উপন্যাস একটা দু'বছরের সম্পর্ক, ছোটগল্প ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড: কুণাল বসু

Last Updated:
#কলকাতা:
''ইয়েস মিস্টার বাসু, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ ?''
''আই অ্যাম লুকিং ফর সাম জিগোলো'জ!''
advertisement
বলতে বলতে নিজেই হেসে ফেললেন, '' কলকাতা পুলিশ কমিশনারের ঘরে প্রথমবার ঢুকে, প্রথম এই কথাটাই বলেছিলাম! ''
তাঁর কথার মতোই তাঁর কলমও ঠিক এতটাই এতটাই সাবলীল, এতটাই স্পষ্ট! এই প্রজন্মর অন্যতম খ্যাতনামা লেখক কুণাল বসু! লেখার পাশাপাশি তিনি অক্সফোর্ডের শিক্ষক!  অনেকটা সময়ই লন্ডনে থাকেন। কিন্তু নিজের পরিচয় দেন, '' আমি বাঙালি, ইংরেজ বাঙালি নয়!''
advertisement
দশম 'এপিজে কলকাতা লিটেরারি ফেস্টিভ্যাল'-এ একটা আলোচনা সভার শেষে পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে, শীতের পড়ন্ত রোদে মিঠে আড্ডা জমেছিল ! বলে চললেন কুণাল,  '' তখন আমি আমার সাম্প্রতিকতম উপন্যাস 'কলকাত্তা'-র জন্য রিসার্চ করছি। একজন জিগোলোর জীবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাস গড়িয়েছে। সেই কারণেই কয়েকজন জিগোলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়োজন ছিল। অতএব পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া!''
advertisement
হঠাৎ জিগোলো কেন ?
একটা ঘটনা আমায় নাড়া দিয়েছিল। আমার গাড়ি নেই, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেই যাতায়াত করি বা হাঁটি। আমার মনে হয়, একজন লেখক যদি শহরে না ঘুরে বেড়ায়, তাহলে গল্পর রসদ পায়না ! একটা এসি গাড়িতে করে এসি বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়লে গল্পগুলো হারিয়ে যায়! এরকমই একদিন হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছিয়ে যাই সদর স্ট্রিটে। তখন অনেক রাত। দেখি সারিবাঁধা মোটর সাইকেলে বেশ কয়েকজন ছেলে বসে। দেখতে ভাল, গলায় সোনার চেন, হাতে রোলেক্স-এর ঘড়ি, গা থেকে দামী পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসছে! কৌতূহল হল ! কারা এঁরা ? কী করছেন এখানে ? কিছুর অপেক্ষা করছেন কী ? কী সেটা ? অনেকগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল! পাশেই একটা জুস বার ছিল। ঢুকে পড়লাম। বারের মালিককে জিজ্ঞেস করলাম ওঁদের কথা! তিনি বললেন, ওঁরা ট্যুর গাইড! আমার কৌতূহল তখনও মেটেনি। প্রশ্ন করতেই থাকলাম! শেষপর্যন্ত জানতে পারলাম ওঁরা জিগোলো বা মেল প্রস্টিটিউট।
advertisement
তারপর?
ভীষণ আবাক হলাম! প্রথম বিষয় যেটা মাথায় আঘাত করল...আমার জন্ম তো কলকাতাতেই, কই  জানতাম না তো এখানে এরকম একটা পৃথিবীও আছে! কৌতূহল বাড়তে থাকল ! রিসার্চ শুরু করলাম। জানতে পারলাম এঁদের বেশিরভাগই বিবাহিত কিন্তু  স্ত্রীরা তাঁদের পেশা সম্পর্কে কিছুই জানে না, যারা অবিবাহিত তাঁদের বাবা,মা বা বান্ধবীরাও জানে না! তাঁরা বাড়িতে বলেন আর পাঁচজনের মতোই চাকরি করে! তখনই মনে স্ট্রাইক করল-- এই মানুষগুলো তারমানে দ্ব্যার্থ জীবন যাপন করে! এখানেই  'ফিকশন'-এর গন্ধ পেলাম!''
advertisement
প্রথম উপন্যাস 'দ্য ওপিয়াম ক্লার্ক' থেকে শুরু করে 'কলকাত্তা'... আপনার প্রতিটা উপন্যাসের বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর ! এত বৈচিত্র...
আমি কখনও কনশাস হয়ে কোনও বিষয় বাছিনা, সাবলীলভাবে আমার মধ্যে চলে আসে। যখন  দ্বিতীয় উপন্যাস 'দ্য মিনিয়াচুরিস্ট' প্রকাশিত হয়, অনেকেই ভেবেছিল আমি হয়তো আবার মুঘল জমানার উপরই কোনও উপন্যাস লিখব। কিন্তু পরের উপন্যাসের ব্যাকড্রপ ছিল ভিক্টোরিয়ান এরা। আসলে আমি তো কোনও ঐতিহাসিক, নৃতত্ববিদ বা সমাজবিজ্ঞানী নই! লেখার মধ্যে দিয়ে কোনও কিছু প্রতিষ্ঠা করারও কোনও তাগিদ নেই! আমি শুধু আমার দুরন্ত চিন্তাশক্তির চাহিদা মিটিয়ে যাই! প্রতিটা লাইন আমার চলমান কল্পনাশক্তির প্রতিচ্ছবি।
advertisement
লেখা আপনাকে কেন টানে ?
ছন্দের কারণে বোধহয়! আমার মা একজন বিখ্যাত  লেখিকা ছিলেন, বাবা প্রকাশক। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির আবেশে বড় হয়ে ওঠা! লেখক হব, এটা ভাবনাচিন্তা করে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত নয়! স্বাভাবিকভাবেই চলে এসেছিল! বরং ছোটবেলায় কিন্তু লেখক হওয়ার কোনও প্যাশন আমার মধ্যে ছিল না!
তাহলে ?
advertisement
ভেবেছিলাম শিল্পী বা অভিনেতা হব! কিন্তু দু'ক্ষেত্রেই 'ফেল' করে শেষপর্যন্ত লেখক হলাম !
আপনি তো খুব বেড়াতে ভালবাসেন...
আমার বেশিরভাগ ঘুরে বেড়ানোই লক্ষ্যহীন! এই যে সম্পূর্ণ অজানা একটা জায়গায় গেলাম, চারপাশের সেই অচেনা পরিবেশ আমায় দিবাস্বপ্ন দেখায়। আর গল্প তৈরির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দিবাস্বপ্নে মেতে থাকা।
লেখার জন্য কোনও বিশেষ 'মুড'-এর প্রয়োজন হয় ?
আমি লেখা পাগল! লেখার সঙ্গে সহবাস করি! আমার কাছে উপন্যাস একটা প্রেমের সম্পর্ক, যারসঙ্গে আমি দু'বছর কাটাতে পারব! একটা ছোটগল্প 'ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড'-এর মতো! রোজ ১০-১২ ঘণ্টা লিখি।  এটা আমার ভাল থাকার ওষুধ, না লিখলে ভাল থাকতে পারি না!
আগামী উপন্যাসের জন্য পাঠকদের আর কতদিন অপেক্ষা করাবেন ?
২০২০-র মাঝামাঝি পর্যন্ত। সমসাময়িক কলকাতার ব্যাকড্রপে উপন্যাসটা লিখছি।
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
উপন্যাস একটা দু'বছরের সম্পর্ক, ছোটগল্প ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড: কুণাল বসু
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement