বিপ্লবী বেশে এক ফুটবলার..
- Published by:Elina Datta
- news18 bangla
Last Updated:
স্বয়ং ভারতবর্ষের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ তার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন মোহনবাগান মাঠে যেতেন গোষ্ঠ পালের খেলার টানে ৷ গোষ্ঠ পাল খুব বিরল মানুষদের একজন যিনি মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট ,হকি এবং টেনিস দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন ৷
সালটা ১৯২৮ মোহনবাগানের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ তৎকালীন যুগের অন্যতম সেরা টীম ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবের ,খেলা শুরু হবার কিছুক্ষণ পরে খুব তাড়াহুড়ো করে এক স্বাস্থ্যবান পুরুষ মাঠে অবতীর্ণ হলেন " ধুতি " পরিহিত অবস্থায় শুরুতে প্রতিপক্ষ টিমের খেলোয়াড়েরা কেউই প্রতিবাদ করলেন না কিন্তু খানিক বাদেই যখন সেই মানুষ ৪ বল করে ২ উইকেট তুলে নেয় তখনই আরম্ভ হয় প্রতিবাদ মানুষটির " নেটিভ পোশাক " নিয়ে এর জেরে খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ৷
পাঠকরা অনেকেই ভাবছেন কে এই বোলার? তিনি আর কেউ নন চীনের প্রাচীর খ্যাত গোষ্ঠ পাল ৷ এবার ফেরা যাক তার ফুটবল জীবনে ৷ প্রায় ২৩ বছর তিনি মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে ফুটবল জীবন অতিবাহিত করেছিলেন ৷ গোষ্ঠ পালের জন্ম ১৮৯৬ সালের ২০ অগাস্ট তৎকালীন বাংলাদেশের মাদারীপুর সাব ডিভিশনের ফরিদপুরের ভোজেশ্বর গ্রামে ৷ বাবা মা-র একমাত্র সন্তান ছিলেন গোষ্ঠ পাল তার বাবা শ্যামলাল পাল ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ৷ ছোটবেলা থেকেই গোষ্ঠ পালের ধ্যান জ্ঞান ছিল ফুটবল, ১৯০৭ - ১৯১২ তিনি খেলেছিলেন কলকাতার কুমারটুলি ক্লাবে ৷ পরবর্তী কালে ১৯১৩ সালে তিনি মোহনবাগানে আসেন এবং বাকি জীবন এই ক্লাবেই থেকে যান ৷
advertisement
এই গোষ্ঠ পাল কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর শ্যাম পার্কে আয়োজিত একটি ফুটবল ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন ৷ এ কথাও শোনা যায় ১৯২৮ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তার কাছে প্রস্তাব দেয় ১ লক্ষ টাকা এবং পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে একটি বাড়ি কিনে দেবার যদি তিনি তাদের হয়ে খেলেন কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ৷ মোহনবাগান ক্লাবেকে তিনি মা ডাকতেন তাই কোনোদিন ক্লাবের থেকে একটি পয়সাও নেননি ৷
advertisement
advertisement

গোষ্ঠ পাল খুব বিরল মানুষদের একজন যিনি মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট ,হকি এবং টেনিস দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন ৷ পরম দেশপ্রেমিক এই মানুষটি গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনকে সম্মান জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ফুটবল খেলার আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি ৷ নেতাজির প্রতি ছিল তার অগাধ শ্রদ্ধা তিনি বলতেন দেশের জন্য যদি কেউ ভাবেন তা হল নেতাজি ৷ স্বয়ং ভারতবর্ষের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ তার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন মোহনবাগান মাঠে যেতেন গোষ্ঠ পালের খেলার টানে ৷ তিনি অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে মোহনবাগান প্রথম রোভার্স এবং ডুরান্ড কাপে অংশগ্রহণ করে।
advertisement
গোষ্ঠ পাল কিন্তু সিনেমায়ও অভিনয় করেছিলেন ৷ আনন্দমোহন রায় পরিচালিত, ১৯৩২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নির্বাক চলচ্চিত্র ‘গৌরীশঙ্কর’-এ একজন বিপ্লবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।১৯৬২ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তাকে "পদ্মশ্রী" পুরস্কারে সম্মানিত করে তিনিই ছিলেন প্রথম ফুটবলার যিনি পদ্ম পুরস্কার পান I এমনকি ব্রিটিশ সরকার তাকে " চৌধুরী " উপাধি দিয়ে ভূষিত করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি ৷
advertisement
১৯৩৩ সালে ভারতীয় দল নিয়ে সিংহল (বর্তমানে শ্রীলংকা) সফর করেন , ১৯৯৮ সালে ভারত সরকার তার নামে " ডাকটিকিট" প্ৰকাশ করে ৷ তিনিই ছিলেন প্রথম ফুটবলার যার নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় ৷ ময়দানের গোষ্ঠ পাল সরণীতে তাঁর মূর্তি স্থাপিত হয় ১৯৮৩ সালে। যে মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন মোহনবাগান সভাপতি উমাপতি কুমার। ২০০৪ সালে মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে মরণোত্তর ‘মোহনবাগান রত্ন’ সম্মান প্রদান করা হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবধি তাকে অগাধ সম্মান করতেন ৷ দৈনিক ইংলিশমান পত্রিকা তাকে " চাইনিজ ওয়াল " উপাধিতে ভূষিত করেছিল ৷ গোষ্ঠ পাল ছিলেন জেল না খাটা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষ তাই তার ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই এই প্রাতঃস্মরণীয় ফুটবলারকে।..
advertisement
ঋত্বিক ঘোষ
view commentsLocation :
First Published :
August 20, 2020 8:04 PM IST