#কলকাতা: কলকাতা পুরভোটে (KMC Elections 2021) দল খুব একটা ভাল কিছু করবে, এমন আশা বিজেপি-র অতি বড় সমর্থকও হয়তো করেনি৷ কিন্তু কলকাতার পাঁচ আসনেও পদ্মফুল ফুটবে না, এতটাও খারাপ ফল হয়তো কল্পনা করেননি রাজ্য বিজেপি নেতারা৷ কিন্তু ফল যে খারাপ হবে, সেই জন্য ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতই ছিল দলের রাজ্য নেতৃত্ব৷ পুরভোট নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র (BJP) কী প্রত্যাশা ছিল, তা ফল প্রকাশের পর দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছোট্ট প্রতিক্রিয়াতেই পরিষ্কার৷ রাখঢাক না করেই দিলীপ বলেছেন, 'যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে৷'
শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, গায়ের জোরে ভোট করানোর অভিযোগ, এই বিপর্যয়ের পিছনে নিজেদেরই একাধিক গলদ দেখছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা৷ বিপর্যয়ের প্রথম এবং প্রধান কারণ হিসেবে রাজনীতির ময়দানে না থেকে আদালতের উপরে অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়াকেই দায়ী করছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ৷
আরও পড়ুন: ২০১৫-র পুনরাবৃত্তি, ভোটে জিতেই তৃণমূলের পথে তিন নির্দল
পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যত আইনি লড়াইয়ে নেমে পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব৷ কখনও একসঙ্গে সব পুরসভায় ভোটের দাবি, কখনও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে দরবার করেছে বিজেপি৷ দলের নেতাদেরই একাংশ মনে করছেন, আসলে মাঠে ময়দানে নেমে রাজনৈতিক লড়াই করে ভোটে তৃণমূলের মোকাবিলা করার বদলে আদালতের রায়ের উপরেই বেশি ভরসা করেছেন দলের নেতারা৷ আর নিচু স্তরের কর্মীরাও আদালতের রায়ের অপেক্ষায় বসে থেকেছেন৷
আরও পড়ুন: সব বরোতেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল, খড়কুটোর মতো উড়ে গেল বিরোধীরা!
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশই স্বীকার করে নিয়েছেন, আসলে পুরভোটের জন্য এখন প্রস্তুতই ছিল না দল৷ আর সেই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে যেন তেন প্রকারে ভোট আটকানো বা পিছিয়ে দেওয়াই ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য৷ অথচ প্রাক ২০১৯ পর্বে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে নেমে লাগাতার আন্দোলন করেই মমতা বা তৃণমূল বিরোধী ভোটারদের আস্থা অর্জন করেছিল গেরুয়া শিবির৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এ বার রাজনৈতিক লড়াই থেকে সরে গিয়ে বিজেপি আইন আদালতে লড়াইয়ে যেভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা দেখে সেই ভোটাররাও আর সম্ভবত তৃণমূলের বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি-র উপরে আস্থা রাখতে পারেননি৷
বিধানসভা নির্বাচনের পরে তাড়াহুড়ো করে রাজ্য বিজেপি-র সংগঠনে যে সমস্ত রদবদল করা হয়েছিল, তাকেও ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করছেন দলের নেতারাই৷ বিধানসভা ভোটের পরই মেয়াদ ফুরনোর আগে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জায়গায় নিয়ে আসা হয় সুকান্ত মজুমদারকে৷ আরও বেশ কিছু রদবদলও করা হয়৷ দলেরই একাংশের অভিযোগ, সংগঠনের রদবদল করতে গিয়ে গোটা বিষয়টাই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব৷ পরিস্থিতি এমনই যে দলের রাজ্য কমিটিতে কারা থাকবেন, তা এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি৷
আরও পড়ুন: আপনিই কি ফের মেয়র? কলকাতার সবুজ ঝড়ের মাঝেই মুখ খুললেন ফিরহাদ হাকিম! তুঙ্গে জল্পনা
ভোটের আগে কলকাতা পুরসভার ষোলটি বরোর দায়িত্ব ১৬ জন বিধায়ককে দিয়েছিল বিজেপি৷ অথচ তাঁরা কেউই কলকাতার বিধায়ক নন৷ ফলে যে এলাকার দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয়েছিল, সেখানকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাই ছিল না ওই নেতাদের৷ সংগঠনের হালও এতটাই খারাপ যে ষাট শতাংশ ওয়ার্ডে ঠিক মতো প্রচারই করতে পারেননি দলের রাজ্য স্তরের নেতারা৷ এমন কি, লোক না হওয়ায় খোদ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সভাও বাতিল করে দিতে হয়েছে৷
ফলে, ভোটের আগে মুখে বিজেপি নেতারা যতই বলুন আদালত এবং রাজনৈতিক ময়দানে তাঁরা সমান্তরাল ভাবে লড়ছেন, বাস্তবে যে তা হয়নি তা নির্বাচনের আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ এমন কি, তারকা প্রচারকদের নাম প্রকাশ করা হলেও প্রচারের শেষ দিনে কলকাতা পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে হাজির করানো হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-কে৷ দলের ইস্তেহারেও কোনও অস্পষ্ট, দিশাহীন ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে দলেরই অন্দরে৷ আর এসব কিছু দেখে দেওয়াল লিখনটা পড়ে ফেলেছিলেন অনেকেই৷ ফলে বিজেপি-র ফলে রাজ্য বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত নেতা, কর্মীরাই অবাক নন৷
কলকাতা পুরভোটের ফল বেরনোর পরেই যথারীতি ব্যর্থতার কারণ নিয়ে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। দলের সেই অন্তর্তদন্তে এখনও সিলমোহর না পড়লেও চর্চা থেমে থাকছে না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: BJP, KMC Elections 2021, Kolkata Municipal Corporation Elections 2021