ভিসা সাক্ষাৎকার পিছোনোয় আটকে বহু ভারতীয় এইচ-১বি কর্মী! আমেরিকায় চাকরির দিন শেষ?
- Published by:Tias Banerjee
Last Updated:
মার্কিন এইচ-১বি ভিসা যাচাইয়ের নতুন নিয়মে বহু ভারতীয় পেশাজীবী ভারতে আটকে, সাক্ষাৎকার বাতিল ও দীর্ঘ অপেক্ষায় চাকরি হারানোর আশঙ্কা, The Washington Post ও Emily Newman তথ্য দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসা যাচাই প্রক্রিয়ায় সাম্প্রতিক পরিবর্তনের জেরে গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন বহু ভারতীয় পেশাজীবী। ভিসা নবীকরণের জন্য ভারতে এসে আচমকাই সাক্ষাৎকার বাতিল বা কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় বহু এইচ-১বি কর্মী বর্তমানে দেশে আটকে রয়েছেন। এর ফলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিবাসন আইনজীবীরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে সব ভারতীয় এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসাধারক ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমেরিকায় কাজের অনুমতি নবীকরণের জন্য ভারতে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটের নির্ধারিত সাক্ষাৎকার হঠাৎ বাতিল করা হয়েছে। পরে সেই সাক্ষাৎকারের নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস বা এক বছরেরও বেশি সময় পরে। কোথাও কোথাও নতুন তারিখ গিয়ে পড়েছে ২০২৬ বা এমনকি ২০২৭ সালেও।
advertisement
advertisement
এই দীর্ঘ অপেক্ষার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মার্কিন বিদেশ দফতরের নতুন কড়া যাচাই নীতি। চলতি মাসের শুরুতেই Donald Trump প্রশাসনের নির্দেশে ভিসা যাচাই প্রক্রিয়ায় ‘অনলাইন প্রেজেন্স রিভিউ’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নিয়মে আবেদনকারীর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও অনলাইন কার্যকলাপ খুঁটিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
advertisement
এই পরিস্থিতিতে বহু ভারতীয় পেশাজীবীর জীবন কার্যত ওলটপালট হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে The Washington Post। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমেরিকায় ফিরতে না পারায় চাকরি হারানোর ভয় তাড়া করছে তাঁদের। হিউস্টনের অভিবাসন সংস্থা রেডি নিউম্যান ব্রাউন পিসির পার্টনার এমিলি নিউম্যান জানিয়েছেন, শুধুমাত্র তাঁর সংস্থারই অন্তত ১০০ জন ক্লায়েন্ট বর্তমানে ভারতে আটকে রয়েছেন। ভারত ও আমেরিকার আরও কয়েকজন অভিবাসন আইনজীবীও জানিয়েছেন, তাঁদের কাছেও একাধিক একই ধরনের মামলা এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ভুক্তভোগীরা ৩০ ও ৪০-এর কোঠার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত পেশাজীবী, যাঁরা বহু বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন।
advertisement
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কেউ কেউ সংস্থার সঙ্গে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছেন, কেউ আবার সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ রাখবেন কি না বা একা আমেরিকায় পাঠাবেন কি না—সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অনেক পরিবার সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে পড়েছে।
ভারতের এক অভিবাসন আইনজীবী বীণা বিজয় আনন্দ বলেন, “এটাই সম্ভবত এইচ-১বি সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় বিশৃঙ্খলা। কী পরিকল্পনা নিয়ে এই পরিবর্তন, তা স্পষ্ট নয়।”
advertisement
মার্কিন বিদেশ দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগে যেখানে দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও অপেক্ষার সময় কমানোর উপর জোর দেওয়া হত, সেখানে এখন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ভিসা আবেদন গভীরভাবে যাচাই করাই অগ্রাধিকার। তাঁদের বক্তব্য, “ভিসা কোনও অধিকার নয়, এটি একটি বিশেষ সুবিধা।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, এইচ-১বি কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ ভারত। US Citizenship and Immigration Services-এর তথ্য অনুযায়ী, মোট এইচ-১বি ভিসাধারকদের ৭১ শতাংশই ভারতীয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যামাজন, মেটা ও মাইক্রোসফট ছিল এইচ-১বি কর্মীদের সবচেয়ে বড় স্পনসর।
advertisement
তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই এই কর্মসূচি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু কট্টর সমর্থকের দাবি, এইচ-১বি ভিসা মার্কিন নাগরিকদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন এইচ-১বি আবেদনে ১ লক্ষ ডলার ফি ধার্য করা হয়। পাশাপাশি, ৩ ডিসেম্বর ‘বর্ধিত স্ক্রিনিং ও ভেটিং’ নীতির কথা ঘোষণা করা হয়, যার আওতায় সোশাল মিডিয়া পর্যালোচনাও অন্তর্ভুক্ত।
advertisement
নতুন নিয়ম ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে যাঁদের ভিসা সাক্ষাৎকার ছিল, তাঁরা ইমেল পেতে শুরু করেন। সেখানে জানানো হয়, ‘অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা’-র কারণে দৈনিক সাক্ষাৎকারের সংখ্যা কমানো হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ সাক্ষাৎকার পুনর্নির্ধারিত হয়েছে ২০২৬ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। একটি ক্ষেত্রে নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে ২০২৭ সালে।
ডেট্রয়েটে বসবাসকারী এক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার জানান, তিনি ডিসেম্বরের শুরুতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে আসেন। ১৭ ও ২৩ ডিসেম্বর তাঁর ভিসা নবীকরণের সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর একাধিক ইমেলে জানানো হয়, তাঁর সাক্ষাৎকার বাতিল করে ২০২৬ সালের ২ জুলাই নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের সন্তান আমেরিকায় থাকায় তিনি চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। পরে সংস্থার পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে নথি জমা দেওয়ায় তিনি দ্রুত সাক্ষাৎকারের সুযোগ পান।
এই ইঞ্জিনিয়ারের মতে, এইচ-১বি নীতিতে এই পরিবর্তন ভ্রান্ত। তাঁর কথায়, “এইচ-১বি কর্মীরাই বহু বড় আমেরিকান সংস্থাকে চালনা করে। হঠাৎ যদি এই কর্মীদের বড় অংশ বেরিয়ে যায়, বহু সংস্থাই মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এই অচলাবস্থায় শুধু কর্মীরাই নয়, সমস্যায় পড়েছে আমেরিকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলিও। কবে কর্মীরা কাজে ফিরতে পারবেন, তা অনিশ্চিত হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে ব্যস্ত সংস্থাগুলির শীর্ষ কর্তারা।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Other
First Published :
Dec 21, 2025 10:01 AM IST










