সিপিআইএমের সিঙ্গুর ‘ভুল’, বুদ্ধদেবের পাশে দাঁড়াল না পলিটব্যুরো
Last Updated:
সিঙ্গুর রায়ের আটচল্লিশ ঘণ্টা পর বিবৃতি দিল সিপিআইএম। টাটা মোটরসের হয়ে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়াল না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
#কলকাতা: সিঙ্গুর রায়ের আটচল্লিশ ঘণ্টা পর বিবৃতি দিল সিপিআইএম। টাটা মোটরসের হয়ে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়াল না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শুক্রবার পলিটব্যুরো জানাল, জমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভুলে গুনতে হয়েছে চরম মাসুল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে না দাঁড়িয়ে সিপিআইএম পলিটব্যুরো ১৮৯৮-এর জমি অধিগ্রহণ আইনকেই ঢাল করে এদিন বিবৃতি দেয় যে, ‘জমি অধিগ্রহণ একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভুল ৷ এই ভুলের চরম মাসুল গুণতে হয়েছে ৷ ২০১১-র বিধানসভা ভোটের পর্যালোচনা করে বলেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি ৷’ এতেই পরিষ্কার বুদ্ধদেবের পাশে নেই সিপিআইএম পলিটব্যুরো ৷
সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর-রায় সম্পর্কে বিবৃতি দিয়ে সিপিআইএম পলিটব্যুরো বলে, ‘প্রকল্প বাতিলের পরে তৃণমূল সরকারের কাছে সব কৃষককে জমি ফেরতের দাবি জানিয়েছিল বামেরা ৷ সুপ্রিম কোর্টও সে কথাই বলেছে ৷’ একই সঙ্গে ২০০৬-এর টাটার ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের সাফাই হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাম সরকার শিল্প ও কর্মসংস্থানের চেষ্টা করেছিল ৷ জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছিল ১৮৯৪-র আইন মেনে, ওই আইনে কৃষকদের যথেষ্ট রক্ষাকবচ নেই ৷ আমরা ওই আইন বদলের দাবি তুলেছিলাম ৷ ২০১৩-য় জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নয়া বিল গৃহীত ৷ বিবৃতিতে সিপিআইএম পলিটব্যুরো আরও দাবি করেছে যে, ‘ওই আইনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল সিপিআইএম’৷
advertisement
advertisement
রায় বেরোনোর পর সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ সিদ্ধান্তকে সিপিআইএমের ঐতিহাসিক ভুল বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
বুধবার সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে রায় দেয় সু্প্রিম কোর্ট ৷ বেসরকারি সংস্থার জন্য বাম সরকার সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছে ৷ যথাযথ খোঁজখবর করে জমি নেওয়া হয়নি ৷ জমি অধিগ্রহণের আগে খোঁজ নেওয়া হয়নি ৷ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এভাবে বেসরকারি সংস্থার জন্য অধিগ্রহণ করা যায় না ৷ তারপর থেকেই শুরু বামেদের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ৷
advertisement
সিঙ্গুরে কি সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়েছিল? রায়ের পর প্রশ্ন উঠেছে ৷ চূড়ান্ত পর্বের শুনানিতে ৫টি প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার কোনও গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেনি টাটা মোটরস। জমি অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যও প্রক্রিয়া নিয়ে টাটাদের বক্তব্যও সন্তুষ্ট করতে পারেনি শীর্ষ আদালতকে। শুনানির সেই পর্বেই মামলার গতি অনেকটা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। সেই পথ ধরেই বুধবার এল সিঙ্গুর রায়।
advertisement
সাড়ে ৩ বছর মামলা চলার পর গত মে মাসেই শুরু হয় চূড়ান্ত শুনানি। বিচারপতি গোপাল গৌড়া ও বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই সময়ই বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তোলে?
-বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ৬০০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়
-পরে সিঙ্গুরে ১০০০ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত কীভাবে হল?
advertisement
-কেন বাড়তি ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ল
-জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সেই শর্ত কেন মানা হয়নি?
- কীভাবে এই জমি অধিগ্রহণ জনস্বার্থের আওতায় আসে?
- অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নোটিস দেওয়া হয়নি কেন?
advertisement
সেই শুনানি চলার সময় বিচারপতিদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় টাটাদের আইনজীবীকে। অধিগ্রহণের দায় সম্পুর্ণভাবে তৎকালীন রাজ্য সরকার ও তাদের নোডাল এজেন্সির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন টাটার আইনজীবী। তখনই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, টাটাদের জন্যই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই দায় তারা এড়াতে পারেনা।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনায় উঠে আসা তথ্য,
জমি অধিগ্রহণের আগে জনমত যাচাই এবং সয়েল ও ফিসিবিলিটি টেষ্ট হয়নি
advertisement
আইন মেনে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি
সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ ও অনুর্বর অঞ্চল চিহ্নিত করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে
অথচ সিঙ্গুরের ৩ ফসলি জমিকে কারখানার জন্য বেছে নেওয়া হয়
টাটা মোটরস এটা করতে পারে না
রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করেছিল
টাটা পছন্দমতো জায়গা চেয়ে দরবার করেছিল
এটা কীভাবে অস্বীকার করা যায়?
সিঙ্গুরে জমি ছাড়ার বিনিময়ে টাটাদের ক্ষতিপূরণের দাবিও বিশেষ পাত্তা পায়নি আদালতে। সিঙ্গুরে বিনিয়োগ করতে চেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে টাটাদের। তথ্য দিয়ে তা প্রমাণই করতে পারেনি টাটারা। অধিগ্রহণ পর্বে তৎকালীন বাম সরকারের ভূমিকাও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
September 02, 2016 7:47 PM IST