কাজে গড়িমসি! পুর আধিকারিকদের উপরে বেজায় রেগে ফিরহাদ, শো-কজের হুঁশিয়ারি
- Published by:Satabdi Adhikary
- Written by:BISWAJIT SAHA
Last Updated:
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি জলাশয় ট্যাগ হয়ে গেলে পুকুর সংস্কার বা পুকুর বোজানোর মতো অভিযোগ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন মেয়র। পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও রকম গাফিলতি বা গড়িমসি বরদাস্ত করা যাবে না বলেও এদিন জানিয়ে দেন ফিরহাদ।
#কলকাতা: পুরসভার আধিকারিকদের উপরে চরম ক্ষুব্ধ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শহরের জলাশয়ের জিআই ট্যাগিং-এর কাজে গড়িমসির অভিযোগ। মেয়রের নির্দেশের পরেও কেন ধীরগতিতে কাজ পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের? এবার সরাসরি বিভাগের আধিকারিকদের শোকজ করার হুঁশিয়ারি মেয়রের।
জলাশয়ের সংস্কার করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। এদিন 'টক টু মেয়রে' এমনই অভিযোগ করেন কলকাতা পুরসভার ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মেয়র।
বছরের শেষ টক টু মেয়র প্রোগ্রামে শেষ প্রশ্ন করেছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক জোকার বাসিন্দা। কলকাতা পুরসভার ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পুকুর সংস্কার নিয়ে তাঁর অভিযোগ ছিল। সেখানেই কলকাতা পুরসভার কাজ নিয়ে তিনি যেমন প্রশ্ন করেন, তেমনই কাউন্সিলর ও শাসকদলের লোকজন তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলেও মেয়রের কাছে নালিশ করেন ওই ব্যক্তি।
advertisement
advertisement
দেখে নিন, সেই জনৈক নাগরিক ও মেয়রের এদিনের কথাবার্তার কিছু অংশ-
জনৈক শহরবাসী: আমি আপনাকে নাম ঠিকানা না জানিয়ে কিছু কমপ্লেন করতে চাই। আপনাকে একটা সমস্যা নিয়ে আগেও দুবার জানানো হয়েছিল। আমার কাছে ডকেট নাম্বারও আছে। আপনার লোক আসে, ও ৮১১ প্রেমিসেস একটা জলাশয়টা দেখে চলে যায়। আপনার অফিসাররা দায়বদ্ধতার কাজ করে? নাকি দায়সারা কাজ করে। এটা জানতে চাইছিলাম। আরও একটা ৮৪৭ নাম্বার প্রেমিসেস জলাশয়, সেখানে ৮০ লক্ষ টাকা কাজ করেছিল পুরসভা। আপনি জলে নামতে পারবেন না। রাস্তার পাড় রয়েছে, কিন্তু ভেঙে গিয়েছে। পি কে দুয়া সাহেবকে আপনি পাঠিয়েছিলেন চার মাস আগে। উনি বলেছিলেন আমরা আলোচনা করে দেখব, এটা কী ভাবে রেকটিফাই করা যায়। স্যর কিছুই জানতে পারলাম না। ওটা জলের দিকে বসে যাচ্ছে। স্যার তাহলে কি কর্পোরেশন দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে পারে না?
advertisement
জনৈক নাগরিকের অভিযোগ শোনার পর মেয়রের সঙ্গে আধিকারিকের কথোপকথন।
মেয়র: একটু সময় দিন করে দেব।
জনৈক শহরবাসী: স্যর এটা ২০১৬ সালের টেন্ডার হয়েছিল। ১৭ সালে কাজ করেছিল। ৫ বছর সময় নিয়েছিল। আপনি আরও সময় চাইছেন, সময় নিন।
মেয়র: আপনাকে কে বলল এটা ৮০ লাখ টাকার কাজ?
জনৈক শহরবাসী: আমার কাছে কপি আছে। ২০১৬ সালে পিসিবি আপনাদের ১৪ কোটি টাকা দিয়েছিল। তার মধ্যে এই জলাশয়টার সংস্কারের জন্যেও টাকা অনুমোদন হয়েছিল। কাজ হয়েছিল ইন-কমপ্লিট। আপনাকে আগেও জানিয়েছি এখানে কাজ ঠিক হচ্ছে না।
advertisement
জনৈক শহরবাসী: ২০১৭র নভেম্বরের শুরু হয়েছিল। ২০১৮ মার্চের শেষ হয়েছিল। ২০১৬ সালে পিসিবি টাকাটা দিয়েছিল। তারপর আবার ৩২ লক্ষ টাকার কাজ হল।
মেয়র: ঠিকই বলেছে।
জনৈক শহরবাসী: নামতে পারবেন না। হাঁটু পর্যন্ত পাক। আপনার দলের নেতারা দলের কর্মীরা আমাকে হুমকি দিয়েছে পি কে দুয়ার সামনেই। কেন মেয়র কে কমপ্লেন করেছ? আমাদের কাউন্সিলরের বদনাম হচ্ছে। আমি যেন কমপ্লেন না করি আপনার কাছে। আপনাদের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলেছে।
advertisement
মেয়র: যে কেউ কমপ্লেন করতে পারেন আমার কাছে। সেই জন্যেই আমরা এই প্রোগ্রামটা করছি।
জনৈক শহরবাসী: আপনাদের দলের নেতা কর্মীরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
মেয়র: ওসব বেকার কথা। হুমকি যে দেবে তার নামে থানায় ডায়েরি করবেন।
advertisement
জনৈক শহরবাসী: আমি আপনার এগেনস্টে ডায়েরি করলে আপনাকে ধরবে না, উল্টে আপনি বললে আমাকে ধরে নিয়ে চলে যাবে।
মেয়র: না, কেউ ধরবে না।
জনৈক শহরবাসী: পিকে দুয়া সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন।
মেয়র: দুয়া সাহেব বসে আছেন আমার সামনে।
জনৈক শহরবাসী: ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন দশটা ছেলে আমাকে কী গালাগালি দিয়েছে!
মেয়র: গালাগালি দেবে কেন? পুকুর পরিষ্কার করা নিয়ে!
advertisement
জনৈক শহরবাসী: দিয়েছে; আপনি জিজ্ঞাসা করুন। ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন কারা গালাগালি দিয়েছে। আমি নাম ঠিকানা বলব, যদি উনি না বলতে পারেন।
আধিকারিক: স্যর ওখানে আপনিও ইনস্পেকশনে গিয়েছিলেন।
মেয়র: এটা আমি নয়, আমি আসার আগের কথা বলছে। ২০১৭ সালের কথা বলছে।
জনৈক শহরবাসী: না স্যর! চার মাস আগে পি কে দুয়া সাহেব এসেছিলেন আপনি পাঠিয়েছিলেন।
আধিকারিক: স্যর কন্ট্রাকটার হাফ কাজ করে চলে যায়।
মেয়র: কন্ট্রাকটার কি ব্ল্যাকলিস্টেড হয়েছে? যে শাল-বললা পাইলিং হয়েছে, তা যখন ঠিক মতো হয়নি; পাড় বসে যাচ্ছে; তখন কি কন্ট্রাকটারকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছে? আপনি কি পাইলিং করলেন, যে মাটি বসে গেল! তাহলে তো আপনারা কন্ট্রাকটারকে ব্ল্যাকলিস্টেড করবেন। নয়তো শোকজ দেবেন তো। গভর্নমেন্টের টাকা।
আধিকারিক: দেখে নিচ্ছি স্যর।
জনৈক শহরবাসী: পরিষ্কার হবে তো স্যর।
মেয়র: হবে, আমরা দেখে নিচ্ছি। টেন্ডার হয়ে গেছে। একটা কাজ করুন, এনভায়রনমেন্ট-এর দিক থেকে আপনি খুব একটিভ এটা ভাল। পাড়ায় পাড়ায় একটা কমিটি তৈরি করুন। যারা নোংরা করছে যাতে নোংরা গুলো ফেলা বন্ধ করতে পারে।
জনৈক শহরবাসী: রাজিব দাস কাউন্সিলর আমাকে খুব ভাল চেনে, আমি এই কাজ করি বলে। কিন্তু আমার কোনও কথা বা আমরা যদি কিছু বলতে যাই, তিনি শোনেন না।
মেয়র: পুকুর নিয়ে বলতেই হবে, কারণ আজকে আমরা মরে যাব আমাদের পরের জেনারেশন পুকুর নিয়ে বেঁচে থাকবে। নয়ত, গ্যাসচেম্বার হয়ে সবাই মিলে মৃত্যুবরণ করবে।
জনৈক শহরবাসী: স্যর আপনি বলছেন, ভাল লাগছে। এটা আমাদের কাউন্সিলর আমাদের ডেকে যদি বলত, তাহলে আরও ভাল হতো।
মেয়র: বলবে, আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। আমি নিজে যাব ইনস্পেকশনে।
এরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুরসভার নিজের আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ক্ষোভপ্রকাশ করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি জলাশয় ট্যাগ হয়ে গেলে পুকুর সংস্কার বা পুকুর বোজানোর মতো অভিযোগ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন মেয়র। পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও রকম গাফিলতি বা গড়িমসি বরদাস্ত করা যাবে না বলেও এদিন জানিয়ে দেন ফিরহাদ।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 30, 2022 9:14 PM IST