#কলকাতা: যতই তর্ক-বিতর্ক হোক, এটা মানতেই হবে, বাঙালিরা যতটা উৎসাহ নিয়ে ইংরেজি 'নিউ ইয়ার' পালন করেন, তাঁর ছিটেফোটা মাত্র থাকে নিজেদের নববর্ষ পালনে। তা সে শুধু আজ নয়, সেই কোন আদ্দিকাল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। হুতোম প্যাঁচার 'চরক পার্ব্বণ' নকশায় লেখা রয়েছে-- '' কেবল কলসি উচ্ছুগগ্গু কর্তারা আর নতুন খাতাওয়ালারাই নতুন বৎসরের মান রাখেন।''
এটা কিন্তু একদিক থেকে ঠিক। খাতাওয়ালারাই বাঁচিয়ে রেখেছেন নববর্ষকে! তাই অনেকে এই দিনটাকে নববর্ষ না বলে বলেন হালখাতা। কিন্তু জানেন কী, হালখাতার সঙ্গে বাংলার নববর্ষ উৎসবের কোনও যোগ নেই। তা হলে গোড়া থেকেই শুরু করা যাক!
মানুষ একসময়ে ছিল যাযাবর। লাঙলের ব্যবহার শেখার পর, মানুষ এক জায়গায় স্থায়ী বসবাস শুরু করল। সেখানেই চাষ করে ফসল ফলাল। আর এই ফসলের বিনিময়ে অন্য জিনিস নেওয়া অর্থাৎ বিনিময় প্রথার মধ্যে দিয়ে চলতে লাগল তাদের জীবনধারা।একজনের দায়িত্ব ছিল, এই বিনিময়ের কাজটি করার। এখান থেকেই শুরু হল দোকানদারির চল। দ্রব্য-বিনিময়ের হিসেব রাখা শুরু হল খাতায়, আর সেই খাতার নাম হল 'হালখাতা'। ৩৬৫ দিন, অর্থাৎ একবছর পার হওয়ার পর, হিসেব-নিকেশ শেষ করে, পুরনো খাতা বন্ধ করে, নতুন খাতা খোলার দিন হিসেবে বাছা হল পয়লা বৈশাখকে। ফলে, পয়লা বৈশাখের উৎসবের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে হালখাতার কোনও সম্পর্ক নেই। কাকতালীয় ভাবে দিনদুটো এক হয়ে গিয়েছে।
অনেকে দাবি করেন, 'হাল' শব্দটি নাকী সংস্কৃত ও ফরাসি-দুটো ভাষা থেকেই এসেছে। সংস্কৃতে 'হল' শব্দের মানে লাঙল, তা থেকে বাংলায় 'হাল' এসেছে। ফরাসি থেকে আসা 'হাল' শব্দটির অর্থ নতুন।