দাদাঠাকুরের যুগ থেকে আজকের ফেস্ট‌ুন...ছড়ায়-স্লোগানে আজও মুখর ভোট রাজনীতি

Last Updated:
#কলকাতা: দল আর দলাদলি নিয়ে ছড়া বাঁধার চল সেই কবেই করে গিয়েছিলেন দাদাঠাকুর। সেই সব মিষ্ট-কষায় স্বাদ বহু দিন বাঙালির জিভে-জিভে ফিরেছে। অন্নদাশঙ্করের ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো’ তো দেশভাগের বীজমন্ত্র হয়ে গিয়েছে প্রায়।
কিন্তু সে কি ভোটের ছড়া? রাজনীতি মানেই তো ভোট নয়! তা হলে ভোটের ছড়া ঠিক কী? দেওয়ালের চুনে তুলির টানে খেউড়? না কি মুখে-মুখে ফেরা স্লোগানধর্মী পদাবলি? উত্তরটা বোধহয়: দুই-ই। সে শুধু রঙ্গ নয়, ব্যঙ্গও নয়। যেমন-
১৯৬৭-তে সিপিআই যখন কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে লোকসভা ভোটে এল, সিপিএম দেওয়ালে লিখল, ‘দিল্লি থেকে এল গাই/ সঙ্গে বাছুর সিপিআই।’ সে বার কংগ্রেসের প্রতীক ছিল গাই-বাছুর। জরুরি অবস্থা জারি করার খেসারত দিয়ে ১৯৭৭-এ ধরাশায়ী কংগ্রেস। রায়বরেলীতে হেরে গেলেন ইন্দিরা স্বয়ং। পরের বছর কংগ্রেস (আই) গড়ে তিনি যেই হাত চিহ্ন বেছে নিলেন, বামেরা লিখল, ‘ঝোঁকের মাথায় নিলি হাত, এ বার ভোটে হবি কাত।’
advertisement
advertisement
poem_vote1
মাত্র আড়াই-তিন বছরের ব্যবধানে ইন্দিরা গাঁধীর পুনরুত্থানের নেপথ্যে ছিলেন তাঁর ছোট ছেলে সঞ্জয় গাঁধী। ইন্দিরার জয়কে কটাক্ষ করে বামফ্রন্টের দেওয়াল লিখন: ‘বড়লোকের বেটি লো, সাদা কালো চুল/ বাপের কোটে গোঁজা ছিল লাল গোলাপ ফুল।/ সেই বেটির বেটা লো, পাতলা পাতলা চুল/ দেশ জুড়ে ফুটিয়ে দিল হলুদ সর্ষেফুল।’
advertisement
কর্ণাটকের চিকমাগালুর থেকে কিন্তু উপনির্বাচনে জিতে ফিরে এলেন ইন্দিরা। এ বার কংগ্রেসের পাল্টা, ‘রায়বরেলী ভুল করেছে, চিকমাগালুর করেনি সিপিএম জেনে রাখো, ইন্দিরাজি মরেনি।’ প্রধানমন্ত্রী তখন মোরারজি দেশাই, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। নড়বড়ে জনতা সরকার পড়ে গিয়ে ১৯৮০-র ভোট আসতেই কংগ্রেসের সুপারহিট চিমটি, ‘মোরারজি-জ্যোতি মাতব্বর, পিঁয়াজ-আপেল এক দর।’
poem_vote2
advertisement
দীর্ঘ ৩৪ বছরের পাকাপোক্ত বাম রাজ্যপাট। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় বিরোধীদের দেওয়াল লিখনই উল্লেখ্য। কংগ্রেসি দেওয়াল লিখন: ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে/ ছাঁদনাতলায় কে?/ হাতি নাচছে, ঘোড়া নাচছে/ জ্যোতিবাবুর বে।’ বামপন্থীদের জবাব: ‘ঠিক বলেছিস ঠিক বলেছিস ঠিক বলেছিস ভাই।/ ইন্দিরাকে ছাঁদনাতলায় সাজিয়ে আনা চাই।’ বিলো দ্য বেল্টের বিকল্প কোনও কালেই নেই। কংগ্রেস এক সময় লিখেছিল: ‘দেহের শত্রু প্যাঁচড়া খোস/ দেশের শত্রু জ্যোতি বোস।’
advertisement
poem_vote1
১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে এল সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত দেওয়াল লিখন, বফর্স-কেলেংকারি নিয়ে: ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়/ রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’
নব্বই দশক পর্যন্তও রাস্তায়, দোকানে, স্টেশনে কৌটো নেড়ে চাঁদা তুলত সিপিএম। কংগ্রেসও তাই নিয়ম করে লিখত, ‘দিনের বেলা কৌটো নাড়ে, রাতের বেলায় ফিস্ট/ ভোটের সময় এরাই বলে আমরা কমিউনিস্ট।’ গ্রাম্য কাজিয়াও ছিল।
advertisement
poem_vote3
১৯৯৮-এর ১ জানুয়ারি জন্মাল তৃণমূল। ২০০১-এর বিধানসভা ভোটে মন্ত্র হয়ে উঠল এক অদৃশ্য ছড়া। দেওয়াল লিখন নয়, মুখে-মুখে ফিরতে লাগল, ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘এ বার নইলে নেভার।’ সে বার কিন্তু হল না। দশ বছর পরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পার করে রাজ্য যখন পরিবর্তনের ভোটে যাচ্ছে, ছড়া বলল ‘কৃষক মেরে টাটা প্রেম, এরই নাম সিপিএম।’ বাকিটা ইতিহাস।
advertisement
poem_vote4
২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের লিখন: ‘হাত উঠেছে ফুল ফুটেছে/ জোট করেছে কে/ দিদি নাচছে দাদু নাচছে/ দেশ ভোগে যাকগে।’ তৃণমূল লিখল: ‘যেখানে বুদ্ধ সেখানে যুদ্ধ/ যেখানে বিমান সেখানে কামান/ যেখানে জ্যোতি সেখানে ক্ষতি/...বুদ্ধ-মোদী একই নাম/ দেখিয়ে দিল নন্দীগ্রাম।’ এবং অবশ্যই: ‘টাটা আর ন্যানো গেল/ বাংলা হল শুদ্ধ/ আর কটা দিন সবুর করো/ এবার যাবে বুদ্ধ।’ বামফ্রন্টের পালটা: ‘দিদিরা যখন ন্যানো তাড়ায়/ দাদারা যায় সাথে/ বেকার যুবক ভোট দেবে না/ ফুলে কিংবা হাতে।’ এবং ‘নোটন নোটন চিল-শকুনে জোটন বেঁধেছে/ ...দিদির হাতে মিথ্যে ছিল ছুঁড়ে মেরেছে/ আস্তে, দিদি, মানুষ জেগেছে।’
poem_vote5
‘পরিবর্তন’ আসার পর, মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে ছড়াল: ‘কাল ছিল লাল খালি/ আজ ফুলে যায় ভরে।’ অবশ্য এসএমএস বা ফেসবুকের ওয়াল-এ লেখাকে ‘দেওয়াল লিখন’ ধরে নিলে, ঝুলি উপচে পড়বে ৷
কিন্তু ইতিহাস মানেই তো চাকার ঘুরপাক। এখন কোথাও দেওয়ালে ফুটে উঠছে, ‘একই বৃন্তে দুটি ফুল, চিটফান্ড আর তৃণমূল।’ কোথাও আবার ‘একি পরিবর্তন আনলে কাকা/ বাজার গিয়ে পকেট ফাঁকা।’ বামেরা দুর্বল বটে। কিন্তু পাঁক থেকে মাথা তুলছে পদ্মফুল। মমতা যতই আওড়ান, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে তৃণমূল ঘরে ঘরে’, চুপচাপ ফের মুখে-মুখে চলতে শুরু করেছে আর একটি ছড়া বড় গাছের ফল খাও, চারাগাছে জল দাও।
poem_vote6
এ সব বিরোধী বক্তব্যকে পালটা চ্যালেঞ্জ, বঙ্গের শাসক কণ্ঠে— ‘হাত, হাতুড়ি কাস্তে তারা/ এবার হবে বাংলা ছাড়া/ ফুটবে নাকো পদ্মফুল/ ভারত গড়বে তৃণমূল।’ কিংবা: ‘সূর্য কাঁদিয়া কহে, বিমান আমার ভাইরে/ বুদ্ধকে বলে দিও, ভারতে বামফ্রন্ট আর নাইরে।’ আর আছে যুগসই ট্রেন্ডি ওয়ান-লাইনার: ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল/ সব কেন্দ্রে তৃণমূল।’
কে জানে, চুন রং করা দেওয়ালের মন আর মুখ এক কি না?
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
দাদাঠাকুরের যুগ থেকে আজকের ফেস্ট‌ুন...ছড়ায়-স্লোগানে আজও মুখর ভোট রাজনীতি
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement