৫০০ বছর পেরেও নররক্ত ছাড়া এই দুর্গার পুজো হয় না
Last Updated:
রাজ আমলের পুজো, তাই পুজোর নিয়মও আলাদা। নর রক্ত ছাড়া এই দুর্গা তুষ্ট হন না।
#কোচবিহার: টানা বৃষ্টিতে জীর্ণ দশা কোচবিহারের রাজ আমলের বড়দেবী মন্দিরের। ছাদ চুইয়ে অবিরাম গড়িয়ে পরছে জল৷ প্রতিমা গড়তে গিয়ে বিপাকে পরেছেন শিল্পীরা ৷ পুরোহিতদের ঘরেও ছাদ থেকে পরছে জল। গত কয়েকদিন কম বেশি এক টানা বৃষ্টি হচ্ছে কোচবিহারে৷ মন্দিরের ভেতরে চলছে বড়দেবীর প্রতিমা গড়ার কাজ ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত সংস্কার হোক ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের। টানা বৃষ্টিতে পুজোর মুখে এমনিতেই উদ্বগে দেবত্রট্রাস্ট বোর্ড। বৃষ্টিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই মন্দিরের ওপরে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে কোনো কাজ হচ্ছেনা ৷ ছাদের অনেক অংশের চাঙর খসে পড়ছে।
বড়দেবী বাড়ির দুর্গাপুজোর আলাদা মাহাত্ম রয়েছে। উত্তরবঙ্গ, অসম তো বটেই রাজ্যের মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে এই বড়দেবীর সাথে। প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজ আমলে যখন এই পুজো শুরু হয়েছিল তখন এই মন্দির গড়ে ওঠে। এই মন্দিরের নামেই এলাকার নাম দেবী বাড়ি। রাজ আমলের পুজো, তাই পুজোর নিয়মও আলাদা। নর রক্ত ছাড়া এই দুর্গা তুষ্ট হন না। একসময় তো দেবীকে তুষ্ট করতে নরবলির প্রথাও ছিল। তবে এখন নর বলি না হলেও নররক্তে ভেজানো তুলোর পুতুল বলি দিয়ে সন্তুষ্ট করা হয় দেবীকে। ৫০০ বছর থেকে এটাই রীতি।
advertisement
বড়দেবীর মন্দিরে এখন চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ৷ রাজা নেই। নেই রাজপাট। তাতে কি। রাজ আমলের নিয়ম এখন অক্ষুন্ন, এই জেলার পুজো পার্বন গুলিতে৷ রাজআমলের সেই প্রাচীন রীতি মেনে দেবীর প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। আনুমানিক ১৫৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই পুজো শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। রাজার স্বপ্নাদেশ মত দেবী দুর্গার একেবারেই ভিন্ন রুপ। দেবী রক্তবর্না ও সুবিশাল। দেবীর বাহন বাঘ। দেবীর দুপাশে লক্ষী গনেশ স্বরস্বতী কার্তিক নেই ৷ দেবীর দুপাশে আছে জয়া ও বিজয়া। দেবীকে তুষ্ট করতে মহারাজা নরনারায়নের আমল থেকে শুরু হয়েছিল, নরবলি প্রথা ৷ তবে কিছু বছর পর সেই নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবের কারনে এই নরবলি বন্ধের পর ফের সেই প্রথা চালু কিন্তু উনবিংশ শতকের শুরুতে এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। রাজ আমলের ইতিহাস থেকে জানা যায় মহারাজা শীবেন্দ্র নারায়ন তার আমলে নর বলির ভয়াবহতার কথা শুনে তা বন্ধ করেছিলেন। এরপর থেকেই নরবলি বন্ধ হলেও নর রক্তে ভেজানো পুতুল বলি দিয়ে তুষ্ট করা হয় বড় দেবীকে। অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পুজোতে কালজানি গ্রামের এক পরিবার তাদের আঙ্গুল কেটে রক্তদেবেন। সেই রক্ত দিয়েই তুষ্ট হবেন বড়দেবী। তবে পুজোর দিনে মহিষ বলির নিয়ম আছে এখনও।
advertisement
advertisement
যত প্রাচীন এই পুজো তত প্রাচীন এই মন্দির। পুজোর আগে প্রতিবছর মন্দির রঙের প্রলেপে সেজে উঠলেও জীর্ণ মন্দির সেভাবে সংস্কার হয়নি। রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের সংস্কার চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
Location :
First Published :
September 29, 2019 1:44 PM IST