বঁজুর প্যারিস...
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে প্রশস্ত বুলেভার্ড। আইফেল টাওয়ার, ১২ শতকের গথিক নটারডাম ক্যাথিড্রালের মতো স্থাপত্যের বাইরে এই শহর তার ক্যাফে সংস্কৃতি এবং রুয়ে ডু ফাউবুর্গ সেন্ট-অনরের ডিজাইনার বুটিকগুলোর জন্য পরিচিত।
প্রীতি সেন
কলকাতা: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ইউরোপের অন্যতম প্রধান শহর। শিল্প, ফ্যাশন, গ্যাস্ট্রোনমি এবং সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। ১৯ শতকে তৈরি এই শহরে ক্রিস ক্রস আকারে ছুটে চলেছে সেইন নদী। মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে প্রশস্ত বুলেভার্ড। আইফেল টাওয়ার, ১২ শতকের গথিক নটারডাম ক্যাথিড্রালের মতো স্থাপত্যের বাইরে এই শহর তার ক্যাফে সংস্কৃতি এবং রুয়ে ডু ফাউবুর্গ সেন্ট-অনরের ডিজাইনার বুটিকগুলোর জন্য পরিচিত।
advertisement
একগুচ্ছ কলম এবং ৪৫০ জিএসএম নিয়ে বিমানবন্দরের লবিতে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আমার অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয়। এবার আগ্রহ ছিল আর্কিটেকচারাল স্কেচিংয়ের দিকে। বিশ্বখ্যাত শিল্পী, অ্যালেক্স হিলকুর্টজের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্মানের বিষয়। অ্যালেক্স হিলকুর্টজের জন্ম ইংল্যান্ডে, বেড়ে ওঠা ক্যালিফোর্নিয়ায়। তিনি ফিচার ফিল্ম, টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপনের একজন বিখ্যাত স্টোরিবোর্ড শিল্পী। তাঁর বিখ্যাত ফিল্ম ক্রেডিটগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আর্গো’। হিলকুর্টজ বিশ্বাস করেন, আমাদের এই ব্যস্ত জীবনই স্কেচিং এবং প্লেইন এয়ার পেইন্টিংগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদর্শ। একটা সত্যিকারের অনুভূতি এবং কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত গল্পগুলো পর্দা সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
advertisement
advertisement
কোভিড চলাকালীন গত ২ বছরে নিজের প্যাশনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে বর্ষীয়াণ শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং অনলাইন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার ফলে আমার চিন্তাভাবনাগুলো ডানা মেলে উড়তে শিখেছে। পেইন্টিংয়ের নতুন কৌশল শেখার সুযোগ এসেছে। যদিও আমি তেল, অ্যাক্রিলিক এবং মিক্সড মিডিয়াম ফরম্যাটেই আঁকি তবে শহুরে স্কেচিং এবং জলরঙগুলোও সমান আকর্ষণীয় ছিল।
advertisement

অবশেষে ২০২২ সালের বসন্তে আমি স্বপ্নের নগরীতে অবতরণ করি। বহু শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা জাঁকজমকপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ এবং মূর্তিগুলো আকাই আমার অভিপ্রায়। চোখের সামনে ঝলমল করে ওঠে আলোর শহর। প্রতি মুহূর্তে ঝাঁকুনি দিয়ে যায়।
advertisement
প্যারিসের মতো পৃথিবীর আর কোনও কিছুর জন্যই হৃদয় এমন উদ্বেল হয়ে ওঠে না। এই শহর তার শিল্প, স্থাপত্য, সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী নিয়ে অভ্যাগতদের আহ্বান করে। এর সঙ্গে প্যারিসের নিজস্ব জাদু রয়েছে, সেটা খুঁজে বের করতে হয়। গলির গলি তস্য গলি, মিষ্টি প্যাটিসেরি এবং আরামদায়ক ছোট বিস্ট্রো যা এক গ্লাস বিউজোলাইসের সঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ আহ্বান করে।
advertisement
প্রথম দিন কাটে আইফেল টাওয়ার, সিটি ট্যুর এবং সিয়েন রিভার ক্রুজ দেখার রোমাঞ্চে। অ্যালেক্স দেখা করতে আসার মুহূর্তে আমার ক্যানভাসের গল্প নয়া উড়ান পায়। এটা এক বিস্ময়কর মুহূর্ত। অ্যালেক্সকে খাঁটি ভারতীয় উপায়ে স্বাগত জানাই। শাল পরিয়ে দিই, উপহার হিসেবে দিই হস্তশিল্পের সুভ্যেনির।

advertisement
অ্যালেক্স আমার আঁকাগুলোর একটি সিরিজের উন্মোচন করেন। আমরা পেইন্টিংগুলো নিয়ে আলোচনা করি। মত বিনিময় হয়। অ্যালেক্স যখন আলো ছায়া নিয়ে ব্যাখ্যা করছিলেন তখন সত্যিই সেটা একটা শেখার অভিজ্ঞতা। প্যালেটের সঠিক শেড এক উষ্ণ টোন তৈরি করে। এককথায় এটা অবিশ্বাস্য।
রাস্তায়, ক্যাফেতে এবং জা ডিন দা লাক্সেমবার্গ গার্ডেনে স্কেচ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রতি মুহূর্তেই কিছু না কিছু শিখেছি। প্রতিটা মূর্তির একটা গোপন গল্প রয়েছে। সঙ্গে পরিবেশ বাড়তি পাওনা। পাখির কিচিরমিচির যেন ইতিহাসের প্রতিধ্বনি। ঐতিহাসিক আর্ট সেন্টার, সেনেলার, পরিদর্শন রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। ছোট কিন্তু আন্তরিকতায় পূর্ণ। যা খুঁজছিলাম পেয়েছি, সঙ্গে সহায়তাও। আকর্ষণীয় চারকোল পিস এবং মানসম্পন্ন স্কেচবুক। আমি তাদের কাছ থেকে আরও স্কোয়ারিশ (কিন্তু বর্গাকার নয়) আকারের স্কেচবুক আশা করি। বিশাল আকারের কাঠের ড্রয়ার সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেছি - হ্যাঁ, ১৮৮৭ সালের তৈরি, আসল! এখানে ভারতীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি কটন কাগজ দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি।
ল্যুভর পরিদর্শন ছিল আরেকটা উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত। ইতিহাস যেন কথা বলছে…হ্যাঁ মোনালিসাকে প্রথম দেখা, মহান শিল্পীর সৃষ্টি। প্রতিটা যুগের আলাদা গল্প আছে। আমার মতো একজন শিল্পীর সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য একদিন যথেষ্ট নয়। প্রচুর জিনিস দেখার আছে। প্যারিসের প্রতি ভালবাসা এখানেই শেষ নয়। রহস্য আরও ছিল। মনমার্টের গলি দিয়ে হাঁটা, প্রতিটা লেন মহান মানুষদের কথা বলছে, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ক্লদ মননেট, পিকাসো এবং আরও অনেক কিছু।
ঘোরাঘুরি করতে করতে পৌঁছে গেলাম ‘ওয়াল অফ লাভ’-এ। দিদি ফিসফিস করে বললেন, ‘বাংলায় লেখা দেখছিস, আমি তোমাকে ভালোবাসি’। হ্যাঁ দিদি, তুমি আমার প্রাণ এবং ঋজুদা (আমার জামাইবাবু)। আমার বড় ভাই এবং আরও অনেক কিছু। টরন্টো থেকে প্যারিস, সাত সমুদ্রের ওপারে দুজনের মিলনের অপ্রতিরোধ্য মুহূর্ত, তারা শুধু আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। একটি পরিপূর্ণ দিন। 'বিদায় প্যারিস' বলার আগের একমাত্র রাত। আমি নিজেকে বলছিলাম, আবার ফিরে আসতে হবে। স্বপ্নগুলোকে আঁকতে হবে। এটা কখনওই শেষ নয়…।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 13, 2022 2:16 PM IST