কলকাতায় এই প্রথম, সাতপাকে বাঁধা পড়লেন লিঙ্গান্তরিত জুটি তিস্তা-দীপন

Last Updated:
#কলকাতা: ২০১৪-র ২৪ নভেম্বর ৷ এখন হয়তো সেই তারিখটার আর তেমন করে কোনও গুরুত্ব নেই ৷ তবে এইে দিনটিই হয়তো একটা ইতিহাস তৈরি করতে পারত ৷ ইতিহাস না তৈরি করুক, নিদেনপক্ষে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেই পারত ৷ না সেদিন এই রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি ৷ কিন্তু হওয়ার কথা ছিল ৷ পরিবারের সম্মতিতেই বাড়ির একমাত্র ছেলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সৌমাকান্তি গুপ্তর সঙ্গে ওই তারিখটিতেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাঁর বছর তিনেকের পুরনো প্রেমিকা তিস্তার। লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়, পুরোহিত ডেকে, আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে, খাইয়ে, সামাজিক মতে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ৷ অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া নেওয়া, বেনারসী কেনার কাজ সবই হয়েছিল সারা ৷ আসলে প্রেমিকার সঙ্গে বিয়েতে তোড়জোর ছিল চরমে ৷
68469457_10212453678211925_7935859047603896320_n
২০১১ সালে নন্দনে বন্ধুদের এক আড্ডায় তিস্তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সৌম্যকান্তির সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রেম। খুব ইচ্ছে করত সৌম্যকে বিয়ে করতে, কিন্তু পিছিয়ে আসতেন। কোনও ভাবে তাঁর জন্য সৌম্য সামাজিক চাপের মুখে পড়েন, তাঁর পরিবারের মাথা হেঁট হয়, চাইতেন না। প্রথমে কিন্তু সৌম্যকান্তি তাঁর প্রেমিকা তিস্তাকে অর্থাৎ আগরপাড়া নিবাসী তিস্তা দাসকে মেয়ে হিসেবেই জানতেন ৷ শুরু হল প্রেম ৷ তবে সামনের মানুষটি, যাঁর সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন দু’চোখ জুড়ে, তাঁকে ঠকাতে চাননি তিস্তা ৷ সম্পর্ক শুরু হওয়ার মাস তিনেক পরেই নিজের অতীতকে সৌম্যকান্তির সামনে মেলে ধরেছিলেন ৷ প্রথমটায় একটু ধাক্কা খেলেও পিছু হঠেননি সৌম্যকান্তি ৷ তবে ঝড় সত্যিই উঠেছিল। সৌম্যকান্তি বাবা-মাকে তিস্তার আসল পরিচয় বলার পরে কিছুদিনের জন্য ধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল গুপ্ত পরিবার। তাঁর মা সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছিলেন। সেই সময় প্রায় প্রতিদিন হবু শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে যেতেন তিস্তা। বোঝাতেন। ধীরে-ধীরে ওঁদের সম্পর্কের উষ্ণতা অনুভব করতে পেরেছিলেন গুপ্ত পরিবারের সদস্যেরা। তবে তিস্তার সেই ইচ্ছে পূর্ণতা পায়নি সেবার ৷ এত আয়োজন এত আনন্দ সবই ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়েছিল সে সময় ৷ একরাশ অবসাদ ঢেকে নিয়েছিল মনটাকে ৷ কিন্তু কেন এত যন্ত্রণা? কেন এত অবজ্ঞা? আসলে তিস্তার অতীতটাই যেন অন্তরায় হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে কারও কাছে ৷ আর হয়তো সেই কারণে সেদিনের বিয়ে ভেঙে যাওয়া ৷
advertisement
advertisement
আজ ২০১৯-এর ৫ অগস্ট ৷ সকালে দধিমঙ্গল থেকে নান্দীমুখ হয়ে গিয়েছে নিয়ম করে ৷ আগেই দু’হাত রেঙেছে সোহাগী মেহেন্দিতে ৷ কনের সাজে সেজে ওঠা ৷ নিখুঁত শ্বেতচন্দন ৷ হাতে শাঁখা-পলা ৷ সবটাই হয়েছে নিখুঁতভাবে ৷ ছাদনাতলায় মোহময়ী তিস্তা ৷ কয়েকবছর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এমনই এক স্বপ্নালু দিনের কথাই তো ভেবেছিলেন তিনি ৷ আজ সেইদিন ৷ চারহাত এক হওয়ার দিন ৷ স্বামীর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়ার দিন ৷ কিন্তু এই পথটা তো সহজ ছিল না ৷ এই পথের প্রতি মুহূর্তে ছিল বাধা ৷ তবে বরাবরই সাহসী তিস্তা ৷
advertisement
আজ তিনি সম্পূ্র্ণ নারী ৷ তবে প্রথমটায় জন্মেছিলেন ছেলের শরীর নিয়ে ৷ তবে, অনিচ্ছার শরীরের খোলস কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না সুশান্ত দাস (তিস্তার ছেলেবেলার পরিচয়)। সে বছরেই মাধ্যমিক। কিছুদিন ধরেই যেন প্রতিবাদের একটা পথ খুঁজছিল শরীরের প্রত্যেকটা অনুভূতি।
একদিন সাহসটা দেখিয়েই ফেললেন। প্রিয় বান্ধবীর স্কুল ড্রেস পরে তিনি হেঁটে গিয়েছিলেন স্কুলের করিডর ধরে। তাঁর সেদিন সেই আচরণের অব্যক্ত ঘোষণা ছিল, জন্মসূত্রে পাওয়া পুরুষ-শরীর তাঁর নয়। তাঁর নারী-মন উপযুক্ত আধার চাইছে। তাই আজ ‘নারীদিবসে’র আলাদা কোনও তাৎপর্য খুঁজে পান না সুশান্ত ওরফে তিস্তা দাস। তিস্তা বলেন, ‘‘আমার কাছে প্রতিটি দিনই নারীদিবস। আলাদা করে উদ্‌যাপন করব কেন?’’ তবে তাঁর জীবনের কোনও একটা দিনকে যদি নারীদিবসের স্বীকৃতি দিতে হয়, সেক্ষেত্রে তিনি বান্ধবীর ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়ার দিনটাকেই বেছে নেবেন। তিস্তা জানান, বাড়িতে তিনি জানিয়েছিলেন নিজেকে মেয়ে মনে করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই তাঁকে তাঁর পরিবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তিস্তার মনে পড়ে, বান্ধবীর ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়ার পর বেশ হইচই হয়েছিল। তাঁর বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তার জেরে পরিবারের সঙ্গে তীব্র বিরোধের পর অবশেষে আশ্রয় নিতে হয়েছিল বান্ধবীর বাড়িতে। তবে তাঁর অদম্য জেদের কাছে সব কিছু শেষ পর্যন্ত হার মেনেছে ৷ এখন তিনি সম্পূর্ণ নারী ৷ সমাজ বলে রূপান্তরিত মহিলা ৷ কিন্তু তিস্তা স্বচ্ছন্দ্য তাঁর নারীত্বের পরিচয়েই ৷
advertisement
২০১৪ সালে তিস্তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির পর প্রায় সমস্ত আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি ৷ কবি, বুটিক শিল্পী, সমাজসেবিকা, অভিনেত্রী তিস্তা সংসার বাঁধার সব আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন ৷ আর সেখনেই ঘটল ট্যুইস্ট ৷ বছর তিনেক আগে তিস্তার সঙ্গে বেশ নাটকীয়ভাবে তিস্তার সঙ্গে পরিচয় অসমের লামডিংয়ে বেড়ে ওঠা দীপন চক্রবর্তীর৷ আগরপাড়ায় লিঙ্গান্তর সংক্রান্ত মুশকিল আসান সংস্থা চালান তিস্তারা। সেখানেই দেখা দু’জনের। আগেকার দীপান্বিতার জীবন নিয়ে অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন দীপন ৷ নারী-শরীরে পুরুষ সত্তা মুক্তির পথ খুঁজছিল দীর্ঘদিন ধরে। দীপান্বিতা থেকে দীপন হয়ে ওঠার খুশিতে তখন তিনি ডগমগ ৷ কিন্তু তিনিও তখন নোংর ফেলতে চাইছেন ৷ অস্ত্রোপচারের পরে কলকাতায় ওষুধ সংস্থায় কাজ করছিলেন দীপন। গত সরস্বতী পুজোতেও তিস্তাকে কথাটা বলতে না-পেরে হৃদয়ে রক্ত ঝরছিল তাঁর।
advertisement
যৌন ঝোঁক অনুযায়ী দীপন এবং তিস্তা দু’জনেই যথাক্রমে জন্মগত নারী এবং পুরুষ লিঙ্গের প্রতি অনুরক্ত। তবু সব ব্যাকরণ ভেঙেচুরে গেল। সরস্বতী পুজোয় না-হোক, গত দোলে তিস্তার এক বান্ধবীর ভরসায় কথাটা বলেই ফেললেন দীপন। ‘আবার একটা সম্পর্ক...’ তখন দ্বিধাদীর্ণ তিস্তাও। অবশেষে চার হাত এক হয়ে গেল তিস্তা-দীপনের ৷ এক্কেবারে খাঁটি হিন্দু রীতি নীতি মেনেই ৷ আটপৌরে বাঙালি বিয়ে যেমন ভাবে হয় ঠিক তেমনটাই। বিয়ের আগে কেনাকাটা থেকে শুরু করে আইবুড়ো ভাত। এর পর নান্দীমুখ, জল সইতে যাওয়া, গায়ে হলুদ— সবই হল নিময় মেনেই। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় ‘যদিদ‌ং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম’ মন্ত্রে ভরে উঠেছিল গোটা বিবাহ বাসর। পাত পেড়ে হল খাওয়া-দাওয়া ৷ ৭ অগস্ট হবে বউভাতের অনুষ্ঠান ৷ কলকাতায় এই প্রথম রূপান্তরিত এক জুটি বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়লেন ৷ শহরবাসীর শুভেচ্ছায় ভাসলেন তিস্তা-দীপন ৷
Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷  News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে  ক্লিক করুন এখানে ৷ 
view comments
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
কলকাতায় এই প্রথম, সাতপাকে বাঁধা পড়লেন লিঙ্গান্তরিত জুটি তিস্তা-দীপন
Next Article
advertisement
MGNREGA: মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! কোটি কোটি কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে আঘাত, কেন্দ্রের নয়া ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
  • মনরেগা প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব সোনিয়া গান্ধি

  • কংগ্রেসে নেত্রীর দাবি, মনরেগা প্রকল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিল বিজেপি

  • প্রকল্পকে বদলের আইনকে ‘কালো আইন (ব্ল্যাক ল)’ বলে উল্লেখ্য সোনিয়ার৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement