হাওড়া: নজর কাড়া ডিজাইন ও সোনার মোড়কে শাঁখা। এই আধুনিক কালেও হিন্দু ধর্মের বিবাহে, প্রধান উপাদান শাঁখা, সিঁদুর, পলা ও নোয়া। এই তিনটির কোনোটি ছাড়া হিন্দু ধর্মের বিবাহ শাস্ত্রমতে অসম্পূর্ণ। হিন্দু ধর্মের গৃহবধূর অন্যতম অলঙ্কার শঙ্খ বা শাঁখা। এ এমন এক অলঙ্কার কোনো অংশে কদর কমেছে তো, অন্য অংশে কদর বেড়েছে শাঁখার। এ যুগ থেকে সে যুগ গুরুত্ব প্রায় এক।
হাতে শাঁখা ও সিঁথিতে সিঁদুর গৃহবধূরা পড়ে থাকেন স্বামীর মঙ্গল কামনা করে। সেই রীতি যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। ঠিক অন্য দিকে হিন্দু বিবাহিত মহিলা চেনার সহজ উপায় হয়ে থাকে বটে।
আরও পড়ুন - Knowledge Story: দেবীর আশীর্বাদী সবুজ চুরি হাতে পরলেই বাজিমাত, দাম্পত্য হয় চিরকালীন সুখের
যাই হোক সেকাল থেকে একাল শাঁখার বিকল্প নেই। হিন্দু ধর্মের মহিলাদের কাছে শাখা সিঁদুরের গুরুত্ব শুধু মাত্র তাঁরাই জানেন। অতীতে এমন ঘটনাও ঘটেছে। নিজেদের জীবনের থেকেও মূল্যবান হিসাবেই মানেন গৃহ বধূরা।
যত দিন গড়িয়েছে ততই মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে শাঁখার। আধুনিক থেকে আরও আধুনিক হয়ে উঠেছে শাঁখা। না না সৌখিন ডিজাইন বা সোনার কারুকার্যে মুরেছে শাঁখা।আরও পড়ুন - South Bengal Weather Alert: স্বস্তির দিন কী শেষ? আবহাওয়ার বড় পাল্টি, নাজেহাল জীবন
গত কয়েক বছরে গুণগত মান নিম্ন হয়েছে। কিন্তু দাম বেড়েছে লাফিয়ে। তাতেই শাঁখা শিল্পীদের দুরবস্থা। কাঁচা জিনিসের দাম বাড়ার ফলেই, শিল্পীদের হাতে সারা বছর সেভাবে কাজ থাকেনা। এর ফলে দিন দিন এই কুটির শিল্প থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে শিল্পীরা।
একসময় হাওড়ার বাগনান বাঁটুল শাঁখারী পাড়ায় শাখা তৈরীর রমরমা ছিল। তবে এখন সেই শাঁখারী পাড়া ছন্দহীন। পরিবারের দক্ষ পুরুষ মহিলা শ্রমিক। শাঁখা তৈরিতে যুক্ত ছিল। তাদের অনেকেই এই শিল্পে আয়ের মুখ না দেখে ছেড়েছে। অন্যান্য পেশা বেছে নিয়েছে তাঁরা। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। ৪০০ - ৫০০ বছর প্রাচীন শাঁখা শিল্পে বর্তমানে কয়েকটি পরিবার যুক্ত রয়েছে।
হাতের বদলে আধুনিক ব্যবস্থায় মেশিনের সাহায্যে তৈরি হচ্ছে কারুকার্যময় শাঁখা। এক রকম শুধু ডিজাইন। অন্যটি সোনা বাঁধানোর শাঁখা।
শাঁখা শিল্পী লালটু দত্ত জানায়, ‘‘একসময় বাঁটুল শাঁখারী পাড়ার ৫০-৬০ টি পরিবার যুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ১০ টি পরিবার এই কাজে। সারা বছর হাতে কাজ থাকে না। ফলে এই কাজ ছাড়ছে অনেকেই। নতুন করে বাড়ির ছেলেরা শিখছে না শাঁখা তৈরি।’’ অন্যদিকে শাঁখা শিল্পী কনিকা দত্ত জানান, ‘‘কয়েক বছর আগে পাড়ায় বহু মানুষ শাঁখা তৈরি করতেন। এ বাড়িতে এসে প্রথম দেখলাম কিভাবে শাঁখা তৈরি হয়। কয়েক বছর কাটতে না কাটতেই আমিও শাঁখা তৈরি শিখলাম। এখন মেশিনের সাহায্যে বাড়িতে বসে নিজে হাতে শাঁখা তৈরি করি।’’ তিনি জানান, এই কয়েক বছরে শাঁখা শিল্পীদের অনেকটাই অবস্থার অবনতি হয়েছে।
এমত অবস্থাতে শাঁখা শিল্পীরা তাকিয়ে রয়েছে সরকারি সহযোগিতার আশায়। এক সময় সরকারি ভাবে শাঁখায়া ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্য দামে শাঁখা পাওয়া যেত বলে জানান শিল্পীরা। যদিও সেই ব্যবস্থা কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়েছে। তাতেই দিন দিন বেড়েছে অস্বস্তি।
Rakesh Maity
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।