Dr Dilip Mahalanabis: প্রচারের আলো থেকে আলোকবর্ষ দূরে থেকেই জীবন কেটেছে ওআরএস পথপ্রদর্শকের

Last Updated:

Dr Dilip Mahalanabis: প্রচারের পথে যাননি এই নিরলস চিকিৎসক৷ যত দিন পেরেছেন, কাজ করে গিয়েছেন নিভৃতে, নিরলসভাবে৷

ডক্টর দিলীপ মহলানবিশ
ডক্টর দিলীপ মহলানবিশ
কলকাতা : ৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের তিনিও ছিলেন এক সৈনিক। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে শত্রুনিধন নয়। তিনি লড়ছিলেন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে তখন শরণার্থী শিবিরে অগণিত আশ্রিত আক্রান্ত কলেরা বা ডায়রিয়ায়। এমনই অবস্থা, বিষ্ঠায় ঢেকে যাচ্ছে পায়ের জুতো। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিলেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ৷ ২৮ জুন থেকে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত তাঁর অক্লান্ত সংগ্রাম চলেছিল বমি ও বিষ্ঠায় মাখামাখি হয়ে থাকা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে৷
তবে তাঁর সেই সংগ্রামের থেকেও অনেক বেশি কঠিন ছিল মৃতসঞ্জীবনী ওআরএস-এর জন্য মান্যতা আদায় করা৷ তখনও পেটের রোগের চিকিৎসায় ওআরএস স্বীকৃত নয় বিশ্বে৷ তখনও রিহাইড্রেশন বা জলশূন্য শরীরে ফ্লুইডের যোগান দেওয়ার জন্য ভরসা করা হত ইন্ট্রাভেনাস বা সূচবিদ্ধ করে স্যালাইন দেওয়ার উপরই৷ কিন্তু বনগাঁর ক্যাম্পে অগণিত রোগীর জন্য অত স্যালাইনের যোগান কোথা থেকে পাওয়া যাবে! রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসক মহলানবিশ ঠিক করলেন ওরাল ফ্লুইড দেবেন৷ সরকারি চিকিৎসক দলের আপত্তি অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে তিনি ওরাল সল্যুশন প্রয়োগ করেন৷ জলের সঙ্গে নুন, চিনি ও বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করানো হল রোগীদের৷ কাজ হল৷ চোখ খুললেন মুমূর্ষুরা৷ এত রোগীর উপর একসঙ্গে ওরআরএস-এর সফল প্রয়োগ সেটাই প্রথম বার৷
advertisement
১৯৫৮ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করা দিলীপের ইন্টার্নশিপ শুরু সেখানেই, শিশু বিভাগে৷ এর পর তাঁর দীর্ঘ অধ্যয়ন ও কর্মজীবন কেটেছে ইংল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশে৷ লন্ডনে ডিসিএইচ, এডিনবরা থেকে এমআরসিপি করার পর মাত্র আটাশ বছর বয়সে কুইন এলিজ়াবেথ হসপিটাল ফর চিল্ড্রেন-এ রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন৷ প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনিই এই পদে কাজ করেন৷ এর পর দেশে বিদেশে কেটে তাঁর চিকিৎসক অধ্যায়ের নানা পর্ব৷ যুক্ত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর সঙ্গেও৷ সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৪ সালে৷
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন :  ঘোষিত এ বছরের পদ্মসম্মান, তালিকায় ওআরএস-এর পথপ্রদর্শক প্রয়াত চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ-সহ একাধিক কৃতী বাঙালি
জীবনের শেষ তিন দশক তাঁর কেটেছে কলকাতাতেই৷ কিন্তু আলোকবর্ষ দূরে থাকতেন প্রচারের আলো থেকে৷ সল্টেলেকে তাঁর বাড়িতে তৈরি করেছিলেন ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ’৷ চেয়েছিলেন ডাক্তারি উত্তীর্ণদের হাতকলমে কাজ শেখাতে৷ কিন্তু বর্ষীয়ান চিকিৎসকের আক্ষেপ ছিল সরকারি সাহায্য এবং পড়ুয়া-এই দু’য়ের অভাবে তাঁর প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি, পায়নি গ্রহণযোগ্যতাও৷ তার জন্য প্রচারের পথে যাননি এই নিরলস চিকিৎসক৷ যত দিন পেরেছেন, কাজ করে গিয়েছেন নিভৃতে, নিরলসভাবে৷
advertisement
স্ত্রী বিয়োগের অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে৷ এমনকি, গত বছর অক্টোবরে তাঁর অসুস্থতার খবরও প্রকাশ্যে এসেছে অনেক দেরিতে৷ সদ্য শারদোৎসব কাটিয়ে ওঠা কলকাতায় জীবনের মঞ্চ থেকে নীরবেই বিদায় নেন প্রচারবিমুখ ওরআরএস জনক৷ কলেরা, ডায়রিয়ার মতো ভয়ঙ্কর পেটের অসুখেও যে প্রাণদায়ী হয়ে উঠতে পারেন নুন চিনি জলের মতো সামান্য উপকরণ, সেই ধারণার পথ প্রদর্শকের নামই অধিকাংশ বাঙালি তথা ভারতীয় জানতেন না তাঁর প্রয়াণের আগে৷ এ বার তাঁর নাম মনোনীত হল মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ তালিকায়৷ সেই সম্মানের জন্যও তাঁকে অপেক্ষা করতে হল আমৃত্যু৷
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
Dr Dilip Mahalanabis: প্রচারের আলো থেকে আলোকবর্ষ দূরে থেকেই জীবন কেটেছে ওআরএস পথপ্রদর্শকের
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement