পদ্ম নয়, ১০৮ নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধি পুজো হয় দর্জিপাড়ার মিত্র বাড়িতে

Last Updated:

এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে খিচুড়ি ও মিছড়ি-মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অব্রাহ্মণ পরিবার বলে অন্নভোগ দিতে পারেন না ৷ রান্না করা ভোগের বদলে কাঁচা আনাজে হলুদ মাখিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভোগের থালা। সব শেষে পানের খিলি। পান পাতার শিরা দিয়ে তৈরি খিলি। দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মত। আদরের নাম ঝাড়খিলি।

#কলকাতা: বাড়িটা বেশ পুরনো...আবার বলা যায় নতুনও ৷ কারণ এ বাড়িগুলো যেন পুরনো হয় না ৷ শুধু বয়স বাড়ে...কিন্তু বয়স বাড়তে বাড়তে দু’দালান বিশিষ্ট সাদা পাঁচ খিলানের সৌন্দর্য্য যেন আরও খোলতাই হয়েছে ৷ ঘরের মেয়ের ঘরে আসার আনন্দে বাড়িটা নতুন করে সেজে উঠছে ৷
১৯/সি নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্রবাড়ি ৷ এখন এ বাড়ির মালিকানা বাড়ির মেয়েদের হাতে ৷ নারীশক্তির আরাধনার প্রধান দায়িত্বে বাড়ির বড় মেয়ে অনুসূয়া বিশ্বাস মিত্র ৷ পরিষ্কার তকতকে ঠাকুরদালানে ঝাড়বাতিগুলো এখন শান্ত আলো ছড়াচ্ছে ৷ তার মধ্যেই চলছে মায়ের সাজগোজ ৷ সদ্যই ঘাম তেল পড়েছে প্রতিমার গায়ে ৷ ঝাড়বাতির আলো যেন ঠিকরে পড়ছে মায়ের ত্রিনয়ন থেকে ৷ এই আবহেই অনুসূয়াদেবীর কথায় ফিরে যাওয়া সেই দু’শ বছর আগেকার কোনও এক দিনে ৷
advertisement
advertisement
উত্তর কলকাতার বিখ্যাত রাস্তা নীলমণি মিত্র স্ট্রিট, তাঁর ছেলে রাধাকৃষ্ণ মিত্র এই পুজোর প্রবর্তন করেন। আড়িয়াদহ থেকে ভাগ্যান্বেষণে সুতানুটি অঞ্চলে আসেন এই পরিবারের জগন্নাথপ্রসাদ মিত্র। রাঢীয় কায়স্থ সম্প্রদায়ভুক্ত দর্জিপাড়া মিত্র বংশের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। তিনি কী ব্যবসা করতেন তা জানা যায় না। তবে তাঁর পৌত্র দুর্গাচরণ ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’। এছাড়াও তাঁর বহুবিধ ব্যবসা ও নুনের দেওয়ানি ছিল। সেই কাজের দফতরে একদা কাজ করতে আসেন সাধক-কবি রামপ্রসাদ সেন। হিসেবের খাতায় তাঁর লেখা গান পড়ে খুশি হয়ে হয়ে দুর্গাচরণ রামপ্রসাদকে আজীবন মাসোহারার ব্যবস্থা করে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সাহিত্য-সংগীতচর্চার জন্য।
advertisement
দুর্গাচরণের ভ্রাতুষ্পুত্র নীলমণি মিত্রও ছিলেন সে যুগের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। নীলমণি মিত্রর পৌত্র তথা রামদুলাল সরকারের জামাই সে যুগের নামকরা আমদানি-রফতানির ব্যবসায়ী রাধাকৃষ্ণ মিত্র ১৮০৬-এ দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ির দুর্গোৎসবের সূচনা করেন। এখন রাধাকৃষ্ণের মেজো ছেলে রাজকৃষ্ণ মিত্রের বংশধরেরা এই পুজো করে আসছেন। ২১৩ বছরে পড়ল এই পুজো ৷ এই ঠাকুদালানেই পুজো হয়ে আসছে এত বছর ধরে ৷ রাধাকৃষ্ণ মিত্রের পঞ্চম বংশধরের কোনও ছেলে না থাকায় এখন বাড়ির মেয়েরাই এই পুজো পরিচালনা করেন। বাড়ির প্রতিমার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷ বৈশিষ্ট্য রয়েছে পুজোর আচার আর নিয়মকানুনেও ৷ সবই উঠে এল অনুসূয়াদেবীর কথায় ৷
advertisement
এখানে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর দেবীমুখ এবং কার্তিক ও অসুরের মুখ বাংলা ধাঁচের হয়। বাংলা ধাঁচের মুখের বিশেষত্ব হল, প্রতিমার চোখ সাধারণ মানুষের মতোই। অন্যদিকে দেবীমুখ বলতে বোঝায় টানা টানা চোখের প্রতিমা। পুরনো সেই দেবীর মুখের ছাঁচ আজও সংরক্ষণ করে রাখা আছে ৷ তিনচালা প্রতিমা। পিছনে মঠচৌড়ি। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর পিছনে তিনটি অর্ধবৃত্ত। তার উপর মাটির নকশা করা তিনটি মঠের চূড়ার আকৃতির চালি। দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে পরানো হয় ডাকের সাজ। কোঁচানো ধুতি পরেন কার্তিক, গণেশ। সিংহ ঘোড়ামুখো । এ পুজোর যাবতীয় সাজ কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হাতে ৷ কার্তিকের চুল থেকে মায়ের সাজসজ্জা...সবটাই ৷
advertisement
এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে খিচুড়ি ও মিছড়ি-মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অব্রাহ্মণ পরিবার বলে অন্নভোগ দিতে পারেন না ৷ রান্না করা ভোগের বদলে কাঁচা আনাজে হলুদ মাখিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভোগের থালা। সব শেষে পানের খিলি। পান পাতার শিরা দিয়ে তৈরি খিলি। দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মত। আদরের নাম ঝাড়খিলি। ফুলের পাপড়ির আকারে চারপশে সাজানো থাকে নানা রকম পানমশলা। পদ্ম নয়, ১০৮ টি নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয় মিত্র বাড়ির ‘মেয়ে’র।
advertisement
পাঁচদিন মেয়েকে ঘিরে হইচই। এবার বিদায়ের পালা। ঠাকুরদালান থেকে ছেলেদের কাঁধে চেপে উঠোনে নামেন উমা। শুরু হয় প্রদক্ষিণ, বরণ, সিঁদুর খেলা। মেয়ের শাঁখা পলায় সিঁদুর ছুঁয়ে, মুখে পানের খিলি, মিষ্টি গুঁজে কানে কানে তাঁকে সকলে বলেন, ‘আবার এসো মা ৷’ দশমীর দেবীবরণের পর প্রতিমার মুখে দেওয়া হয় সুগন্ধি ছাঁচিপান আর হাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ঝাড়খিলি। প্রথমে দুর্গা, তার পর একে একে অন্য প্রতিমার হাতে। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীর পাশাপাশি সিংহ, ময়ূর-সহ দেবতাদের বাহনরাও বাদ যায় না এই ঝাড়খিলি থেকে। দশমীতে মোট ২৭টি পানের ঝাড়খিলি তৈরি করা হয় সকলের জন্য। এখানে আজও কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে ৷ সেখানেই হয় বিজসর্জন ৷ ধুতি পরে, লাঠি হাতে, খালি পায়ে বাড়ির পুরুষরা গঙ্গায় বিসর্জন দিতে যান উমাকে। বিসর্জনে বাড়ির মেয়েদের যাওয়ার নিয়ম নেই ৷
advertisement
ছবি: মিত্রবাড়ির সৌজন্যে
view comments
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
পদ্ম নয়, ১০৮ নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধি পুজো হয় দর্জিপাড়ার মিত্র বাড়িতে
Next Article
advertisement
MGNREGA: মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! কোটি কোটি কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে আঘাত, কেন্দ্রের নয়া ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
মনরেগাকে ধ্বংস করেছে মোদি সরকার! ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক সনিয়ার
  • মনরেগা প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব সোনিয়া গান্ধি

  • কংগ্রেসে নেত্রীর দাবি, মনরেগা প্রকল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিল বিজেপি

  • প্রকল্পকে বদলের আইনকে ‘কালো আইন (ব্ল্যাক ল)’ বলে উল্লেখ্য সোনিয়ার৷

VIEW MORE
advertisement
advertisement