#নয়াদিল্লি: এ যেন সম্পূর্ণ কার্যকারণসূত্রহীন এক ঘটনা! কোথা থেকে এল আর কী ভাবেই বা এল, কোভিড ১৯ নিয়ে আমাদের অনেকেরই মনোভাব প্রথমটায় ছিল অনেকটা এই রকম! অথচ করোনার চেয়েও ভয়াল অতিমারীর সাক্ষী থেকেছে এই দেশ অতীতে। সেই দিক থেকে দেখলে অতিমারী ব্যাপারটা স্মৃতিবাহিত হয়ে আমাদের গা-সওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ তেমনটা হয়নি। সত্যি বলতে কী, অতীত অতিমারীর অভিজ্ঞতার কথা যেন ভুলে গিয়েছে এই দেশ। কী ভাবে লোপ পেল এই স্মৃতি, তা সম্প্রতি এজ অফ প্যানডেমিকস (Age of Pandemics) নামের বইতে আলোচনা করেছেন লেখক চিণ্ময় তুম্বে (Chinmay Tumbe)।
১৮১৭ থেকে ১৯২০- এই সময়টাকেই অতিমারীর যুগ বলে আখ্যা দিয়েছেন চিণ্ময়। তাঁর মতে বাণিজ্যিক সূত্রে ঔপনিবেশিকতা এবং তার হাত ধরে নানা সংক্রামক অসুখ ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এই সময়টায় কলেরা, প্লেগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারীর রূপ নিয়েছিল। পরিণামে সারা পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছিল ৭০ মিলিয়ন মানুষের, এর মধ্যে শুধু ভারতে মৃত্যুর হার ছিল ৪০ মিলিয়ন! ক্ষয়ের এমন করাল ছবি কিন্তু করোনাকালও তুলে ধরেনি। তার পরেও আমাদের স্মৃতি থেকে সেই অধ্যায় মুছে গেল কী ভাবে?
তুম্বের মতে এর একটা কারণ নিহিত থাকতে পারে কালের গর্ভে। সময় অনেক স্মৃতির চিহ্নই মুছে দিয়ে যায়। সেই দিক থেকে দেখলে ১৯১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া স্প্যানিশ ফ্লু-র পরে বিধ্বংসী কোনও অতিমারীর মুখোমুখি হয়নি ভারত। ফলে, করোনা অতিমারীকে তার একেবারে নয়া বলে মনে হয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে নানা অতিমারীতে ভারতে যে পরিমাণ জনসংখ্যার মৃত্যু হয়েছে, তা একাই বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর হারের কাছাকাছি। এর ঠিক পরেই দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তুম্বে তুলে ধরেছেন ইতিহাস নথিবদ্ধ করার পদ্ধতিটাকে। তিনি জানিয়েছেন, যে ইতিহাস আমরা ছোট থেকে পড়ে আসছি, সেখানে বিশ্বের প্রেক্ষাপটকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে, ভারত নিয়ে লেখালিখি কম হওয়ায় তার অতিমারীর ঐতিহাসিক ছবিটিও তেমন উজ্জ্বল নয় বর্তমান প্রজন্মের কাছে।
লেখক বলছেন যে এই ইতিহাস রচনার প্রেক্ষিতে দেশের জাতীয় আন্দোলনের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। মুঘল আমলের পর থেকে দেশের ইতিহাস কেবলই বিদেশি বণিকদের রাজা হয়ে ওঠা এবং তার পর স্বাধীনতা সংগ্রামে মনোনিবেশ করেছে। সেখানে কোথাও একটা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে অতিমারী কালের অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি, এমন ভয়াবহ সব অতিমারী পেরিয়ে আসার ফলে আরও একটা মানসিক বদল ঘটেছে। মনস্তত্ত্ব বলে, কঠিন পরিস্থিতি জয় করার ফলে এমন একটা ধারণার উদ্ভব হয় যে তা আর তৈরি হবে না। এই ধারণা আগের অভিজ্ঞতার স্মৃতি ক্ষয় করে দেয়। ভারত এবং তার অতিমারীকালীন পরিস্থিতির সঙ্গেও সেটাই হয়েছে বলে দাবি করেছেন তুম্বে।
এজ অফ প্যানডেমিকস এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকারের অতিমারী নিয়ে অসংবেদনশীল পদক্ষেপের কথা। একটা সময়ে মহারাষ্ট্রে টিকাকরণের জন্য ভারতীয়দের বাড়ি থেকে বের করে এনে পথের মাঝে নগ্নও করে দিয়েছে সরকার, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ভারতীয় জনতার মতামতের কোনও গুরুত্বই দেয়নি তারা। এ হেন পরিস্থিতিতে রোগ থেকে বাঁচার চেয়েও বেশি করে ভারতীয়দের চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসানের বিষয়টি- ফলে অতিমারীর স্মৃতি চলে গিয়েছে অপ্রয়োজনীয় স্মৃতির খাতে, স্বভাবতই মন তা এক সময়ে ভুলে গিয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, Covid ১৯