#বেজিং: বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এখনও কোনও ভাবেই রাশ টানা যাচ্ছে না আক্রান্তের সংখ্যায়। এর মধ্যেই চিনে হাজির নতুন আতঙ্ক। সেখানে বায়াননুর শহরে ক্রমেই বাড়ছে বিউবনিক প্লেগে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সেই শহরে জারি করা হয়েছে লেভেল-৩ ওয়ার্নিং।
রবিবার, উত্তর চিনের একটি শহরে দু’জন বিউবনিক প্লেগে (Bubonic plague) আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তার পরেই বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে চিনে। এরপরই বায়ানুর নামের ওই জায়গায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চিনের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও দু’জন এই প্লেগে আক্রান্ত হয়েছেন ৷ কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে কারণ মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই শহরে ওয়ার্নিং জারি করা হয়েছে।
বায়ানুরের একটি হাসপাতালে শনিবার ওই দু’জনকে ভর্তি করা হয়। তারপর তাঁদের টেস্ট করা হয়। ল্যাব টেস্ট রেজাল্ট ইতিমধ্যেই প্লেগের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের বয়স ২৭ বছর ও অন্যজন তাঁরই ভাই, যার বয়স ১৭ বছর। এদের দু’জনকে দুটি আলাদা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঘোষণা করেছে যে, ২০২০-র শেষ পর্যন্ত এই ওয়ার্নিং জারি থাকবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বর্তমানে শহরে প্লেগ রোগ মহামারির আকার নেওয়ার মতো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আত্মসুরক্ষায় তৎপর এবং সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিষয়ে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসে জানাতে হবে।'
বিউবনিক প্লেগ কী ?
প্লেগের তিনটি ধরনের একটি হলো বিউবনিক প্লেগ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বন্য ইঁদুর এবং ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর শরীরে এক ধরনের পোকা জন্মায়। সেই পোকার মাধ্যমেই বিউবনিক প্লেগের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। দ্রুত এই ব্যাকটেরিয়া এক জনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না হলে এই রোগ থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ- বিউবনিক প্লেগের সবচেয়ে সুপরিচিত লক্ষণ হল এক বা একাধিক সংক্রমিত, স্ফীত ও ব্যথাযুক্ত লসিকা গ্রন্থি যা বিউবো নামে পরিচিত। শীত শীত অনুভূতি, অসুস্থতা-বোধ, উচ্চমাত্রায় জ্বর, মাংসপেশি সংকোচন, খিঁচুনি মসৃণ, স্ফীত, ব্যথাযুক্ত লসিকা গ্রন্থি বা বিউবো যা কুঁচকিতে বেশি দেখা যায় তবে বগল বা ঘাড়েও থাকতে পারে। প্রায়শই প্রাথমিক সংক্রমণের নিকটবর্তী স্থানে বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়ার আগেই ব্যথা হতে পারে। হাত ও পায়ের আঙুল, ঠোঁট ও নাকের অগ্রভাগের টিস্যুতে গ্যাংগ্রিন হয়। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, অনবরত রক্তবমি (হিমাটেমেসিস), হাত-পা ব্যথা হওয়া, কাশি ও রোগী জ্যান্ত থাকা অবস্থাতেও ত্বকের ক্ষয় বা পচনের ফলে সৃষ্ট তীব্র ব্যথা। এছাড়া প্রচণ্ড ক্লান্তি, পেটের সমস্যা, লেন্টিকিউলি (সারা দেহে ছড়িয়ে থাকা কালো দাগ), চিত্তবৈকল্য বা প্রলাপ বকা ও গাঢ় নিদ্রা বা অচেতন অবস্থা।
চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বে বিউবনিক প্লেগের মহামারি দেখা দিয়েছিল। এ মহামারির নাম দেওয়া হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ। এটি প্রাণ কেড়েছিল অসংখ্য মানুষের। শুধু ইউরোপেই ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।