#বেজিং: উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের উপরে নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে চিন। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এই অভিযোগে সরব হয়েছে একাধিক দেশ। এবার সেই একই ইস্যুতেই চিনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল আমেরিকা, কানাডা-সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমি দেশ। কিন্তু ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে? কারা এই উইঘুর মুসলিম? কেনই বা ক্ষুব্ধ পশ্চিমের দেশগুলি? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশদে!
উইঘুর মুসলিমের ইতিহাস
এই অঞ্চলের আগের নাম ছিল পূর্ব তুর্কিস্তান। বর্তমানে শিনজিয়াং প্রদেশ হিসেবে পরিচিত এটি। এখানেই একের পর এক বন্দী শিবিরে আটকে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। যাঁরা উইঘুর মুসলিম নামে পরিচিত। যদিও চিনের কথায়, এখানে কোনও রকম অত্যাচার করা হয় না। এখানকার মানুষকে সুপ্রশিক্ষণ দিতেই এই শিবিরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম, ইন্টারনেট থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ের উপর চিন সরকারের কড়াকড়ি থাকলেও উইঘুর মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের খবর বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। এক্ষেত্রে মুসলিম ধর্মীয় রীতি-নীতি থেকে প্রতিটি জিনিস নির্মূল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি, তুরসুনে জিয়াউদুন নামে এক মহিলার সাক্ষাৎকারে চিনের নৃশংস অত্যাচারের বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি জানান, এই শিবিরগুলিতে মহিলাদের এক অজানা কক্ষে নিয়ে গিয়ে, তাদের উপরে নির্যাতন চালানো হয়। উল্লেখ্য, শিনজিয়াং প্রদেশের তুর্কি মুসলিম তথা এই উইঘুরদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ। তবে বর্তমানে তাঁদের জীবন সংকটে। যদিও চিন পুরো বিষয়টিকে মিথ্যা ও যুক্তিহীন অভিযোগ হিসেবে দাবি করছে।
চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
-শিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের সংখ্যা কমাতে তাঁদের অন্যত্র কাজ দেওয়া হচ্ছে।
-বন্দী শিবিরে উইঘুর নারীরা গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
-উইঘুর মুসলিম নারীদের জোর করে বন্ধ্যা করছে চিন।
-চিনের উপর পশ্চিমি দেশের নিষেধাজ্ঞা
উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে ইতিমধ্যেই চিনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলি। সম্প্রতি কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তরফে সম্মিলিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয়। একই পথে হেঁটেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশের বন্দী শিবিরগুলিতে লক্ষ লক্ষ উইঘুরকে আটকে রেখেছে চিন। আর এই এলাকাগুলিতে বন্দীদের উপরে নির্যাতন, জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
এ নিয়ে সবার আগে সরব হয়েছে আমেরিকা ও কানাডা। আমেরিকার দাবি, গণহত্যা চালাচ্ছে চিন। অন্য দিকে, আমেরিকা ও কানাডার পর চিনের উপরে চাপ দিতে শুরু করেছে রাষ্ট্রসংঘ। চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় রাষ্ট্রসংঘ। উইঘুর মুসলিমদের বর্তমান অবস্থাও খতিয়ে দেখতে চায় তারা। রাষ্ট্রসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক পদে হাই কমিশনার রয়েছেন মিশেল ব্যাশেলেট। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার মাধ্যমে শিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চিন ঠিক কী ব্যবহার করছে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে চান তিনি। এ নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন মিশেল। কিন্তু চিনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সম্মতি মেলেনি।
গতকালই কানাডার পার্লামেন্টে চিন এবং উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এর আগে আমেরিকার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একই কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম চিনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছিলেন। এগুলির পাশাপাশি উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতেও একটি পিটিশন জমা পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে চিন কী পদক্ষেপ করছে, এখন সেদিকে তাকিয়ে পুরো বিশ্ব।
Keywords:
Written By: Sovan Chanda