সস্তায় পেট ভরা খাবার, গরিবের মন জয়ে জয়ললিতা মডেলেই আস্থা মমতার

Last Updated:

শুরু হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা প্রকল্প। যার অধীনে মাত্র ৫ টাকায় ভাত, ডাল, তরকারি এবং ডিমের ঝোল সরবরাহ করা হবে

#কলকাতা: শুরু হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মায়ের হেঁশেল (Maa Scheme)। এই প্রকল্পে মাত্র পাঁচ টাকায় ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি, ডিমের ঝোল দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে৷ এ দিন নবান্ন থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনেকেই বলছেন যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সহ বিরোধীদের টেক্কা দিতেই সস্তায় পেট ভরা খাবারের ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর। যদিও এই রকম সরকারি হেঁশেল দেশে প্রথম নয়, বরং নানা প্রান্তেই এর আগে তা সফল ভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এবং চলছেও৷ এবং তার পিছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে৷
সেভাবে দেখতে গেলে এই রকম কমিউনিটি কিচেনের সঙ্গে সবার আগে নাম উঠে আসে মহাত্মা গাঁধির (Mohandas Karamchand Gandhi)। তিনি যখন শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন, তখন সেখানকার একটি বিষয় না কি তাঁকে হতাশ করেছিল বলে জানা যায়। বিশ্বভারতীর ছাত্রদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে স্বপাকরন্ধনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। বলা হয়, এই মর্মে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) সঙ্গে কথা বলে মহাত্মা গাঁধি ১৯১৫ সালের ১০ মার্চ একটি কমিউনিটি কিচেন বাস্তবায়িত করেছিলেন, যেখানে ছাত্ররা নিজেরা রাঁধবে, খাদ্য ভাগ করে নেবে দরিদ্র মানুষের সঙ্গেও।
advertisement
তবে যদি দেশের রাজনৈতিক কৌশলগত ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়, তবে নাম নিতে হয় নির্বাচনী উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor)। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, যখনই যেখানে গিয়েছেন তিনি, রাজ্য সরকারকে এই রকম হেঁশেল প্রতিষ্ঠার পরামর্শ তিনি দিয়েছিলেন বলেই খবর। ২০১৭ সালে তিনি যখন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির জোটের হয়ে নির্বাচনী কৌশল স্থির করেছিলেন, তখনও উঠে এসেছিল কমিউনিটি কিচেন তৈরির কথা। সেই সময়ের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav) এই মর্মে ঘোষণাও করেছিলেন যে তাঁদের জোট জিতলে রাজ্যে সমাজবাদী কিচেন (Samajwadi Kitchen) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
advertisement
advertisement
পথিকৃৎ যখন জয়ললিতা
২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ হেন সরকারি রান্নাঘরের উদ্যোগ প্রথম বাস্তবায়িত হয়েছিল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়লিতার (J. Jayalalithaa) হাতে৷ যার নাম ছিল আম্মা উনাবাগম (Amma Unavagam) বা আম্মা ক্যান্টিন। সেই সময়ে পুরসভা পরিচালিত এই ক্যান্টিনে ১ টাকায় ইডলি, ৫ টাকায় সম্বর আর ভাত, ৩ টাকায় দই আর ভাত পাওয়া যেত। জয়ললিতার দেখাদেখি পরবর্তীকালে কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, ওড়িশা সরকারও এই পদক্ষেপ করে।
advertisement
কর্ণাটকের ইন্দিরা ক্যান্টিন
২০১৭ সালের ১৬ অগস্ট কর্ণাটতেক তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (Siddaramaiah) তিন বেলা ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপন করেন ইন্দিরা ক্যান্টিন (Indira Canteen)। এটির উদ্বোধন করেছিলেন রাহুল গাঁধি(Rahul Gandhi)। পরে মাইসুরু, ম্যাঙ্গালোর, সিমোগা, হুবলি আর কারবুর্গিতেও এমন কমিউনিটি কিচেন স্থাপিত হয়।
মহারাষ্ট্রের শিবভোজন
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রে কমিউনিটি কিচেন স্থাপিত হয় শিবভোজন (Shiv Bhojan) নামে। ১০ টাকায় এখানে দেওয়া হত দু'টি রুটি, ভাত, ডাল আর একটি তরকারি। পরে লকডাউনের সময়ে দাম কমিয়ে ৫ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
advertisement
তেলঙ্গানার অন্নপূর্ণা প্রকল্প
২০১৪ সালে যখন শুরু হয়েছিল, তখন ৫ টাকায় অন্নপূর্ণা (Annapurna) প্রকল্পের অধীনে মাত্র ৮টি জায়গায় কমিউনিটি কিচেন পরিচালিত হত। বর্তমানে ১৫০টি হেঁশেল প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে দৈনিক এই প্রকল্পে খাবার জোগায়।
অন্ধ্রপ্রদেশের এনটিআর ক্যান্টিন
মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর (Chandrababu Naidu) হাত ধরে রাজ্যে শুরু হয়েছিল এনটিআর ক্যান্টিন (NTR Canteen)। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার- পাওয়া যেত তিনবেলা খাবার। ৫ টাকা ব্রেকফাস্ট আর ১০ টাকা লাঞ্চ-ডিনারের খরচ হিসেবে ধার্য করা হয়েছিল। আক্ষেপের বিষয়- ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি (YS Jagan Mohan Reddy) এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেন।
advertisement
রাঁধা খাবার এভাবে বিতরণের ছবি লকডাউনেও স্পষ্ট হয়েছে। বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যও করোনাকালে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তৈরি খাবার। তবে দেশের মানুষের অন্নাভাব মেটাতে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে গ্রামাঞ্চলে ৭৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৫০ শতাংশ জনসংখ্যায় খাদ্যশস্য বিতরণের রেওয়াজ রয়েছে বহু বছর ধরেই।
আর যদি রাজনীতির সূত্রে কমিউনিটি কিচেনের ঐতিহাসিক শিকড়ে দৃষ্টিপাত করতে হয়, তাহলে উঠে আসবে শিখধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক দেবের (Guru Nanak Dev) কথা। তিনিই প্রচলন করেন লঙ্গর ঐতিহ্যের। লঙ্গর একটি পার্সি শব্দ, এর অর্থ হল দুঃস্থের আশ্রয়স্থল। নানা গুরদোয়ারার উদ্যোগে সারা বছর দেশে লঙ্গর এবং সেই সূত্রে রাঁধা খাদ্যবিতরণের কাজ চলে।
advertisement
এত কিছু করেও কিন্তু এই দেশের মানুষের খাদ্যসমস্যার নিবারণ করা যাচ্ছে না। ২০২০ সালের বিশ্ব ক্ষুদা সূচকে যে ১০৭টি দেশকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ভারত আছে ৯৪ নম্বরে। এই পরিসংখ্যান বলছে যে দেশের ১৪ শতাংশ জনতাই ভোগেন অপুষ্টিতে। সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী এই দিক থেকে বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তানের মতো দেশের ছবিও ভারতের থেকে ভাল!
view comments
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
সস্তায় পেট ভরা খাবার, গরিবের মন জয়ে জয়ললিতা মডেলেই আস্থা মমতার
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ভাইফোঁটার পরই আবহাওয়ায় বিরাট বদল, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে দুর্যোগ উত্তরেও? বড় আপডেট দিল হাওয়া অফিস
ভাইফোঁটার পরই আবহাওয়ায় বিরাট বদল, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে দুর্যোগ উত্তরেও? রইল বড় আপডেট
  • ভাইফোঁটার পরই আবহাওয়ায় বদলের সম্ভাবনা৷

  • বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে৷

  • আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement