Durga Puja 2023: রাজার হারানো হাতি খুঁজে দিয়েছিলেন মা গুপ্তমনি! এই মন্দিরে পুজো করেন শবররা
- Published by:kaustav bhowmick
- news18 bangla
- Reported by:RAJU SING
Last Updated:
দেবী যেহেতু এখানে গুপ্ত জায়গায় ছিলেন তাই তাকে মা গুপ্তমনি বলা হয়। এখানে কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত পুজো করে না। গীতা পাঠ, চণ্ডীপাঠ, যজ্ঞ কিছুই হয় না এখানে পুজোর সময়।
ঝাড়গ্রাম: চারদিকে গভীর জঙ্গল, তার বুক চিরে চলে গেছে কালো পিচ ঢালা জাতীয় সড়ক। সেই জাতীর সড়কের পাশেই আছে একটি মন্দির। এই মন্দিরে জঙ্গলমহলের জাগ্রত দেবীর অবস্থান বলে সকলের বিশ্বাস। সেই সঙ্গে এটি মল্ল রাজাদের সাক্ষ্যবহন করে চলেছে। এই ইতিহাস ঝাড়গ্রামের একসময়ের রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব ও মা গুপ্তমনির।
প্রায় ৭৫০ বছর আগে রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব রাজত্ব করতেন ঝাড়গ্রাম ও সেই সংলগ্ন এলাকায়।জানা যায়, রূপনারায়ণ মল্লদেবের রাজপ্রাসাদ থেকে বেশ কিছু গুপ্ত পথ ছিল। শত্রুরা আক্রমণ করলে ওই গুপ্ত পথ দিয়ে রাজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হত। এরকমই একটি গুপ্ত রাস্তা করা হয়েছিল ঝাড়গ্রাম থেকে সুখনিবাসা পর্যন্ত।
advertisement
advertisement
কথিত আছে একবার রাজার একটি প্রিয় হাতি এই গুপ্ত রাস্তা দিয়ে কোনওক্রমে সুখনিবাসাতে গিয়ে পৌঁছয়। খবর যায় রাজার কাছে। রাজা তার লোক লস্কর নিয়ে তার সন্ধানে বের হন। সুখনিবাসাতে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে হাতিটিকে দেখতেও পান। হাতিটিকে তিনি বহু চেষ্টা করে হাতিশালে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। তবে হাতিটি কোনওভাবেই রাজার কথা শুনছিল না। ফলে রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব হতাশ হয়ে ফিরে যান প্রাসাদে। কথিত আছে, ওই রাত্রিতেই এক বনদেবী রাজাকে স্বপ্নে দেখা দেন। তিনি জানান, প্রিয় হাতিটি রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেবকে আবার চিনতে পারবে, তাঁর সঙ্গে ফিরেও আসবে। তবে এরজন্য রাজাকে ওই এলাকায় গিয়ে নন্দ ভক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যিনি নাকি ওই দেবীর পুরোহিত।
advertisement
রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব পরেরদিনই স্বপ্নাদেশ পাওয়া নির্দেশ মত কাজ করেন। পুরোহিত ওই হাতিকে দেবীর ফুল-বেলপাতা খাওয়ালে হাতি ফের রাজার সঙ্গে ফিরে যায়। এরপর রাজা নিজে শুরু করেন এই দেবীর আরাধনা। আর সেই থেকেই নাকি বনদেবীর পুজো চলে আসছে জঙ্গলমহলে। এই লোকগাথা আজও মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়।
দেবী যেহেতু এখানে গুপ্ত জায়গায় ছিলেন তাই তাঁকে মা গুপ্তমনি বলা হয়। এখানে কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত পুজো করেন না। এখানে পুজোর সময় গীতা, চণ্ডীপাঠ, যজ্ঞ কিছুই হয় না। তৎকালীন শবর পরিবারের নন্দ ভক্তা যেভাবে পুজো করতেন ঠিক একই রকমভাবে আজও শবররা পুজো করে আসছেন মা গুপ্তমনি’র। দুর্গাপুজোর সময় এখানে ঘট বসিয়ে প্রতিমা গড়ে পুজো হয়। এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে কখনও আলো জ্বালানো হয় না। বলি প্রথা চালু আছে এখানে। প্রতি বুধবার ও শনিবার বলি হয়।
advertisement
ভক্তদের বিশ্বাস, কারোর কোনও জিনিস হারিয়ে গেলে মন্দির প্রাঙ্গনে থাকা হাতি, ঘোড়ার মাটির মূর্তিতে সুতো বেঁধে দিয়ে এলে নাকি তা ফিরে পাওয়া যায়। এই সমস্ত অঞ্চলে কেউ গাড়ি কিনলে মা গুপ্তমনির কাছে প্রথম পুজো দেন। কলকাতা থেকে মুম্বই গামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই লোধাশুলিতে রয়েছে মা গুপ্তমনির মন্দির। এটি ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং খড়গপুর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যে পর্যটকরা জঙ্গলমহলে বিশেষত ঝাড়গ্রামে আসেন তাঁরা অন্তত একবার হলেও এই মা গুপ্তমনির মন্দির দেখে যান। কেউ কেউ ভক্তি ভরে পুজোও দেন।
advertisement
রাজু সিং
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
October 12, 2023 4:17 PM IST