Fathers Day 2020 | রবীন্দ্রনাথকে লেখা মেয়ে বেলার চিঠি
- Published by:Uddalak Bhattacharya
- news18 bangla
Last Updated:
রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান মাধুরীলতা দেবী। কবি তাঁর নাম রেখেছিলেন বেলা। মাত্র চার বছর বয়েস থেকে বেলা বাবাকে চিঠি লিখত। রবীন্দ্রনাথ কাবুলিওয়ালা গল্পে মিনিকে তৈরি করেছিলেন তাঁর এই আদরের কন্যার আদলেই। ১৯১৮ সালে, মাত্র ৩১ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে বেলার মৃত্যু হয়। আজ ফাদার্স ডে-তে বাবাকে লেখা বেলার অসংখ্য চিঠির একটি পাঠকের জন্য থাকল। চিঠিটি বাবা মেয়ের সম্পর্কের দর্পন, আবার সংসারী রবীন্দ্রনাথের উদ্ভাসও বটে।
বাবা,
আজ তোমার চিঠি পেয়ে খুসি হলুম।
তুমি যে "deperture postpone" করেছো শুনে Mr. Lawrence খুব হেসেছেন। তিনি বল্লেন,
advertisement
Mr Tagore always he is coming but never comes; that's his way, I know that Miss.
"পরশু রথী আমাকে পড়ূবার সময় 'বেলা' বলে ডেকেছিল। Mr. Lawrence বললেন,
You must never call that young leday there Bela, but always Miss MadhuriLata Bela Tagore, you hear?
advertisement
কাল আধ ঘণ্টা ধরে আমাদের সঙ্গে এমনি কথা বলছিলেন। এ কথা ও কথার পরে এই সাধারণ লোকদের কথা তুলে জিজ্ঞেস করেন, "এরা তো সব Uneducated Uncivilised people, এরা সারাদিন কী ভাবে? আমি বললুম কেন? প্রায় সারাদিনটা তো ভাবার সময় পায় না, তার উপর যখন কাজকর্ম করে একটু অবসর পায়, তখন নিজের ভরণপোষণের কথা ভাবে।" সাহেব বললেন একবার ভেবে দেখো, ওরা কিচ্ছু জানে না। geography, history, science সব আছে তাও কিছু জানে না। তা যদি জানত তাহলে নিজের লাইফটাকে অত তুচ্ছ মনে করে ওদের প্রভুদের জন্য দিত না। এখন ওদের যে ছেলেপিলে তারা পাঠশালা যাচ্ছে, তাদের পাখা টানবার জন্য ডাক তারা আসবে নাষ পোকা দেখবার জন্য ডাক তাতেও আসবে না। ওরা এখন হয় বরকন্দাজ নয় আর কিছু এই সাধারণ চাকরের চেয়ে কিছু বেশি কাজ করবে। ওরা এখন নিজের Life-কে Valuable মনে করে নিজের পিতা পিতামহের চেয়ে যত্ন করবে। দেখো! ওদের ভাববার অনেক জিনিষ আছে। ওরা পাঠশালায় কি২ পড়া হল তার আলোচনা ইত্যাদি আলোচনা করবে, কিন্তু কেতু চামরু, এরা অশিক্ষিত এবং পৃথিবীর কিছু জানেনা। এদের অবস্থা কি ভয়ানক। বাস্তবিক। এরা যদিও আনএডুকেটেড। কিন্তু এরা, আমার যা মনে হয়, educated, Civilised people এর চেয়ে বিশ্বাসী ও সরল। তুমি কি বল? আমি আজ তোমার চিঠি পেয়েই নীদ্দাকে "কুর্নিস" করে বললুম, টেগোর সাহাব। মেজাজ সরিফ?" তাতে বরং হীতে বিপরীত হল। তিনি বললেন যাও যাও আর অত মেজাজ সরিফ টরিফ করতে হবে না।" আমি তো ওঁর সঙ্গে ঝগড়া করিনে, উনিই গায়ে পেতে ঝগড়়া করেন। তোমার গাছ এখনও পৌঁছয়নি।
advertisement

সত্যি বলছি মুরগী খেয়ে খেয়ে মুরগীর উপর অরুচি ধরে গেছে। পদ্মার ইলিশ নীদ্দার যদিও খুব ভাল লাগে কিন্তু যদি রোজ ইলিশ খান, তাহলে তো বড় সুবিধে না। রানীর ভাতের আয়োজন নীদ্দা এখন থেকে করছেন। ভাত মানে বুঝেছো?তার আগে বৌ জুড়ে দিলে যা হয়। ৫০০০ টাকার হীরের গয়না, মুক্তার গয়না, সোনার প্লেন আর ডায়মন্ড কাটা গয়না আর বেনারসি ১০|১২ খানা ফরমাস দেওয়া কাপড়। কাপড়গুলি মা দেবেন। আজ আমার অনুপস্থিতিতে আমার একখানা সোনার নেকলেস বিক্রি হয়েছিল। আমি এসে নীদ্দাকে বললুম যে যদি হাতে ২২১১৫ টাকা দেন তবে বিক্রি করতে পারি। কাল রাত্রে ১২ টার সময়ে মা তোমার টেলিগ্রাফ পেয়েছেন। আমাদের কাউকে তার কথা বলেননি। সকাল বেলায় বল্লেন, তোরা কেউ বাজি রাখবি? উনি আজ আসবেন না। নীদ্দা পাঁচ টাকা, রথী এক টাকা, রাণী আর আমিও তাই। মা এত জোরের সঙ্গে বললেন যে রথীর সন্দেহ হল, সে ভোলা নেহাল ওদের জিজ্ঞেস করে টের পেল যে রাত্রে টেলিগ্রাফ এসেছিল। মা বল্লেন, না ও জমিদারী টেলিগ্রাফ, ভুলে আমাকে পাঠিয়েছিল ইত্যাদি বলে কাটাতে চেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু তা হল না। কাল 'ন্যাপ' খেলতে মার কাছে শিখলুম! স্পেকিউলেশান এর আগে শিখেছি। কিম্ এলে তোমার খেলা দেখব তুমি যেত কিনা। আর কোনও খবর নেই। তুমি সোমবার কি ঠিক আসছ্? আমাদেরএখানকার খবর সব ভাল।তুমি আমার প্রণাম নাও।
advertisement
ইতি তোমার বেলা।
পু: নীদ্দা হারমোনিয়াং সারিয়ে দিয়েছেন।
শিলাইদা | শুক্রবার
নীদ্দা - নীতীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথের ছেলে।
মি: লরেন্স- গৃহশিক্ষক। এছাড়াও বেলাকে পড়়াতেন মিস্ পার্সন্স, মিস্ এলজি, মিস্ লিটেন, শিবধন বিদ্যার্ণব ও পণ্ডিত হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য।
(মূল বানান অপরিবর্তিত রইল)
Location :
First Published :
June 20, 2020 7:56 PM IST