#কলকাতা : 'মা হওয়া কী মুখের কথা?' এক্কেবারেই না। অন্তত এমনটাই মনে হবে সন্তান হওয়ার পর-পর যখন আবিষ্কার করবেন আপনার বর্ধিত ওজনটিকে বাগে আনা এমনকি শিবেরও অসাধ্যি কাজ। এই যে বিগত কয়েক মাস ধরে মনে মনে ছক কষেছিলেন বাচ্চা হয়ে গেলেই আবার ফিরে যাবেন জীবনের পুরনো ছন্দে, সম্পূর্ণটাই কেমন যেন ঝাপসা ঠেকবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা যে অবয়বটা দেখবেন সেটি আর যেই হোক, আপনি নন। হতে চান ও না। আগের পোশাক একটিও গায়ে গলবে না। আর নিজের জুবুথুবু চেহারায় নতুন পোশাক কেনার উৎসাহও আপনি পাবেন না। কাজে যাওয়া তো অনেক দূরের কথা এই সময়ে বাড়িতে বাচ্চা দেখতে আসা অতিথিদের সামনে আসাটাও কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং ঠেকবে।
একদিকে জীবনের নতুন দায়িত্ব অন্যদিকে মা, শাশুড়ি-মা, জেঠিমা, কাকিমা-মাসিমা, বন্ধুর মা-কূলের লাগাতার জ্ঞান বর্ষণ। একের পর এক আসছে দুধ-সাবু, স্যুপ, জুস, থালাভর্তি খাবার। একটু খাওয়া নিয়ে বেচাল করেছেন কী মা-ব্রিগেড ঝাঁপিয়ে পড়লো বলে। এদিকে আপনার 'পোস্টপার্টাম' ওয়েট (Postpartum Weight) ক্রমশ বাড়ছে। সবমিলিয়ে এক তথৈবচ অবস্থা। চাপে পরে আপনি হাল ছাড়তে বাধ্য।
কিন্তু অনুষ্কা শর্মা যদি মেয়ে হওয়ার কয়েকদিনেই সবাইকে তাক লাগাতে পারেন, করিনা কাপুর যদি প্রথম বার মা হয়ে সন্তান হওয়ার মাত্র পঁয়তাল্লিশ দিনের মাথায় ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের ৱ্যাম্পে হাঁটতে পারেন, তবে আপনিই বা পারবেন না কেন আগের অবতারে ফিরে যেতে। পারবেন।যদি প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে একটু সচেতন থাকেন। প্রথম থেকেই মানে, একেবারে মা হওয়ার গোড়া থেকে। জেনে নিন কিছু সহজ টিপস।
প্রেগন্যান্সি থেকেই সচেতন হনপ্রেগনেন্সি পিরিয়ডে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলাটা পোস্ট প্রেগন্যান্সি অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অন্যতম কারণ। আপনার চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন আপনার ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ওজন বাড়া উচিত। আর মেনুতে বাইরের খাওয়ার না রেখে বেশি করে সুষম, পুষ্টিদায়ক খাবার রাখুন। 'প্রেগন্যান্সি ক্রেভিং'এর অজুহাতে একগাদা ভুলভাল খাওয়ার খেয়ে একমাসে পাঁচ কিলো ওজন বাড়িয়ে বসবেন না। তার মাশুল কিন্তু গুনতে হবে আপনাকেই। সুতরাং, নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে যুদ্ধটা শুরু করুন শুরুতেই। আর ভুলে যাবেন না, প্রেগন্যান্সির সময় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি শেষ দিকে জটিলতা বাড়াতে পারে প্রসবেও। দেখা দিতে পারে হৃদরোগ ও ডায়াবিটিসের প্রবণতাও।
মহিলাদের পত্র-পত্রিকা বা সেলিব্রিটি স্টোরি যাই দাবি করুক না কেন, জেনে রাখুন 'বেবি ফ্যাট' কিন্তু খুব সহজে যাওয়ার নয়। এই অমোঘ সত্যিটা স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়া খুব জরুরি। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে মাতৃত্বের সময়কার অতিরিক্ত মেদ কমাতে দু বছর বা পাঁচ বছরও লেগে যায়। এমনকি সেইসময় সঞ্চিত মেদের প্রায় ৪০% থেকেও যায় শরীরে।তাই এমন আশা করাটাও বোকামি হবে যে খুব শিগগিরই আপনি প্রি-প্রেগন্যান্সি ওয়েটে ফিরে যাচ্ছেন। ঐশ্বর্য রাই ও পারেননি, আপনিও পারবেন না। বরং চেষ্টা করুন ধাপে ধাপে এগোনোর। প্রথমে খাওয়াটা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন বাড়ার গল্পটা বন্ধ করুন। খাওয়া নিয়ন্ত্রণ মানে কিন্তু অল্প খাওয়া নয়। মেদ কমাতে একটু বেছে খাওয়া। আর ওই এক থিওরি, পরিমানে বেশি শুধু সেগুলোই খাবেন যাতে পুষ্টি বেশি।
'কার্ব কম, ক্যালসিয়াম বেশি ডায়েট'জটায়ুর সেই প্রশ্ন মনে আছে তো? 'উটেরা কি কাঁটা বেছে খায়?' উটেরা যাই খাক, আপনি শুধু কার্ব বেছে খাবেন। কারণ পোস্ট প্রেগন্যান্সি রিকভারির জন্য এবং বিশেষত, ব্রেস্টফিডিং করলে আপনার অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু তার জন্য চেষ্টা করুন ঘরোয়া সুষম খাওয়ার খেতে। প্রয়োজন, প্রচুর পরিমানে তরল খাওয়ার বা পানীয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজেই ঠিক করে নিন নিজের মেনু। আর তাতে কার্বোহাইড্রেট কম রেখে বেশি করে রাখুন প্রোটিন, ভিটামিন এবং অবশ্যই ক্যালসিয়াম। বেশি খান বাদাম, সবজি, ফল। এড়িয়ে চলুন খাবারে অতিরিক্ত মিষ্টি। বেশি করে খান ফাইবার জাতীয় খাওয়ার। মাস শেষে দেখবেন, ওজন না কমলেও অন্তত বাড়ছে না।
'বারে বেশি আর পরিমানে কম খাওয়া'মেদ ঝরাতে এই তত্ত্বের জুড়ি মেলা ভার। 'এটা খাবোনা', 'ওটা খাবোনা' করে আসেপাশের লোকজনকে বিব্রত করাটা যেমন বিরক্তিকর। ঠিক তেমনই যেটা খাওয়া উচিত নয় সেটা অনেকটা খেয়ে নিয়ে গিল্ট ট্রিপে যাওয়াটাও ততখানি বোকামি। বরং খান। কিন্তু রয়ে সয়ে। ধরুন আপনার কুকিজ খেতে খুব ইচ্ছে করছে, ফ্রেঞ্চ লোফ থেকে আনা বক্সটা বার বার দেখছেন, অথচ সাহস করে খেতে পারছেন না। নিজেকে এতটা নির্যাতন করারও কোনো প্রয়োজন নেই। গুছিয়ে বসে বাক্সটা খুলুন। কুকিটি বের করুন। সুন্দরভানে প্লেটে নিন। ভেঙে এক টুকরো মুখে দিয়ে আরাম করে খান। সারাদিন ধরে একটু একটু করে খান। যেন অমৃত খাচ্ছেন। পুষ্টিকর খাওয়ার বেশিরভাগ মানুষেরই খেতে ভালো লাগে না। তাই সেইসব খাওয়ারগুলোকে একটু অন্যভাবে খান। একটু নেট ঘাঁটলেই বিভিন্ন ব্লগে পেয়ে যাবেন খুব সহজ, অথচ স্বাস্থ্যকর খাওয়ারের অসাধারণ সব রেসিপি।
পুরনো চেহারা, পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়ার তাড়াহুড়োয় অনেকেই লো ক্যালোরি ডায়েট শুরু করে দেন। ব্রেস্টফিডিং চলাকালীন যা একেবারেই কাম্য নয়। যদিও এইসময় নিজের ওজন বুঝে ৫০০ ক্যালোরি মতো কমানো যেতেই পারে একদিনে। তাতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক পাউন্ড বা প্রায় হাফ কিলো ওজন কমবে। এই অনুপাতে ওজন কমানোটা অনেক নিরাপদও। কারণ একটা সুস্থ ওজনে ফিরে আসাটা শুধু সুন্দর চেহারায় ফেরার জন্যই নয়। একইসঙ্গে নিজের সন্তানের দেখভালের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতেও খুব জরুরি। প্রসঙ্গত জেনে রাখুন, ব্রেস্টফিডিং যেমন প্রথম তিনমাসে ওজন বাড়ায়, তেমনই পরের তিনমাস কিন্তু ওজন কমাতে দারুণ সাহায্য করে।
ব্যায়াম বা এক্সারসাইজএই সময় সন্তানের পাশাপাশি নিজের খাদ্যাভ্যাসে নজর দেওয়া জরুরি। ঠিক ততটাই জরুরি এক্সারসাইজ। সন্তান প্রসব সিজারিয়ান হলে ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করে দেওয়া যায় হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ। ওয়াকিং, জগিং, রানিং, সাইক্লিং ওজন কমাতে বেশ সাহায্য করবে। শরীরের ক্ষমতা বুঝে আরও কিছুদিনের মধ্যে শুরু করতেই পারেন ওয়েট এক্সারসাইজ। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে প্রসবকালীন আপনার শরীরের সুস্থতা ও অন্যান্য জটিলতা কতটা ছিল এবং কোন পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব হয়েছে তার ওপর। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য সমস্যা না থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই হালকা ব্যায়াম করা যেতেই পারে। তাই এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
একদিকে যেমন শরীরের নানারকম পরিবর্তন। তেমনিই হরমোনের প্রভাবে মনেও এই সময় চলতে থাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। ডিপ্রেশন। মানসিক অবসাদ অনেক সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এমনকি মা ও সদ্যোজাতের মধ্যে দেওয়াল তৈরী হওয়াটাও আশ্চর্যের নয়। তাই শরীরের পাশাপাশি নজর দিন মনের সৌন্দর্যের দিকেও। যতই সমস্যা হোক, প্রয়োজনে পরিবার ও বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে হলেও 'ব্রেক' নিন 'নিজের জন্য'। একটু ম্যানেজ করে আপনার ঘরোয়া নার্সারি থেকে বাইরে বেরোনোটাও খুব দরকারি। প্রথমে ১০মিনিট হেঁটে আসুন। ভালো লাগলে আধঘন্টা কাটিয়ে আসুন জিমে। আরও একটু সাহস করে বরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন নাইট শো মুভি ডেটে, অথবা বন্ধুদের সঙ্গে কফি মিটে। ফিরে এলে বুঝবেন আপনার মনের আনন্দটুকু আপনার সন্তানকে আরও ভাল রাখবে। আপনাকেও। সুতরাং শরীরের পাশাপাশি ওয়ার্ক আউট চাই মনের।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Healthy diet, Lifestyle, Weight Loss