Poila Baisakh 2021:পয়লা বৈশাখের জলসায় সেজে উঠত বসুশ্রী হল ! উত্তম কুমার থেকে হেমন্ত, কে না আসতেন !
- Published by:Piya Banerjee
- news18 bangla
Last Updated:
Poila Boishakh 2021: সে সময় এই জলসাই ছিল পয়লা নম্বরে ৷ কত যে তাবড় তাবড় তারকা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না ৷
#কলকাতা: ১৯৫০ সাল ৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের উপর বসুশ্রী হলে সে সময় সবে নতুন রঙ লাগতে শুরু করেছে। ৷ ইউরোপিয়ান ধাঁচে তৈরি হলটির একটি ঘরে সে সময় রোজ সন্ধ্যাতেই তাবড় তারকাদের ভিড় জমে উঠত ৷ এমনই এক সন্ধ্যায় আড্ডায় হাজির ছিলেন মন্টু বসু, শ্যামল মিত্র, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অজিত চট্টোপাধ্যায় ৷ তবুও আড্ডাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা থাকত, কারণ এই আড্ডার প্রাণ পুরুষ ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি এলেই জমে উঠত এই আসর। তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যাক্তা। হেমন্ত বাবু সে সময় নিজ দায়িত্বে অনেক কিছুই করতেন। গোটা বলিউড পাড়া চিনত এই সাদা ধুতির ৬ ফুট লম্বা মানুষটিকে।
সন্ধ্যার আড্ডা বসবে, আর একটু খাওয়া-দাওয়া হবে না ! তা তো আর হতে দিতে পারেন না হেমন্তবাবু ৷ তিনি আসতে না আসতেই তাই চলে আসত ভাঁড়ে চা আর পূর্ণ ঘোষের খাস্তা শিঙাড়া ৷ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক লাগিয়ে হেমন্তেবাবু বললেন, ‘শোন মন্টু তোর হলে তো অনেক জায়গা ৷ সামনেই তো পয়লা বৈশাখ ৷ একটা জমজমাট জলসা করা যায় না?’’ সবাই তো হেমন্তবাবুর সেই প্রস্তাবে দারুণ খুশি ৷ কিন্তু জলসা জিনিসটা আসলে কী, তখনও জানেন না কেউই ৷ আসলে তখনও এ দেশে তেমনভাবে জলসা শুরু হয়নি ৷ তবে হেমন্তবাবু চাইতেন বিরাট কিছু একটা হোক ৷ হেমন্তবাবুর এক কথায় রাজি ছিলেন মন্টু বসু ৷ আর হেমন্তবাবু কথা দিয়েছিলেন, যদি বোম্বেতেও থাকেন পয়লা বৈশাখের সময় বসুশ্রীর জলসা হাজির হবেনই ৷ সেই থেকে শুরু হল বসুশ্রী সিনেমা হলে পয়লা বৈশাখের জলসা ৷ আর প্রতিবার উপস্থিত থেকেছেন এই জলসার প্রাণ পুরুষ।
advertisement
advertisement
মন্টু বসু, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্র (বাঁ দিক থেকে) ৷
সে এক অন্য ব্যাপার ৷ এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন বহু মানুষ ৷ এই আসরের তো টিকিটের কোনও ব্যাপার ছিল না ৷ হল খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাউসফুল ৷ অনুষ্ঠানের দিন ভোর থেকে বাঙালিরা এসে ঠাই গাড়তো বসুশ্রীর সামনের ফুটপাথে ৷ বাংলা বছরের প্রথম দিনে বাঙালির সেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো ৷ ভিড়ের চাপে বন্ধ হয়ে যেত গোটা এলাকা ৷ এক বছর তো উত্তম কুমারকে জলসায় আনায় মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায় ৷ এরপর থেকে সোজা গেট দিয়ে উত্তমবাবুকে আর জলসায় আনা হত না ৷ এমনকী ঘোষণাও করা হত না যে তিনি আসছেন ৷ হলের পিছনের গেট দিয়ে আনা হত মহানায়ককে ৷ তবে হাজার হাজার লোক হলের ভিতর ঢুকতে পারতেন না, তাই হলের সামনে রাস্তায় উপর সামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা হত ৷ লাগানো হত বেশ কতগুলো মাইক ৷ সেই মাইকেই তখন শোনা যেত উত্তম কুমারের গলা ৷ শোনা যেত হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিংবা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ৷ সেখানেই ভিড় জমাতেন সাধারণ মানুষ।
advertisement
সে সময় এই জলসাই ছিল পয়লা নম্বরে ৷ কত যে তাবড় তাবড় তারকা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না ৷ শ্যামল মিত্র থেকে শুরু করে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই জলসার পরিচিত নাম ৷ আর শিল্পীরাও এই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতেন ৷ লতা মঙ্গেশকরকেও একবার এই জলসায় আসতে দেখা গিয়েছিল। সবটাই করতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। স্বর্ণযুগের শিল্পীরা এখনও এই অনুষ্ঠান নিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ভোগেন ৷ সে দিনগুলো স্মৃতিতে অমলিন এখনও ৷ বসুশ্রী হলের সেই জলসা ছাড়া যেন পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যে হতেই পারে না। পয়লা বৈশাখ মানেই সে সময় ছিল বসুশ্রী হলের জলসা। ইতিহাসের পাতায় আজও অমলিন এই জলসার স্মৃতি।
view commentsLocation :
First Published :
April 04, 2021 7:12 PM IST