ি দিয়ে মাটির প্রতিমা বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ আসলে কাঁধে করে শব নিয়ে যাওয়া হয় ৷ আর সেই কারণে দেবী প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় না এই বাড়িতে ৷

#কলকাতা: বহুদিন আগের কথা ৷ আজও একইরকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বনেদি বাড়ির পুজো। কত না-জানা ইতিহাস কথা বলে পুজোর দালানের ইট-চুন-সুড়কিরা ৷ কলকাতা শহরে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অনেক পুজো ৷ তেমনই এক পুজো হয় লাহাবাড়িতে ৷ কতশত ইতিহাস আর ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে লাহাদের পুজোর সঙ্গে ৷
এ বাড়ির তিন ঘর ৷ প্রতি বছরই পালা বদল হয় ৷ কখনও বড় তরফ, কখনও মেজ তরফ আবার কখনও পুজোর দায়িত্ব বর্তায় ছোট তরফের উপর ৷ এ বছরও পুজোর তোড়জোর শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে ৷ এখন ঠাকুর একমেটে ৷ আরও এক স্তর মাটি পড়বে ঠাকুরের গায়ে । ঠাকুর দালানে বসে কুমোর এঁটেল মাটি ঠেসে ঠেসে দুগ্গাকে গড়ছেন। দোমেটে না হলে আদল খোলে না। ক্রমে মৃন্ময়ীর গলা-চিবুক-ঠোঁট-আঙুল স্পষ্ট হবে। মাটিতে রং লাগলে লাবণ্যময়ী রূপে ধরা দেবেন মা। প্রতিবছর এভাবেই উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ায় লাহা পরিবারের ঠাকুরদালানে মৃন্ময়ীর জন্ম হয়। তবে মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহা পরিবারে দেবী দুর্গা পূজিত হন জগজ্জননী হিসাবে। সোজা কিংবা উল্টোরথে নয়, লাহাবাড়ির দুর্গাপুজোর কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর ২-৩ দিন পর। কাঠামোর মধ্যে একটি ছোট্ট মাটির গণেশকে পুজো করা হয়। পরে যখন বড় গণেশ তৈরি হয়, তখন সেই ছোট্ট গণেশটা বড় গণেশের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম থেকে একচালার প্রতিমাই পুজো হয় এই পরিবারে।
advertisement
advertisement
এই বাড়িতে দুর্গাপ্রতিমাকে প্রতীকী হিসেবে পুজো করা হয়। যেহেতু এই পরিবারে দুর্গাপুজো হয় তাই এই বাড়িতে আর কোনও মূর্তি পুজো হয় না। বাড়ির কুলদেবী অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীর পুজো হয় ওই চারদিন। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এই পরিবার মহিষাসুর বধকে হিংস্র মনে করেন। তাই পরিবারে মা দুর্গা দশভুজা হয়ে আসেন না। তিনি আসেন হরগৌরী রূপে। দুর্গা বসেন স্বামী শিবের কোলে। শিবের বাহু বেষ্টন করে থাকে তাঁকে। দুর্গার দু’চোখ বন্ধ। পরিবারের গৃহদেবীও তিনি। অষ্টধাতুর সেই মূর্তির নাম জয় জয় মা। পুজোর কয়েকদিন তিনিও পূজিত হন ঠাকুর দালানে। পুজোর পরে তাঁকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুরঘরে। কথিত আছে, অষ্টধাতুর সেই মূর্তিকে জঙ্গলে ফেলে রেখে গিয়েছিল ডাকাতদল। দীর্ঘদিন জঙ্গলেই পড়ে ছিল সেটি। এরপর ওই পরিবারের কর্ত্রী নবকৃষ্ণ লাহার স্ত্রী স্বপ্নাদেশ পান মায়ের। দেবীর নির্দেশমতো তাঁকে জঙ্গল থেকে এনে লাহা বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে শ্রীবৃদ্ধি হতে থাকে ওই পরিবারের।
advertisement
পরিবারের ইতিহাস বলছে, ২২৬ বছরের পুরনো এই পুজো। তবে এ নিয়ে একটু মতানৈক্য রয়েছে ৷ নবকৃষ্ণ লাহা নাকি দুর্গাচরণ লাহা, কে এই পুজোর প্রবর্তক তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেক বলেন, দুর্গাচরণের অন্তত তিন পুরুষ আগে লাহাবাড়িতে শুরু হয় দুর্গোৎসব। কেউ বলেন রাজীবলোচন লাহা‚ আবার কারও মতে তস্য পুত্র প্রাণকৃষ্ণ লাহা পত্তন করেছিলেন দুর্গাপুজোর। আজও উত্তর কলকাতার দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই পরিবার। একাধিক শরিকে বিভক্ত এখন লাহা পরিবার। বড়, মেজ, ছোট। পালা করে সব শরিকের পুজোর দায়িত্ব পরে।
advertisement
পুজোর রীতি বৈচিত্রে ভরা। ষষ্ঠীতে বোধনের সময় পরিবারের কুলদেবী সিংহবাহিনীকে রুপোর সিংহাসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। এদের পুজোতে কোনও পশুবলি দেওয়া হয় না। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এই পরিবারে ছাঁচিকুমড়ো ও শশা বলি দেওয়া হয়। এই পরিবারে দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল অষ্টমীর সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজো যতক্ষণ চলে ততক্ষণ বাড়ির মহিলারা দু-হাতে ও মাথায় মাটির সরার মধ্যে ধুনো জ্বালিয়ে বসে থাকেন। বৈচিত্র ভোগ নিবেদনেও। এই পরিবারে পুজোর ভোগ শুধু মিষ্টি। নানা রকমের নাড়ু-সহ ২১ রকমের মিষ্টি পরিবেশিত হয়। আগে সব মিষ্টিই ভিয়েন বসিয়ে তৈরি করা হত ৷ তবে এখন তা আর হয় না ৷ এখন ভিয়েন দিয়ে মিষ্টি তৈরি করানোর সঙ্গে সঙ্গে বাইরে মিষ্টিও নিবেদন করা হয় মায়ের উদ্দেশে ৷
advertisement
এখানেই শেষ নয়, প্রতিমা বিসর্জনের রীতিও অভিনব। প্রথমে মাটির দুর্গাপ্রতিমা এবং তাঁর সামনে বিরাজমান জয় জয় মা’কে বরণ করে নেন বাড়ির মহিলারা ৷ এরপর জয় জয় মা বা সিংবাহিনীর মূর্তিকে বাড়ির ঠাকুর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এরপর দড়ি দিয়ে মাটির প্রতিমা বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ আসলে কাঁধে করে শব নিয়ে যাওয়া হয় ৷ আর সেই কারণে দেবী প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় না এই বাড়িতে ৷ বাড়ি থেকে দুর্গা প্রতিমা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিসর্জন দিয়ে কাঠামো না ফেরা পর্যন্ত বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে৷ পরিবারে কথিত আছে, বিসর্জন শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করছিলেন বাড়ির কর্তা দুর্গাচরণ লাহা। সেই সময় দেখেন, এক বালিকা এসে ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দুর্গাচরণ উপলব্ধি করলেন‚ ওই বালিকা আর কেউ নয়‚ স্বয়ং মা দুর্গা। এরপর তাঁর সময় থেকে শুরু হয় এই পরিবারের দুর্গাপুজোর এক নতুন নিয়ম। বিসর্জনের সময় বন্ধ থাকে বাড়ির সব দরজা এবং জানালা। প্রধান দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় দুর্গা প্রতিমা। তারপর বন্ধ হয়ে যায় সেই দরজা। বাড়ি ফিরে কর্তা সদর দরজার বাইরে থেকে তিনবার চেঁচিয়ে প্রশ্ন করেন, “মা কি আছেন বাড়ির ভিতরে?” গৃহকর্ত্রী আড়াল থেকে উত্তর দেন‚ পারিবারিক দেবী জয় জয় মা ফিরে গিয়েছেন ঠাকুরঘরে। আর মা দুর্গা রওনা হয়েছেন কৈলাসের পথে। এই উত্তর পেয়ে গৃহকর্তা প্রবেশ করেন বাড়িতে।
view comments
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
লাহাবাড়িতে স্বামী সোহাগী মা দুর্গা, বসেন শিবের কোলে...পূজিত হয় দেবীর হরগৌরী রূপ
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement