#কলকাতা: সোজা বাংলায় যাকে বলে মধুরেণ সমাপয়েৎ, কলকাতায় শনিবার সারাদিনের সুভাষ স্মরণের অনুষ্ঠান ঠিক তেমনটা হল না। বরং সুর তাল লয়ের অসামঞ্জস্য একদিকে যেমন বুঝিয়ে দিল ভোট আসছে, তেমনই দেখা গেল, মোদি ম্যাজিক কলকাতাতেও কার্যকর।
নেতাজি ভবনের সামনে মোদি নামতেই বিপুল কলরব, অথবা ভিক্টোরিয়ায় তিনি বক্তৃতা দিতে উঠতেই বিপুল উচ্ছ্বাস তৃণমূলকে অস্বস্তিতেই ফেলল। ঘাম ছুটল কলকাতা পুলিশেরও।
আম আদমির মতোই ১০ টাকায় টিকিট কেটে নেতাজি ভবনে ঢুকলেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে সংগ্রহশালা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন তৃণমূলেরই প্রাক্তণ সাংসদ সাংসদ সুগত বসু।
সুগত বসু ও তাঁর মা কৃষ্ণা বসু দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল সমর্থক। কাজেই সুগত বসুর মোদি সান্নিধ্য স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। সূত্রের খবর, মোদিকে গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি নেতাজি ভবনের দোতালার গ্যালারিও দেখতে অনুরোধ করেন সুগত বসু।
সময়ের টানাটানি, ফলে দ্রুত সেখান থেকে মোদি পৌঁছে যান ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিশেষ অনুষ্ঠানে। সাধারণত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিতে কোভিডের কারণেই এখন খুব বেশি ভিড় হয় না। কিন্তু মোদির ভিক্টোরিয়ায় পদার্পণের দিনে তেমনটা হল না। রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠান স্থলে এলেন রাজ্যের শিল্প সংস্কৃতি-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নামী দামী ব্যক্তিত্বরাও। প্রশ্ন এসবই কি মোদি ম্যাজিকের ইঙ্গিত?
সকলের আসনগ্রহণ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়ায় সবই ঠিক ছিল। তালটা কাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বক্তা হিসেবে ঘোষিত হতেই। দর্শকাসন থেকে একদল বিজেপি সমর্থক জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে ওঠেন।মমতা এর প্রতিবাদেই সিদ্ধান্ত নেন এই অনুষ্ঠানে কিছু বলবেন না। তিনি বলেন, "সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। এটা সকল মানুষের, সব রাজনৈতিক দলের সকলের অনুষ্ঠান। আমি প্রধানমন্ত্রীজি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে কৃতজ্ঞ অনুষ্ঠানটি কলকাতায় আয়োজন করার জন্য। কিন্তু কাউকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করে তারপর অপমান করা উচিৎ নয়। এর প্রতিবাদে আমি আর কোনও কিছু এখানে বলব না। জয় হিন্দ, জয় বাংলা।'
মমতার ক্ষোভ থেকেই প্রশ্ন ওঠে, মোদি কি এর জবাব দেবেন? মোদি কোনও ভাবেই সেই রাস্তায় পা বাড়ালেন না। শ্রদ্ধা জানালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চা-পানও করলেন তিনি। প্রায় ১৫ মিনিট একান্তে কথাবার্তা হল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, মোদি অনুষ্ঠানের সুরটিকে রাজনীতি থেকে দূরেই রাখতে চাইছেন। চাইছেন দেশপ্রেম ও দেশপ্রেমিক নেতাজিকেই সামনে রাখতে।
শনিবার নরেন্দ্র মোদিকে রেসকোর্সের হেলিপ্যাডে আনতে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানেও মোদির তরফে সৌজন্যের কোনও কমতি ছিল না। মোদি বুঝিয়ে দিলেন এবারের কলকাতা সফর কোনও ভাবেই রাজনৈতিক নয়।
পরিশেষে উল্লেখ থাক, কলকাতায় যখন নেতাজিকে নিয়ে দিনভর সরগরম, তাঁর বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না রাহুল গান্ধি-প্রিয়াঙ্কা গান্ধিরা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।