Durga Puja 2021 : তৃতীয় তরঙ্গের অশনিসঙ্কেতে সম্ভব দুর্গাপুজো? কী বলছেন শারদোৎসবের নেপথ্য কারিগররা?

Last Updated:

গঙ্গায় জোয়ার এলেও মৃৎশিল্পীদের (Kumortuli) পাড়ায় ভাটার চোরাস্রোত ৷

কলকাতা :  শারদোৎসব (Durga Puja 2021) কি এ বার আটকে থাকবে শুধু বাংলা ক্যালেন্ডার আর পঞ্জিকার পাতায়? সেরকমই আশঙ্কা মিন্টু পালের ৷ কুমোরটুলির দীর্ঘদিনের শিল্পী চিনতেই পারছেন না যেন তাঁর চেনা পরিবেশকে ৷ গঙ্গায় জোয়ার এলেও মৃৎশিল্পীদের পাড়ায় ভাটার চোরাস্রোত ৷ ‘‘করোনাভাইরাসের আগে আমি প্রতি বছর অন্তত ৪০ টি প্রতিমা তৈরি করতাম ৷ ৫-৬ টা করে প্রতিমা পাঠাতাম বিদেশে ৷ এ বছর এখনও অবধি পাঠিয়েছি মাত্র দু’টি৷’’ বললেন অভিজ্ঞ এই প্রতিমাশিল্পী ৷
জানালেন, এ বছর কলকাতায় পুজোর বায়না প্রায় হয়ইনি ৷ কিছু পুজো কমিটি ফোনে জানিয়েছেন তাঁরা বায়না করবেন ৷ অতিমারির দু’টি ঢেউয়ের ধাক্কা এবং তৃতীয় তরঙ্গের আশঙ্কায় ভেঙে পড়েছে কুমোরটুলির আর্থিক অবস্থা ৷ মৃৎশিল্পীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে আতঙ্কিত মিন্টু ৷
অনিশ্চয়তার গ্রাসেই কমছে পুজোর জৌলুস ৷ স্বীকার করলেন চেতলা অগ্রণীর সৌম্যশঙ্কর দাস ৷ জানালেন, পুজো হবেই ৷ কিন্তু গত বছরের মতো ছোট করে তাঁরা আয়োজন করবেন দুর্গোৎসবের ৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারি নির্দেশিকা যা দেওয়া হবে, পালিত হবে অক্ষরে অক্ষরে ৷ সৌম্যশঙ্করের কথায়, ‘‘প্রতি বছরই আমাদের ক্লাব সামিল হয় জনসেবামূলক উদ্যোগে ৷ গত দেড় বছর ধরে অতিমারিতে অক্সিজেন পরিষেবা-সহ বিভিন্ন কাজে পুরোভাগে থেকেছে চেতলা অগ্রণী ৷ পাশাপাশি সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপে ইয়াস তাণ্ডবেও ত্রাণ বিলি করা হয়েছে ৷’’ দুর্গাপুজোতেও চেতলা অগ্রণীর তরফে জনসেবামূলক কাজ গুরুত্ব পাবে, জানালেন তিনি ৷
advertisement
advertisement
একই সুর কলকাতার আর এক বড় পুজো নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের অঞ্জন দাসের কণ্ঠেও ৷ বললেন, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতা মেনেই পুজো করা হবে এ বছর ৷ কারণ এখন সুস্থতাই সকলের অগ্রাধিকার ৷ তাই সরকারি নির্দেশিকা মেনেই দুর্গোৎসব হবে আমাদের ক্লাবের উদ্যোগে ৷’’ পুজোর খরচের সঙ্গে বরাদ্দ থাকবে সমাজসেবার জন্যও ৷ তাদের ওয়ার্ডে দীর্ঘ সময় ধরে কোভিড আক্রান্তদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে এই ক্লাব ৷ ইয়াসধ্বস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷
advertisement
এ বছর নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের প্রতিমা করছেন ভবতোষ সুতার ৷ গত বছরও তিনি ছিলেন এই দুর্গোৎসবের শিল্পী ৷ এ বছর নাকতলার পাশাপাশি অর্জুনপুর ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের প্রতিমাশিল্পীও তিনি ৷ বললেন, ‘‘ আমাদের মতো কিছু শিল্পীর কাছে দুর্গাপুজো শুধু উপার্জন নয়, বরং এটা একট শিল্প ৷ কিন্তু যাঁর সদ্য আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেছেন? তাঁদের কাছে এটা কোথাও একটা পৌঁছনর মঞ্চ ৷ কুড়ি বছর আগে আমিও সেই জায়গায় ছিলাম ৷ এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ৷’’ অতিমারি পুরো দুর্গাপুজো ইন্ডাস্ট্রির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন৷ আক্ষেপ ভবতোষের ৷ তিনি মনে করেন, সরকারি কঠোর বিনিনিষেধ মেনেও পুজো হওয়া প্রয়োজন ৷ কারণ এরকম ইন্ডাস্ট্রি বিরল৷ ‘‘শারদোৎসবের মাধ্যমেই প্রান্তিক মানুষের হাতে পৌঁছয় নগদ অর্থ ৷ সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷’’ বলছেন শিল্পী ৷
advertisement
শারদোৎসব ঘিরে অসংখ্য পরিবারের উপার্জন জড়িয়ে থাকে, তার ভূমিকা অস্বীকার করতে পারছেন না শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবকর্তা ডি কে গোস্বামী ৷ জানালেন, ‘‘যেমন ভাবে শ্রীভূমির পুজোকে সকলে চেনেন, সেভাবেই পুজো হবে এ বারও ৷’’ ক্লাবকর্তা জানালেন, কোভিড ত্রাণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা ৷ শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর বাজেট থেকে প্রতি বছর বরাদ্দ করা হয় জনসেবামূলক কাজে ৷ এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না ৷ তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি ৷ এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মুখগুলোর কথা ভেবে তাঁদের পুজো থাকবে চিরচেনা ছন্দেই ৷ রবিবার তাঁদের দুর্গোৎসবের খুঁটিপুজো ৷
advertisement
শহরের অন্য প্রান্তে আর এক নামী পুজো উদ্যোক্তা বেহালা ক্লাব এ বছর খুঁটিপুজো সারবে নিয়মরক্ষার্থে ৷ জানালেন সায়ন্তন ভট্টাচার্য ৷ ‘‘ আমাদের পুজো এ বার শুধুই আরাধনা ৷ জৌলুসের নয় ৷ গত বছরের মতো এ বারও পুজো হবে সাবেকিয়ানা ও থিমের মেলবন্ধনে ৷ ’’ মানবিক আবেদন মাথায় রেখে এ বারও তাঁদের পুজো আড়ম্বরহীন ৷
advertisement
আড়ম্বর না থাকলেও সেকালের বারোয়ারি পুজো আজ ‘ইভেন্ট’ ৷ সাম্প্রতিক ধারা বলছে, কর্পোরেট উপস্থিতি তার অন্যতম অঙ্গ ৷ নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ ইতিমধ্যেই কথা বলেছে কিছু সংস্থার সঙ্গে ৷ কিন্তু এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি ৷ জানালেন, উদ্যোক্তা অঞ্জন ৷ কর্পোরেট ফান্ডিং ছাড়া বড় মাপের দুর্গাপুজো কার্যত অসম্ভব ৷ মত, চেতলা অগ্রণী এবং বেহালা ক্লাবেরও ৷ তবে এই দু’টি ক্লাবেরও এ বছর এখনও কর্পোরেট ফান্ডিং চূড়ান্ত হয়নি ৷ কিন্তু অতিমারি আবহে চারদিকে যা বাণিজ্যচিত্র, তাতে কতটা কী হবে, তা নিয়ে দোলাচলে পুজো উদ্যোক্তারা ৷
advertisement
এ বছর সামগ্রিকভাবে পুজো ঘিরে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সনাতন দিন্ডাও ৷ প্রখ্যাত শিল্পীর কথায়, ‘‘আমি চাই দুর্গাপুজো হোক ৷ মানুষকে দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে তো বটেই ৷ দু্র্গাপুজোর অর্থকরী দিকও অনস্বীকার্য ৷ উৎসব কোনওদিন ভার্চুয়াল হতে পারে না ৷ বিধিনিষেধ মেনেই পুজো হোক৷’’
গত বছর তিনটি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন সনাতন ৷ এ বছর বায়না নেননি তিনি ৷ ঠিক করেছেন, প্রতিমা এ বার তৈরি করবেন না ৷ কারণ, তিনি চান বাকি শিল্পীরা সুযোগ পান ৷ চোখধাঁধাঁনো থিম পুজোর কারিগর বললেন, ‘‘ দুর্গাপুজো তো আমার রুটিরুজি নয় ৷ কিন্তু এমন অসংখ্য শিল্পী আছেন, যাঁদের কাছে দুর্গোৎসবই মূল উপার্জন ৷ তাই আমি চেয়েছি, আমার পরিবর্তে ওই প্রতিমা অন্য কোনও শিল্পী তৈরি করুন, যাঁর কাছে এটাই উপার্জনের প্রধান পথ৷’’
কিন্তু সেই পথটাও এ বছর খুব বন্ধুর কুমোরটুলির শিল্পী নব পালের কাছে ৷ করোনা আবহের আগে পুজোর প্রস্তুতি পর্বে কাজের চাপে নাভিশ্বাস উঠত ৷ কিন্তু এ বছর বায়না প্রায় হয়ইনি ৷ সংখ্যায় নগণ্য কিছু বড় উদ্যোক্তার কাছ থেকে মিলেছে মৌখিক আশ্বাস ৷ বললেন, ‘‘টিকাকরণের পর ভয় জয় করে কাজে ফিরছেন কারিগররা ৷ মনে হয় আগের বছরগুলির মতো না হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঠিক হবে৷’’
তাঁর মতো আঁধারে দাঁড়িয়েও আলোর বেণু শুনতে কান পেতেছেন সকলেই ৷
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Durga Puja 2021 : তৃতীয় তরঙ্গের অশনিসঙ্কেতে সম্ভব দুর্গাপুজো? কী বলছেন শারদোৎসবের নেপথ্য কারিগররা?
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement