এলোমেলো চুল। রোগা চেহারা। সাহিত্য জগতে তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র। লুইস গ্লাক, মার্কিন প্রদেশ ম্যাসুচেসটসে ১৯৪৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। সেই গ্লাক এবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন। রয়্যাল সুইডিস অ্যাকাডেমির তরফ থেকে ট্যুইটে গ্লুককে অভিনন্দন জানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘নির্ভূল কবি কণ্ঠ, অদ্ভুত সৌন্দর্যবোধ একজনকে একক থেকে বহুত্বে নিয়ে যায়।’ সেই পথেই যাত্রা গ্লাকের। তাই তাঁর সাহিত্যকে সেরার সেরা উপাধিতে ভূষিত করা হল। এর আগে একাধিক পুরস্কার এসেছে গ্লাকের ঝুলিতে। পেয়েছেন পুলিৎজার, আমেরিকার ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড। তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই ‘দি ওয়াইল্ড আইরিশ’ সাহিত্য দুনিয়ায় এক তরঙ্গ তৈরি করেছে। সেই বইয়ের জন্যই পুলিৎজার পেয়েছিলেন তিনি।
কেমব্রিজ শহরে থাকতেন। বেড়ে ওঠা সেখানেই। পেশায় তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইংরাজির অধ্যাপক। ‘ফার্স্ট বর্ন’ নামে ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম কবিতাগুচ্ছ প্রকাশ করেন, যা বিশ্বসাহিত্যে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। তাঁকে মার্কিন আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান লেখক বলে চিহ্নিত করেছিল সেই বইটি। এখনও পর্যন্ত তিনি ১২টি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। প্রকাশিত হয়েছে কবিতা বিষয়ে তাঁর লেখা একাধিক বই। সাহিত্য সমালোচকদের মতে, গ্লাকের লেখায় বারবার এসেছে অবসাদের কথা। মৃত্যু, জরা, অবসাদ, বিরহ, ফিরে ফিরে এসেছে তাঁর কবিতার মধ্যে। এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় চিত্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম। এর পাশাপাশি, গ্লাকের লেখায় উঠে এসেছিল মানসিক চাহিদার কথাও। মানুষের অস্তিত্ত্বের চাহিদা, প্রেমের আকাঙ্খা, ফিরে ফিরে এসেছে কবিতায়। আছে লিঙ্গ প্রসঙ্গও। ২০১৪ সালে তাঁর শেষ বই ‘Faithful and Virtuous Night’ প্রকাশিত হয়। তার আগে একের পর কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রকাশিত হয়েছে একাধিক প্রবন্ধ গ্রন্থও।
এবছর ২২ এপ্রিল ৭৭ বছর বয়স হয়েছে গ্লাকের। ছোটবেলা থেকে ঘটনাবহুল জীবন কেটেছে তাঁর। ছোটবেলাতেই Anorexia Nervosa রোগ দেখা দিয়েছিল তাঁর শরীরে। তার কারণে গ্র্যাড স্কুল থেকে তাঁকে মাঝপথেই সরে যেতে হয়, কিন্তু তাও ১৯৬১ সালে তিনি স্নাতক হন। তিনি বলেছিলেন, ‘একটা সময়ের পর আমি বুঝতে পারি আমি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বাঁচতে চেয়েছিলাম।’ শেষে মৃত্যুর চিন্তাকে পরাস্ত করে তিনি ফিরে আসেন। কবিতা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু পড়াশোনায় ছেদ পড়ে, তিনি কলম্বিয়া প্রদেশ ছাড়েন ডিগ্রি ছাড়াই। ১৯৬৮ সালে তার প্রথম বই বেরোয়। তারপর তিনি নিজেই বলেছেন, লেখা যেন থমকে যায়। তাই ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর তাঁর দ্বিতীয় কবিতার বই প্রকাশ পায়। তারপর থেকে চলতে থাকে তাঁর সাহিত্য যাত্রা। ৭৭–এর প্রৌঢ়া গ্লাক জীবনে হতাশার চরমতম গভীরতায় নিজেকে দেখেছেন, পুড়িয়ে যাচাই করে নিয়েছেন, তাই তাঁর লেখনিতেও সেই অবসাদের চিহ্ন ঝরে পড়ে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: 2020 Nobel Prize