#দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কয়েকদিন পরেই সেজেগুজে প্রতিমা পৌঁছবে মণ্ডপে। টানা চোখ আর একঢাল কোঁকড়া চুল দেখে মুগ্ধ হবেন সবাই। যাঁরা প্রতিমাকে নকল পাটের চুলে সুন্দর করছেন তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মীরপুরের কয়েকশ মুসলমান পরিবার পাটের চুল তৈরি করে। সম্প্রীতির মত ভারী শব্দ ওঁরা বোঝেন না। ওঁরা বোঝেন, পেটের টান।
রাস্তার ধারে বাঁশের খুঁটিতে থরে থরে ঝোলানো কালো রঙের বিনুনি। এক ঝলক দেখে চুল বলে ভুল হতে পারে। এগুলো অবশ্য চুল, তবে আসল নয়। নকল। পাট দিয়ে তৈরি নকল চুলে ঢাকবে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকের মাথা।
আসলে উৎসবের উঠোনে ধর্মের কোনও জায়গা নেই। পুজো এলেই তাই নকল চুল তৈরি করেন মুসলমানরা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুরের মীরপুর গ্রামের মল্লিকপাড়া মুসলমান অধ্যুষিত। প্রত্যেকেরই মুখে ভাত জোটে পাটের চুল তৈরি করে। তাই হিন্দু-মুসলমান এত ভেদাভেদ ওঁরা বোঝেন না। সারাবছরই পাটের চুল তৈরি করেন ওঁরা। তবে পুজো এলেই যা লাভ। দম ফেলার ফুরসৎ নেই। চুল আঁচড়ে, বিনুনি তৈরি চলছে দিনরাত।
প্রথমে বাজার থেকে কেনা হয় সাদা পাট। এরপর সেই পাট কেটে রঙে ভিজিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় । তাকে তেল দিয়ে ছেনে বিনুনি তৈরি করে প্যাকেটে করে কলকাতার বাজারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় পাটের চুল।
এবার অবশ্য বাধ সেধেছে বৃষ্টি। দেরিতে বর্ষা আসায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত পাটের চুল ব্যবসায়ীরা। সারাদিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি হওয়ায় চুল শুকোতে সমস্যা হচ্ছে।
শুধু দুর্গা নয়, কালী, জগদ্ধাত্রী, সরস্বতী প্রতিমার মাথাতেও শোভা পায় মীরপুরের মুসলমানদের তৈির পাটের চুল। উৎসব যেন বারবার মনে করায়, হিন্দু-মুসলিম সব ভেদাভেদ মিথ্যে। উৎসব আক্ষরিক অর্থেই সবার। মিলেমিশে যাওয়ার। উৎসব সত্যিই একই বৃন্তে দু’টি কুসুম ফোটায়...