বাঁকুড়ার সোমসার জমিদার বাড়ির পুজোয় পশু বলির রীতি নেই ! পুজোর চারদিন নিরামিষ
Last Updated:
প্রজাদের জন্য কলকাতা থেকে বিলিতি বস্ত্র আনা হত। আলোর রোশনাই , নহবতের সুর , যাত্রাপালা , রামলীলা , পুতুল নাচ ও কবিগানের আসর নিয়ে পুজো ছিল জমজমাট
#বাঁকুড়া: দামোদরের ধারে জমিদার বাড়ি। বাঁকুড়ার সোমসার গ্রামে পাল বংশের জমিদার বাড়িতে একসময় দুর্গাপুজোর আড়ম্বর ছিল দেখবার মত। নহবত বসত। যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, কবিগানের আসরে হইহুল্লোড়ে মেতে উঠত হিন্দু-মুসলিম সবাই। বংশের পূর্বপুরুষ চন্দ্রমোহন পাল ব্যবসার সুবিধায় গঙ্গায় ঘাট তৈরি করেছিলেন। সেই ঘাটই কলকাতার চাঁদপাল ঘাট। পালেদের ভাঙা দুর্গা দালানে স্মৃতির ধ্বংসস্তূপ। তবুও পুজো এলে আবার যেন সব নতুন হয়ে ওঠে।
সেসব ৩০০ বছর আগের কথা। দামোদর আর শালী নদী যেখানে মিশেছে সেখানে ছিল জমিদার বাড়ি। বাঁকুড়ার সোমসার গ্রামের পাল বংশের জমিদারি বিত্ত আর জৌলুসে ফুলেফেঁপে উঠেছিল। দুর্গাপুজোর ঢাকে বনেদিয়ানার বোল শোনা যেত। পাল বংশের দুর্গাপুজোয় ভিড় করতেন দূর-দূরান্তের মানুষজন। পাল বংশের তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাইকে দে বংশের এক জমিদার দত্তক নেন। তারপর পদবী এদিক ওদিক হলেও পাল ও দে বংশের একটাই পুজো। খসে পড়া পলেস্তারা, ইটের নোনা আর ভাঙা দুর্গাদালানে স্মৃতির ধ্বংসস্তূপ। পুজো এলে স্মৃতিরা সব ফিরে ফিরে আসে।
advertisement
ইতিহাস বলে, তখন বিলিতি বস্ত্রের ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন পালেরা। বিদেশ থেকে জলপথে বিদেশি বস্ত্র বোঝাই করে পালেদের বজরা এসে ভিড়ত কলকাতার গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। পালেদের পূর্বপুরুষ চন্দ্রমোহন পালের কলকাতায় বিভিন্ন ব্যবসা ছিল। ব্যবসার বিস্তারে গঙ্গার তীরে তিনি একটি ঘাট তৈরি করেন। আজও কলকাতার সেই ঘাট চাঁদপাল ঘাট বা বাবুঘাট নামে পরিচিত। ব্যবসার মুনাফায় কলকাতার অভিজাত এলাকাগুলিতে ১০-১২ টি, বর্ধমানে ২০-২২ টি ও সোমসারে পালেরা তৈরি করে বিশাল বাড়ি । সোমসারেই মোট ৬ টি তালুক কিনে পালেরা শুরু করে জমিদারিও । কথিত আছে, এরপরেই চন্দ্রমোহন পাল পুজোর স্বপ্নাদেশ পান।
advertisement
advertisement
তারপরই শুরু হয় পুজো। তখন প্রজাদের জন্য কলকাতা থেকে বিলিতি বস্ত্র আনা হত। আলোর রোশনাই , নহবতের সুর , যাত্রাপালা , রামলীলা , পুতুল নাচ ও কবিগানের আসর নিয়ে পুজো ছিল জমজমাট। হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে পুজোয় মেতে উঠত। সময়ের দৌড়ে দিনগুলো ফিকে হয়েছে। ঐতিহ্য কমেনি। পুজোর আড্ডায় ঠাকুরদালানও হেসে ওঠে। সোমসার জমিদার বাড়ির পুজোয় পশু বলির রীতি নেই। পুজোর চারদিন নিরামিষ খাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের অনেকেই কলকাতায় ব্যবসা করেন। আর মাঝে মাঝে চাঁদপাল ঘাটের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবেন ইতিহাসের কথা। গ্রামের কথা...
view commentsLocation :
First Published :
September 13, 2019 10:26 PM IST

