নয়াদিল্লি: বাংলা ছাড়া হিন্দি-ইংরেজির কিছুই জানেন না অনুব্রত। এমনকি, বাংলাটা জানলেও টানা লিখতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ইডি-কে তাই আনতে হয়েছে ট্রান্সলেটর, ইন্টারপ্রিটর। রাখা হয়েছে বাংলা লেখার ব্য়বস্থাও। অন্যদিকে, শুক্রবারের শুনানি শেষে কেষ্টকে ১১ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। আগামী ২১ মার্চ পরবর্তী শুনানি।
সূত্রের খবর, গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তে এবার কেষ্ট কন্যা সুকন্যা সহ ১২ জনকে অনুব্রত মণ্ডলের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় ইডি। এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী জানান, তদন্তের খাতিরে এখনও অনুব্রত মণ্ডলের কাছ থেকে একাধিক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি, তাই তাঁকে ফের তাঁদের হেফাজতে দেওয়া হোক। ইডি-র সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
আরও পড়ুন: ১১ দিনের ইডি হেফাজতে অনুব্রত, মেয়ে সুকন্যা-সহ ১২ জনকে তলব করার তোড়জোড় শুরু
অনুব্রত মণ্ডলকে ফের হেফাজতে নিতে চেয়ে শুক্রবারও আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন ইডি-র আইনজীবী। যথারীতি ইডি-র এই আবেদনের বিরোধিতা করেন অনুব্রতর আইনজীবী। সওয়াল করেন, গত তিন দিনে তাঁর মক্কেলকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা জেরা করেছে ইডি।
এর উত্তরে ইডি-র আইনজীবী জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ার জন্য গত ৪ মার্চ ১ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। অভিযুক্ত অনুব্রতকে ৭ মার্চ রাত ৯টায় দিল্লি নিয়ে আসা হয়। এরপর হয় মেডিক্যাল পরীক্ষা। ওই রাতেই বিচারক ভিডিও কল-এ শুনানি শুরু করেন।
ইডি জানায়, এরপরেই অভিযুক্তর আইনজীবী বাধা দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত করাই নিয়ম। তখন তা মেনেও নেন বিচারক। নির্দেশ দেন রাতেই বিচারকের বাড়ি যেতে। ওই রাতেই অনুব্রতকে হাজির করানো হয়। এর পরের দিন হোলির জন্য ছুটি ছিল।
আরও পড়ুন: ৮৯ মিনিটের মাথায় তালিকা প্রকাশ, আদালতের নির্দেশে বাতিল Grp-C এর ৮৪২ জনের চাকরি
এরপরেই অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদের মূল সমস্যার কথা আদালতে তুলে ধরেন ইডি-র আইনজীবী। জানান, অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল বাংলা ছাড়া হিন্দি বা ইংরেজির মতো অন্য ভাষা বোঝেন না। লিখতেও পারেন না। বাংলা জানেন। তবে সই ছাড়া তেমন কিছুই লিখতে পারেন না। টানা বাংলা লেখা তো দূরের কথা। ইডির তরফে জানানো হয়, এরপরেই একজন ইন্টারপ্রেটর, ট্রান্সলেটরের ব্য়বস্থা করা হয়েছে। বাংলা লেখার লোকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এরপরেই বিচারক অনুব্রতকে ডাকেন। সবুজ পাঞ্জাবি পরে থাকা অনুব্রত উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে আসেন। বিচারক জিজ্ঞেস করেন, "আপনি হিন্দি জানেন?" অনুব্রত, ঘাড় নেড়ে জানান, 'না।' এরপর, বিচারক অনুব্রতকে জিজ্ঞেস করেন, "বাংলা বোঝেন? ইন্টারপ্রিটার কেউ আছেন যিনি ওনার হয়ে কথা বলবেন।" আইনজীবী সম্প্রীতা ঘোষাল এগিয়ে আসেন। এরপর বিচারক বলেন, "ওঁকে জিজ্ঞেস করুন উনি কি কিছু বলতে চান?" অনুব্রত মাথা নেড়ে উত্তর দেন, না।
রাউস অভিনিউ আদালতে এদিন ইডি জানায়, গরু পাচার কাণ্ডের মানি ট্রেলের সন্ধান পেতে অনুব্রত কন্যা সুকন্যা সহ ১২ জনকে সমন পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁরা অনুব্রতকে জেরা করতে চান।
তাছাড়া, এই মামলার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগ রয়েছে বলে আদালতে জানায় ইডি। সতীশ কুমার, সায়গল হোসেন, এনামুল হক, মুস্তাফা, আনারুল সহ একাধিক জন রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে এই গরু পাচার মামলার লিঙ্ক রয়েছে। এই মামলার অনেক অভিযুক্ত বাংলাদেশ পালিয়েছে। নথি ও তথ্য প্রমাণ নষ্ট হতে পারে, পোড়ানো হতে পারে ও অন্য দেশে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। সে সব কিছই খতিয়ে দেখতে চায় ইডি।
প্রসঙ্গত, নিয়ম হচ্ছে, জেরার সময় নিজের বয়ান অভিযুক্তকে নিজের হাতে লিখতে হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে, অনুব্রত টানা বাংলা লিখতে না পারায় বড় সমস্যায় পড়েছিলেন ইডি-র আধিকারিকেরা।
ARPITA HAZRA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।