Explained: এস-৪০০ কিনলেও নিষেধাজ্ঞা নয় ভারতের উপর, কেন এই সওয়াল করছেন ২ মার্কিন সেনেটর
- Published by:Debalina Datta
Last Updated:
বর্তমানে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগী হচ্ছে ভারত। তাই ভারতের উপর সিএএটিএসএ চাপানো উচিত হবে না।
#কলকাতা: রাশিয়ার (Russia) কাছ থেকে এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম (S-400 Triumf Defence Systems) কিনলেও ভারতের উপর যেন নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে (Joe Biden) চিঠি লিখে এই সওয়াল করলেন দুই মার্কিন সেনেটর। এই দু'জন ইন্ডিয়া ককাসের কো-চেয়ারম্যানও। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সেনেটর মার্ক ওয়ার্নার (Mark Warner) এবং রিপাবলিকান পার্টির সেনেটর জন কর্নিন (John Cornyn) প্রেসিডেন্টের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যাতে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভার্সারিস থ্রু স্যাংশন অ্যাক্ট (CAATSA) অনুযায়ী ভারতের উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হয়। রাশিয়ার কাছ থেকে ৫টি এস ৪০০ ট্রাম্ফ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছে ভারত। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর দিল্লিতে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে ৫৮৩ কোটি মার্কিন ডলারের ওই চুক্তি সম্পন্ন হয়। যার পরই ভারতের বিরুদ্ধে সিএএটিএসএ বা সংক্ষেপে ‘কাটসা’ আইন প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছিল পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই ভারতের মাটিতে এসে পৌঁছবে একটি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম।
মার্কিন সেনেটররা কী বলেছেন?
ডেমোক্র্যাট মার্ক ওয়ার্নার এবং রিপাবলিকান জন কর্নিন রাষ্ট্রপতি জো বিডেনকে চিঠিতে বলেছেন যে বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বর্তমানে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগী হচ্ছে ভারত। তাই ভারতের উপর সিএএটিএসএ চাপানো উচিত হবে না। দুই সেনেটর আরও লিখেছেন, এই আইনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল রাশিয়ার অনৈতিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করা। আমেরিকার সহযোগী দেশগুলিকে বিব্রত করা নয়। ভারতের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁদের সওয়াল, যে কোনও নিষেধাজ্ঞা আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার গতি কমে যেতে পারে। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নতির কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, কোভিড-১৯ অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান একযোগে কাজ করছে।
advertisement
আরও পড়ুন - Time Table Change : ভারতীয় রেলওয়ের বড় খবর কাল থেকে বদলে যাচ্ছে অনেক ট্রেনের টাইম টেবল
advertisement
দুই সেনেটর উল্লেখ করেছেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) ও পরবর্তীতে রাশিয়ার কাছে থেকে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধাস্ত্র কিনছে ভারত। তবে, আগের তুলনায় রাশিয়ার থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি অনেকটাই কমিয়েছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ান সামরিক সরঞ্জামের ক্রয় কমাতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপালে কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু, রাশিয়ান অস্ত্র বিক্রি রোধ করার উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে না এই নিষেধাজ্ঞা। তাই আমেরিকার উচিত রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনার বিকল্প পথগুলি খোঁজার জন্য ভারতকে উৎসাহিত করা।
advertisement
এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম চুক্তি কী?
২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পাঁচটি এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। যা সেই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। এই এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম রাশিয়ার আলমাজ সেন্ট্রাল ডিজাইন ব্যুরো (Almaz Central Design Bureau) তৈরি করেছে এবং ২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নয়াদিল্লি। এই সিস্টেমটিতে মাল্টি-ফাংশন র্যাডার রয়েছে। তাই শুধু মিসাইল নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর বিমান এবং ড্রোনও ধ্বংস করা যাবে। এতে বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল ব্যবস্থা, লঞ্চার এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার রয়েছে। এতে রয়েছে তিনটি ভিন্ন ধরনের মিসাইল প্যাক। যা ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ও ৪০০ কিলোমিটার দূরের যে কোনও লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই মিসাইল সিস্টেম একই সঙ্গে ৩৬টি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে। এই মিসাইল সিস্টেম আগের রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে দ্বিগুণ কার্যকর এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্থাপন করা যেতে পারে।
advertisement
এই বছরের শুরুর দিকে একটি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ORF) রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি সত্ত্বেও ভারতের জন্য দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের কোনও বিকল্প নেই। এতে বলা হয়েছে যে এস ৪০০ এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের ক্ষমতা পশ্চিমি সিস্টেমগুলির সঙ্গে তুলনা করা যায় না। পশ্চিমি মিসাইল সিস্টেমের প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া এস-৪০০ অনেক কার্যকরী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারত ছাড়াও বেলারুশ, আলজেরিয়া, চিন এবং তুরস্ক সহ কয়েকটি মুষ্টিমেয় দেশের কাছেই এই সিস্টেমটি বিক্রি করেছে মস্কো।
advertisement
CAATSA কি?
অন্য দেশকে অস্ত্র বিক্রি থেকে রাশিয়াকে রুখতে ২০১৭ সালে এই নিষেধাজ্ঞা আইন আনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। যার আওতায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা খাতের সঙ্গে কোনও দেশ জড়িত হলে সেই দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। এই আইনের বলেই রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তবে, বেলারুশ ও আলজেরিয়া CAATSA-এর অধীনে নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। কারণ তারা আইন আনার আগেই এস-৪০০ সিস্টেম সংগ্রহ করেছিল। ভারত যুক্তি দেয় যে তারা এই মিসাইল সিস্টেম কেনার জন্য ২০১৬ সালে আলোচনা শুরু করে। তাই, তারা CAATSA-র অধীনে নিষেধাজ্ঞার যোগ্য নয়। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা আইন কার্যকর হওয়ার আগেই ন্যাটো মিত্র তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহ স্থগিত করে দেয় আমেরিকা। কারণ, তাদের নিষেধ সত্ত্বেও ন্যাটো জোটভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ কিনে ব্যবহার করতে শুরু করে আঙ্কারা।
advertisement
তাই রাশিয়া থেকে ভারতের এস-৪০০ কেনার সিদ্ধান্তও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার যোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক মিত্র নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত সম্পর্ক গভীর হয়েছে মাত্র। তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা একমাত্র সময় বলবে। এক্ষেত্রে ভারতের কূটনীতিই একমাত্র ভরসা।
কেন মার্কিন সেনেটররা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সওয়াল করছেন?
মার্কিন সেনেটররা বলেছেন যে বিশ্ব জুড়ে রাশিয়ার অস্ত্র ক্রয়কে নিরুৎসাহিত করার জন্য ক্যাটসা মার্কিন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। মার্কিন আইন প্রণেতারা এমন কথাও জানিয়েছেন যে আইনে ছাড়ের বিধি তো রয়েছে। যদি কোনও সিদ্ধান্ত মার্কিন স্বার্থে হয়, তা যদি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন না করে, মার্কিন সামরিক অভিযানে বিরূপ প্রভাব না ফেলে, তবে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। সেনেটররা প্রেসিডেন্ট বিডেনকে বলেছেন যে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার জন্য ভারতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারিতে ছাড় দেওয়া যায় কয়েকটি কারণে। যার মধ্যে রয়েছে, রাশিয়া থেকে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ক্রয়ের পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে, যখন আমেরিকার প্রতিরক্ষা রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। চিঠিতে দুই সেনেটর উল্লেখ করেছেন যে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারতে রাশিয়ান অস্ত্র রপ্তানি কমেছে। যা আগের ৫ বছরের থেকে ৫৩ শতাংশ কম। অন্য দিকে, ২০২০ অর্থবর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের অস্ত্র কেনার পরিমাণ ছিল ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁরা আরও বলেছেন যে ভারতের উপর যে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক লাইনচ্যুত হতে পারে।
Location :
First Published :
October 31, 2021 11:14 PM IST