Independence Day 2021: স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশ পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলেন! আজও সেই স্মৃতি মনে পড়ে হাওড়ার প্রবীণ লেখকের
- Published by:Swaralipi Dasgupta
- news18 bangla
Last Updated:
India-Independence Day 2021: দেশ স্বাধীনের সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা নিয়ে তিনি দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন হাওড়া, কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা।
নয় নয় করে গত নভেম্বরেই পেরিয়ে এসেছেন ৯৩টি বসন্ত । বয়সের ভারে তাঁর মুখের চামড়ার ভাঁজে যেন প্রতিফলিত হয় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। হাওড়ার অন্যতম প্রবীণ ও জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী দুঃখহরণ ঠাকুর চক্রবর্তীর জীবন কাহিনী যেন সেকাল আর একালের মধ্যে এক মেলবন্ধনের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
এখনও তাঁর মনে পড়ে ১৯৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কথা । দেশজুড়ে যখন সমস্ত বিপ্লবীদের মুখে একটাই আওয়াজ গর্জে উঠছে " ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো " , সেই আওয়াজের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে পথ হেঁটেছিলেন সে সময়ে বছর ১৫-র কিশোর দুঃখহরণ ঠাকুর চক্রবর্তী । সেই বয়সেই তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন শাসক-বিরোধী একাধিক কর্মকান্ডের সঙ্গে। তারপর দেশ স্বাধীনের সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা নিয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন হাওড়া, কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা।
advertisement
প্রবাদ প্রতিম এই স্বাধীনতা সংগ্রামী দুঃখহরণ বাবুর জন্ম হয় ১৯২৭ সালের ৩০ নভেম্বর। ডোমজুড়ের ঠাকুর চক্রবর্তী পরিবারের চিন্তাহরণ ঠাকুর চক্রবর্তী ও চারুবালা দেবীর কোলে জন্ম হয় তাঁর। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতৃহীন হওয়ার পরে নানা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় তাঁর বাল্য জীবন। ব্রাহ্মণ হওয়ার সুবাদে অভাবের হাত থেকে সংসারকে বাঁচাতে ১১ বছর বয়স থেকেই বেছে নেন পৌরহিত্যের পেশা। সেই সময়ে হাওড়ার পাশাপাশি হুগলির বহু দূর দূরান্ত এলাকায় পায়ে হেঁটেই তাঁকে যেতে হতো পৌরহিত্যের কাজে । খুদে পুরোহিত বলে লোকজনের ভালোবাসাও পেতেন।
advertisement
advertisement

যদিও অনেক ছোটবেলা থেকেই শাসক বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পুলিশের মিথ্যা মামলার হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতে হতো তাঁকে। তাই বাল্যজীবনের বেশিরভাগ পরীক্ষাই তাঁকে দিতে হয় প্রাইভেটে। স্বাধীনতা আন্দোলনে তখনকার বেশ কয়েকজন শিক্ষকের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক কম বয়সেই তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে । মূলত বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন জেলার এই প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাই সে সময়কার শাসক দলের পাশাপাশি, কংগ্রেসের নানা ষড়যন্ত্রের জেরে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে হতো তাকে। কয়েকবার কারাবাসেও থাকতে হয়েছিল তাঁকে।
advertisement
৪২ এ গান্ধীজির গ্রেফতারের পরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার আঁচ এসে পরে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে। তখন ঝাঁপড়দহ ডিউক ইনস্টিটিউশনের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছেন কিশোর দুঃখহরণ। বিদ্যালয়ের নবম দশম শ্রেণির ছাত্রদের উদ্যোগে গান্ধীজির গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং ব্রিটিশ বিরোধী মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এই কিশোর ছাত্র। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে এবং আরও কয়েকজন ছাত্রকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে বাঁকড়া বাজারে তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে!
advertisement
১৯৪২ এর গণ আন্দোলনে যোগদানের পাশাপাশি তৎকালীন ও ১৯৪৭ এ দেশ স্বাধীনের মধ্যবর্তী সময়ে জেলার বিপ্লবীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্রিটিশবিরোধী নানান বৈপ্লবিক কর্মকার্যে অংশগ্রহণ করেন দুঃখহরন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও জনগণের হিতৈষীমূলক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী দুঃখহরণ বাবু। দীর্ঘদিন ডোমজুড়ের সিপিআইএম পার্টির লোকাল কমিটির সদস্য ও সম্পাদক পদে নিযুক্তও ছিলেন তিনি।
advertisement
স্বাভাবিক নিয়মেই বয়সের প্রভাব শরীরের উপর পড়লেও মনের দিক থেকে এখনও খুবই সবল জেলার এই প্রবীণ বিপ্লবী। এখনও নিজের সমস্ত কাজ নিজে করতেই পছন্দ করেন। বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি কিছুটা দুর্বল হলেও এখনও গড়গড়িয়ে বলে যেতে পারেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে নিজের লেখা কবিতা "আবার সে কবে নবান্ন মন; ছড়াবে সুরভী আগের মতন; আবার সে কবে, নিকনো উঠনে, পেতে দেবে ভালোবাসা। নদী হতে আসা শীতল বাতাস; মেলে দেবে তার স্রোতের সুবাস; আবার সে কবে, বাতায়ন পথে, শুরু হবে আলো আশা।। "
advertisement
শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই নয়, জেলার প্রবীণতম নাগরিকদের মধ্যে অন্যতম সুপণ্ডিতও হলেন দুঃখহরণ বাবু। জেলার পুরনো ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামে হাওড়া জেলার অবদান নিয়ে তিনি লিখে গিয়েছেন একাধিক বই। তাঁর লেখা 'স্বাধীনতা আন্দোলনে হাওড়া জেলা' বইটি জেলার স্বাধীনতার ইতিহাস গবেষকদের কাছে অন্যতম প্রামাণ্য বই হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও, 'মহৎ জীবনের আনাচে-কানাচে', 'সেই দ্বিজোত্তম', 'পদধ্বনি', 'চেনা হাওড়ার অজানা কথা', 'সঙ্গীতাঞ্জলী', 'রোদের রঙ', 'তেভাগা আন্দোলনে হাওড়া জেলা'-র মতো একাধিক বই লিখেছেন তিনি । কবিতা ও কাব্য রচনার জন্য নানা জায়গা থেকে পেয়েছেন বহু পুরস্কারও।
প্রবাদপ্রতিম এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর সম্পর্কে বিশিষ্ট হাওড়া জেলার ইতিহাস গবেষক সন্দীপ বাগ জানান , "১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে হাওড়া জেলা থেকে যে সমস্ত বিপ্লবী সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দুঃখহরণবাবু। নানা জায়গায় সেই সময়কার সক্রিয় গণতন্ত্রের অর্থাৎ কংগ্রেসি নেতাদের নাম থাকলেও দুঃখহরণবাবুদের মতো সক্রিয় বিপ্লবী বা গুপ্ত আন্দোলনের নেতাদের নাম কোথাও তেমন ভাবে উল্লিখিত নেই। কিন্তু ভারতবর্ষের ১৯৪৭ এ স্বাধীনতা লাভের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান দুঃখহরণ ঠাকুর চক্রবর্তীদের মতো সক্রিয় বিপ্লবী বা গুপ্ত আন্দোলনের নেতাদেরই ছিল।"
শান্তনু চক্রবর্তী
Location :
First Published :
August 13, 2021 4:38 PM IST